ডি ব্রুইনা এলেন এবং জিতলেন

  • বেলজিয়াম ২ – ১ ডেনমার্ক

ম্যাচে ছিলেন না ডেনমার্কের সবচেয়ে বড় তারকা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। কিন্তু না খেলেও যেন দলের সাথেই ছিলেন তিনি। ডেনিশ দলপতি সিমন কায়েরের কথাই ধরুন না; ম্যাচের আগে জানিয়েছিলেন দল খেলবে এরিকসেনের জন্যেই।

সেই অনুপ্রেরণাতেই কিনা ডেনমার্ক ম্যাচটা খেলেছেও দারুণ, দুর্দান্ত সব আক্রমণে বারবার কাঁপন ধরিয়েছে বেলজিয়াম রক্ষণে। কিন্তু রবার্তো মার্টিনেজের হাতে যে একজন কেভিন ডি ব্রুইনা আছেন। দলের বিপদ দেখে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামলেন। নিজে এক গোল করার পাশাপাশি সতীর্থকে দিয়ে করালেন আরেকটি। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে পাওয়া চোটের কারণে প্রথম ম্যাচটি খেলতে পারেননি, তাই আজকেই ছিল তার এবারের ইউরোর প্রথম ম্যাচ। প্রথম ম্যাচেই যেন ‘এলেন, দেখলেন, জয় করলেন’ কেভিন ডি ব্রুইনা।

অথচ ম্যাচটা ডেনমার্ক শুরু করেছিল দারুণভাবে। ঘরের মাঠ কোপেনহেগেনের পার্কেন স্টেডিয়ামে দর্শকেরা নড়েচড়ে বসার আগেই বেলজিয়ামের জালে গোল! মাঝমাঠ থেকে আগের ম্যাচে পেনাল্টি মিস করা হয়বিয়ার বাড়ানো বলে লাইপজিগ ফরোয়ার্ড পৌলসেনের দারুণ এক গোলে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যায় স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটি, যেটা কিনা আবার ইউরোর ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম গোল।

এরপর প্রথমার্ধে বেলজিয়ামকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করে ডেনিশরা। দ্রুতগতির আক্রমণ, দারুণ বোঝাপড়া আর পাসিংয়ে মনেই হয়নি এ ম্যাচ তাদের হাতছাড়া হতে পারে। বেলজিয়ামের হয়ে রোমেলু লুকাকু মাঝেমাঝে একা চেষ্টা করছিলেন কিন্তু দুর্দমনীয় ডেনিশদের সামনে তার একক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে ডেনমার্ক।

প্রথমার্ধ শেষে বুঝা যাচ্ছিল ম্যাচে ফিরতে বেলজিয়ান কোচ রবার্তো মার্টিনেজকে কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে। এই অভিজ্ঞ কোচ তাই মাঠে নামালেন নিজের তুরুপের সেরা তাস, কেভিন ডি ব্রুইনা। তাতেই খেলার খোলনালচ পালটে গেল, নতুন উদ্যম ফিরে পেল বেলজিয়ানরা। ৫৫ মিনিটে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, মাঝমাঠ থেকে লুকাকু বাঁ প্রান্ত একাই ঢুকছিলেন, যখন বুঝলেন তার পক্ষে শট নেয়া সম্ভব না, কাটব্যাক করলেন ডি ব্রুইনাকে। ব্রুইনা নিজে শট না দিয়ে পায়ের জাদুতে বল বাড়ালেন হ্যাজার্ড পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য, থোরগান হ্যাজার্ডকে। যে জায়গায় বল পেলেন সেখান থেকে বল মিস করাই দুঃসাধ্য, মিস করলেনও নাহ। তার গোলেই ৫৫ মিনিটে সমতায় ফেরে বেলজিয়াম।

কিন্তু কেবল গোল করিয়েই সন্তুষ্ট হলেন নাহ ব্রুইনা, ৭০ মিনিটে এডেন হ্যাজার্ডের কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ এক শটে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে মার্টিন ব্র‍্যাথওয়েট কিংবা অলসেনরা প্রাণপণ চেষ্টা করলেও বেলজিয়ান দেয়াল ভাঙতে পারেনি। এই হারে এবারে ইউরো থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল ডেনমার্কের। তবে দিনশেষে ম্যাচ হারলেও দর্শকদের হৃদয় জিতে নিয়েছে ডেনিশরা।

  • ইউক্রেন ২ – ১ উত্তর মেসিডোনিয়া

দলে কোনো বিশ্বকাঁপানো ফুটবলার নেই, নেই রোনালদো কিংবা ডি ব্রুইনার মতো একাই পার্থক্য গড়ে দেয়া ফুটবলার।আন্দ্রে শেভচেংকোর ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের দলগত ফুটবল, আক্রমণই যাদের মূলমন্ত্র। প্রথম ম্যাচে দারুণ খেলেও শেষ মুহূর্তের গোলে হেরে যেতে হয়েছে। কিন্তু আজকে উত্তর মেসিডোনিয়াকে সেই সুযোগ দেয়নি ইউক্রেন। ২-১ গোলে মেসিডোনিয়াকে হারিয়ে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে শেভচেংকো বাহিনী।

