থিয়েটার অব ড্রিমের নতুন স্বপ্নবাজ

ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যায় ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার শহরের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিভাবে ইউরোপিয় ফুটবলের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এক শক্তি হয়ে উঠেছিল। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সময়েও ইংল্যান্ডসহ ফুটবল বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি ছিল রেড ডেভিলরা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ওয়েইন রুনিদের নিয়ে গড়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তখন ছিল প্রায় অপরাজেয়।

কিন্তু ফার্গুসনের অবসরের পরেই অবসরে গিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সোনালী সময়। সময়ের সাথে সাথে যেখানে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটি নিজেদের সমৃদ্ধের পথে হেঁটেছে সেখানে উল্টো পথে ধীরে ধীরে নিজেদের হারাতে শুরু করেছে ইউনাইটেড।

ইউরোপের একসময়ের অন্যতম সেরা এই ক্লাব এবারের চলতি মৌসুমে পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে রীতিমতো তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। লিগের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ম্যাচ খেলার পরেও পয়েন্ট তালিকায় সেরা চারে জায়গা নিশ্চিত করতে পারেনি। এছাড়া বাদ পড়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে, ঘরোয়া এফএ কাপে খর্বশক্তির মিডলসবার্গের কাছে হেরে ছিটকে গেছে সে টুর্নামেন্ট থেকে।

গত মৌসুমের কোচ ওলে গুনার সোলশারকে মৌসুমের মাঝপথেই বরখাস্ত করেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাব ম্যানেজমেন্ট৷ এরপর অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে জার্মান ট্যাকটিশিয়ান রাফ র‍্যাগনিককে নিয়োগ দেয়া হলেও ফেরেনি ইউনাইটেডের স্বরূপ।

দলকে নতুন করে গড়ে তুলতে তাই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ক্লাবটি। পরিকল্পনার প্রথম অংশ হিসেবেই এরিক টেন হাগকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ পরবর্তী মৌসুম থেকে ডাচ এই কোচ দলটির ডাগ আউটের দায়িত্ব সামলাবেন।

গত এক দশকে ক্লাব ফুটবলের খোঁজ খবর রাখা যেকোনো ভক্তের জন্যই চেনা নাম এরিক টেন হাগ। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ডাচ ক্লাব আয়াক্সকে অবিশ্বাস্য ভাবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে নেওয়ার নেপথ্যে ছিলেন এই মাস্টারমাইন্ড।

এখন পর্যন্ত সর্বমোট ২১০ ম্যাচে ডাচ ক্লাবটির দায়িত্বে রয়েছেন এরিক টেন হাগ। এসময় জিতেছেন ১৫৬টি ম্যাচ, ড্র করেছেন ২৬টি ম্যাচ এবং বাকি ২৯টি ম্যাচ হেরেছেন। আয়াক্সের হয়ে তিনি নেদারল্যান্ডসের ঘরোয়া লিগ শিরোপা জিতেছেন দুইবার। এছাড়াও তার কোচিং কালে দুইবার ডাচ কাপ এবং একবার ডাচ সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আয়াক্স।

নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারে মূলত সেন্টার ব্যাক হিসেবে খেলেছিলেন এই ডাচ ম্যানেজার। খেলোয়াড়ি জীবনে খুব একটা ভাল দলে খেলার সুযোগ পাননি তিনি। অবসরের পর ২০১২ সালে প্রথম কোচিংয়ে অভিষেক হয় তাঁর। ডাচ ক্লাব ‘গো অ্যাহেড ইগলস’ এর হেড কোচ হিসেবে তার পথ  চলা শুরু। সে মৌসুমেই টেন হাগ ক্লাবটিকে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে নিয়ে যান।

এরপরেই বায়ার্ন মিউনিখের যুবদলের দায়িত্ব দেওয়া হয় টেন হাগকে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সে দলটির দায়িত্বে থাকার পর আরেক ডাচ ক্লাব ‘এফসি আলট্রেচ’ তাঁকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। সেখানে দুই বছর কাটানোর পর প্রথম বারের মত তিনি বড় একটি দলের দায়িত্ব লাভ করেন। ২০১৭ সালে এফসি আয়াক্সের হয়ে হেড কোচ হিসেবে ঘরোয়া ফুটবলের পাশাপাশি ইউরোপেও নিয়মিত হয়ে উঠেন টেন হাগ।

অনেক দিনের গুঞ্জনকে সত্যি করে গত ২১ এপ্রিল ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিজেদের নতুন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব তুলে দেয় এরিক টেন হাগের উপর। এখন পর্যন্ত ৪৩৩টি ম্যাচে ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা টেকো মাথার এই ভদ্রলোকের এখন প্রথম কাজ ক্লাবের স্কোয়াডে ভারসাম্য আনা। বিশেষ করে আগামী মৌসুমগুলোর জন্য দল গুছিয়ে ঐতিহ্যময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারাই টেন হাগের প্রাথমিক কাজ।

স্যার ফার্গুসনের বিদায়ের পরে হোসে মরিনহো, ওলে গুনার সোলশারের মত অনেকেই ইউনাইটেড দলের হেডকোচের হটসিটে বসেছিল৷ কিন্তু কেউই ফার্গুসনের উত্তরসূরী হয়ে উঠতে পারেনি। এমনকি গত কয়েক মৌসুমে কোন ট্রফিই জিততে পারেনি রেড ডেভিলরা। এখন অপেক্ষা নতুন গুরুর জন্য। হাই প্রোফাইল এই কোচ আবারো ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন – এমন আশা করতেই পারে ভক্ত সমর্থকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link