ফিফা বিশ্বকাপ জেতার সৌভাগ্য হলেও কখনো ইউরো কাপ জয়ের স্বাদ পায়নি ইংল্যান্ড। কিন্তু গ্যারেথ সাউথগেট যেন পণ করেছেন মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের, পণ করেছেন নতুন ইতিহাস গড়ার। তাই তো হাল না ছাড়ার মানসিকতা নিয়ে টানা দুই ইউরো আসরে সেরা চারে জায়গা করে নিয়েছে তাঁর দল, আগের আসরে রানার আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাঁদের। এবার কি আকাঙ্খিত ফলাফল পাবে তাঁরা?
যদিও ভবিষ্যত নিয়ে নয় বরং বেশি আলোচনা হচ্ছে ইংল্যান্ড দলের বর্তমান নিয়ে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই চারদিক থেকে সমালোচনার স্রোত আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছে তাঁদের, তবু সাত সাগর তেরো নদী পেরিয়ে সেমিফাইনালে উঠে এলো তাঁরা। যেখানে পৌঁছুতে পারেনি স্বাগতিক জার্মানি, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইতালি কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল।
ইংলিশদের নিয়ে করা সমালোচনাগুলো অযৌক্তিক নয়। সাউথগেটের স্কোয়াড নির্বাচন, ম্যাচের ট্যাকটিক্স কিংবা টেকনিক্যাল সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে সমালোচনার জায়গা সত্যিই রয়েছে। কেন তিনি অমুককে খেলান না, কেন তমুককে এই ভূমিকায় না খেলিয়ে সেই ভূৃমিকায় খেলাচ্ছেন এমন কত কত যুক্তি আলোচনার টেবিলে ঝড় তুলেছে।
কিন্তু এই ব্রিটিশ কোচ ভালভাবেই জানেন তিনি কি করছেন, কি করতে চাচ্ছেন। সম্ভবত নিজের ওপর দৃঢ় বিশ্বাসটাই তাঁকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে দলের অবস্থান যখন তলানিতে ছিল তখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি, এরপর চারটি মেজর টুর্নামেন্ট খেলে তিনটিতেই সেরা চারে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর।
এর পিছনের মূল কারণ স্কোয়াড ডেপথ। সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ড দলে এসেছে এক গাদা তরুণ প্রতিভা। জুড বেলিংহ্যাম, বুয়াকো সাকা কিংবা ফিল ফোডেনরা ক্লাব ফুটবলে সেরাদের একজন; জাতীয় দলের জার্সিতেও তাঁরা নিজেদের সেই ফর্ম ধরে রেখেছেন। এছাড়া কোল পামারের মত উদীয়মান তারকা বাড়তি শক্তি যোগ করেছে দলে।
খেলার ধরন নিয়ে অসন্তুষ্টি থাকতেই পারে, কিন্তু ফলাফলের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড কিন্তু ছাড় দেয় না। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় ফরমেশন বা স্টাইল বদলাতে তাই তাঁদের সমস্যা হয় না একটুও। সবশেষ ম্যাচেই তো চিরচেনা রূপ বদলে ভিন্নভাবে একাদশ সাজিয়েছিল বর্তমান রানার আপরা। স্কোরলাইন দেখে বোঝা না গেলেও এই ফরমেশন পরিবর্তনের কারণেই সুইসদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছে দলটি।
গ্যারেথ সাউথগেট তো সমালোচনাকে জ্বালানি মনে করেন; তাঁর শিষ্যরাও হারতে হারতে ঘুরে দাঁড়াতে জানে, সুইজারল্যান্ড কিংবা জর্জিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও কামব্যাক করেছিল তাঁরা। জেদ, হার না মানার মানসিকতা আর নিজের ওপর ভরসা করতে পারার সাহস – এসব কিছুই ইংল্যান্ডকে করে তুলেছে ধারাবাহিক। তাই তো মাঠের বাইরের তো শব্দ তুচ্ছ করে তাঁরা ছুটে চলছে শিরোপার দিকে।