দুর্দান্ত আক্রমণভাগ, দারুণ গোল, পেনাল্টি মিস, অফসাইডে গোল সবমিলিয়ে দর্শকদের জন্য ম্যাচটি ছিল তুমুল উত্তেজনার। জয়ের জন্য মরিয়া ইউক্রেন ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্নক ফুটবলের পসরা সাজায়। ম্যাচের ২৯ মিনিটেই কর্নার থেকে আন্দ্রে ইয়ারমোলেঙ্কোর গোলে এগিয়ে যায় হলুদবাহিনী।

গোল করেই ক্ষান্ত হয়নি, উপর্যুপরি আক্রমণ চালিয়ে যায় প্রতিপক্ষের রক্ষণে। ফলাফল পেয়ে যায় পাঁচ মিনিট বাদেই, ইয়ারমোলেঙ্কোর পাস ধরে ডি বক্সে ঢুকে দারুণ শটে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন রোমান ইয়ারেমচুক। প্রথমার্ধ শেষ হয় ২-০ অবস্থায়।

প্রথমার্ধ যদি হয় ইউক্রেনের তবে দ্বিতীয়ার্ধ পুরোটাই উত্তর মেসিডোনিয়ার। এ অর্ধের শুরু থেকে অন্য এক ভয়ডরহীন মেসিডোনিয়াকে দেখতে পায় সবাই। ৫৬ মিনিটে কর্নার থেকে ট্রেইকোভস্কির হেড বুশচান সেভ করলেও গড়বড় করে ফেলেন কারাভায়েভ। বুশচানের সেভ করার পর বলকে ক্লিয়ার করতে গিয়ে ডি বক্সেই পা দিয়ে মাড়িয়ে দেন গোরান পানডেভকে। ফলাফল পেনাল্টি, পেনাল্টি থেকে আলওস্কির শট প্রথমে ফিরিয়ে দেন বুশচান, কিন্তু কথায় আছে ভাগ্য সবসময় সাহসীদের পক্ষেই থাকে। আজও হলো তাই, বুশচানের হাতে লেগে বল পড়লো আলিওস্কির সামনেই। এবার আর ভুল করেননি আলিওস্কি, সোজা বলকে পাঠিয়ে দিলেন জালের ঠিকানায়। ৮২ মিনিটে ইউক্রেন পেনাল্টি পেলেও মালিনোভস্কি মিস করলে ম্যাচে টিকে থাকে মেসিডোনিয়া। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও আর ভাঙতে পারেনি ইউক্রনের রক্ষণ, ফলে ম্যাচ হেরেই বিদায় নিতে হয় তাদের। ম্যাচ হারলেও প্রথমবারের মতো ইউরো খেলতে আসা উত্তর মেসিডিনিয়ার আক্রমণাত্নক ফুটবল প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার। অন্যদিকে এ জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবার আশা টিকিয়ে রাখলো ইউক্রেন।

  • নেদারল্যান্ডস ২ – ০ অস্ট্রিয়া

সাত বছর পর আন্তর্জাতিক আসরে ফিরেই চোখজুড়ানো ফুটবল খেলছে নেদারল্যান্ডস। গতকাল রাতে আয়াক্সের ক্রুইফ অ্যারেনায় ইয়োহান ক্রুইফের সময়কার টোটাল ফুটবলকেই যেন নতুন রূপে ফিরিয়ে আনলেন মেম্ফিস ডিপাই-ডামফ্রাইস-জিনি উইজনালডামরা। সবুজ গালিচায় কমলা সৌরভের বিপ্লব ঘটিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করলো ডাচরা। অস্ট্রিয়াকে তারা হারিয়েছে ২-০ গোলে।

ম্যাচের শুরু থেকে ছোট ছোট দ্রুতগতির পাসে আক্রমণ শানাতে থাকে ডাচরা। ম্যাচের নবম মিনিটেই ডি বক্সের মাঝে ডামফ্রাইসলে অস্ট্রিয়ান অধিনায়ক ডেভিড আলাবা ফেলে দিলে পেনাল্টি পায় ডাচরা। পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে নিতে ভুল করেননি সদ্যই বার্সায় যোগ দেয়া ডিপাস। সঠিক দিকে লাফালেও বলের নাগাল পাননি অস্ট্রিয়ান গোলরক্ষক বাচম্যান। ডাচরা প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ তে এগিয়ে থেকেই।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোল শোধে মরিয়া হয়ে উঠে অস্ট্রিয়ার ফুটবলাররা। এ সময় ম্যাচে প্রথমবারের কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় নেদারল্যান্ডস। কিন্তু ৬৩ মিনিটে ফ্রাঙ্ক ডি বোরের তড়িৎ সিদ্ধান্তে পুনরায় ম্যাচের লাগাম ফিরে পায় ডাচরা। ম্যাচের গতি কিছুটা কমিয়ে দিতে একসাথে তিনটি পরিবর্তন আনেন তিনি। ৬৬ মিনিটে ডামফ্রাইসের গোলে জয় নিশ্চিত হয় ডাচদের। ম্যাচের বাকি সময়টা দুদলই নিজ্র রক্ষণ সামলে খেলায় আর গোলের দেখা পায়নি। এ জয়ের ফলে দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকিট নিশ্চিত করলো ডাচরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link