রেকর্ড দিয়েই শুরু ইউরো!

ইউরো শুরুর প্রাক্কালে অনেককিছু নিয়েই প্রেডিকশন গেম খেলা হচ্ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে এক্সাইটিং ছিল এই ইউরোর প্রথম গোলদাতা কে হবে? কেউ কেউ ইতালির তারকার কথা বলেছেন, কেউ আবার তুরস্কের। কিন্তু কেউ হয়তো ঘুণাঘরেও আত্মঘাতী গোলের কথা চিন্তা করেননি। অঘটনঘটনপটীয়সী ইউরোর শুরুটা হয়েছে রোমাঞ্চ দিয়েই।

কথায় আছে জীবন নাটকের চেয়েও বেশি নাটকীয়। ইউরোরেও ঠিক একই ঘটনাটা। কোভিড-১৯ এর কারণে ইউরো পিছিয়েছে এক বছর। এক বছর অপেক্ষা করে পুরো ইউরোপজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে ইউরো। দর্শকরা ফিরেছেন মাঠে। আর সেই মাঠে বল গড়িয়েছে স্তাদিও অলিম্পিকোসে আন্দ্রেয়া বোকেল্লির সুরের মূর্ছনায়। আর সেই সাথে ডেমিরালের রেকর্ড দিয়ে। ৬৩ বছরের ইতিহাসে যা কখনও ঘটেনি।

প্রথমবারের মতন ইউরোর প্রথম গোল হয়েছে একটি আত্মঘাতী গোল। আর সেই রেকর্ড লিখেছেন মেরিহ ডেমিরাল। ৫৩ মিনিটের মাথায় নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে ইউরোর প্রথম গোল নিজের নামে করে নেন তিনি। সেই সাথে লজ্জার এক রেকর্ড।

তাই বলে ভাববেন না তুরস্ক খুব একটা খারাপ খেলেছে। এই ইতালিয়ান দলের সামনে দাঁড়ানো একপ্রকার সম্ভবই বটে। ইউরোতে আসার আগেই টানা ২৭ ম্যাচ অপরাজিত, শেষ পয়েন্ট হারিয়েছে ৯ ম্যাচ আগে। সেই ইতালিকে ভয় না পাওয়ার কোনো কারণ আছে?

ডিফেন্সিভ স্তম্ভ হিসেবে ইতালির সুখ্যাতিটা রাতারাতি বদলে পুরোপুরি অ্যাটাকিং মাইন্ড সেটাপে সাজানো ইতালি প্রথমেই থমকে গিয়েছিল তুরস্কের কাছে। প্রথমার্ধ পুরো ম্যাচটা কব্জা করে রাখলেও কোনোভাবেই গোল বের করতে পারছিল না ইতালি।

প্রথমার্ধে ইতালি শুধু আক্রমণই করে গিয়েছে। আর তার সামনে তুরস্কের দাঁড় করানো ডিফেন্সকে বাসপার্ক বললে ভুল হবে। এটাকে ট্যাঙ্ক কিংবা প্লেনপার্ক বলা যায়। আক্রমণ বলতে কিছুই নেই, দলের এক স্ট্রাইকার বাদে সকলেই সম্মিলিত হয়ে ডিফেন্সে দাঁতে দাঁত চেপে থামিয়ে গিয়েছেন ইনসিনিয়ে, বারেল্লা, ইম্মোবিলে, বেরার্দিদের একেকটা আক্রমণ আক্রমণ।

এর মধ্যে কয়েকবার পেনাল্টির আবেদন করেও সাড়া পাননি ইতালিয়ানরা। তাই দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের গতি আরো বাড়িয়ে দিলেন ইতালিয়ানরা। তবুও তুর্কি ডিফেন্স সহজে ভেঙ্গে পরেনি। ঝামেলাটা হলো ৫৩ মিনিটে এসে। ডিবক্সের ডানদিকে থেকে বেরার্দির ক্রস থামাতে গিয়ে উল্টো জালে জড়িয়ে দিলেন ডেমিরাল। ইউরোতে প্রথম গোলের দেখা পেল দর্শক। ব্যস, এরপর থেকে তাসের ঘরের মতন ভেঙ্গে পড়ল তুরস্কের পুরো ডিফেন্স।

এরপর ১৩ মিনিট পর পর সেটের অঙ্কের মতন গোলের দেখা পেয়েছে ইতালি। ৬৬ মিনিটে বামপ্রান্ত থেকে স্পিনাৎসোলার শট থামিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু আয়ত্ত্বে রাখতে পারেননি তুরস্কের গোলকিপার উরজান চাকির। আনমার্কড চিরো ইম্মোবিলে সেই সুযোগে ব্যবধান বাড়িয়েছেন।

এর ঠিক ১৩ মিনিট পর চাকিরের লং কিক গিয়ে পড়ল বেরার্দির কাছে। সেখান থেকে বারেল্লা হয়ে ইনসিনিয়ের কাছে বল যেতে যেতে হাল ছেড়ে দিয়েছেন তুরস্কের ডিফেন্ডাররা। তখন তারা শুধুই সাক্ষী গোপাল। বামপ্রান্ত থেকে নেওয়া শট জালে জড়াতে ভুল করেননি ইনসিনিয়ে। ম্যাচটাও শেষ হয়েছে ৩-০ গোলে।

ইউরোর আগে থেকেই বোঝা গিয়েছিল তুরস্কের শক্তির জায়গাটা আসলে ডিফেন্স। সেটাকে লক্ষ্য করেই তারা খেলা সাজিয়েছিল। ইচ্ছে ছিল ম্যাচ ড্র করার। যে কারণে পুরো ম্যাচ শেষ হয়ে গিয়েছে, একটি শটও ইতালির গোলরক্ষক ডোনারোম্মার জন্য থ্রেট হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। মোটে শট নিয়েছেন ৩টি। অন্যদিকে ইতালি নিয়েছে তার ৮ গুণ, মোট ২৪টি। ৮টি ছিল তুরস্কের গোলপোস্টে। যা দিয়ে তৈরি করেছেন নিজেদের ইতিহাস। প্রথমবারের মতন ইউরো ইতিহাসে এক ম্যাচে তিন গোল করার রেকর্ড গড়েছে ইতালি।

তবে এত কিছুর মাঝেও সবাইকে ছাড়িয়ে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের অ্যাওয়ার্ডটা কিন্তু ঘরে তুলেছেন লেফটব্যাক লিওনার্দো স্পিনাৎসোলা। ইনসিনিয়ে, ইম্মোবিলেদের দিনেও স্পটলাইট কেড়ে নিয়েছেন তিনি। রোমার লেফটব্যাকের প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়াটাই নিশ্চিত ছিল না।

বলা হচ্ছিল ইতালির দূর্বলতা থাকলে এই লেফট ব্যাক পজিশনেই। প্রথম দিনই সকলকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন এএস রোমার লেফট ব্যাক। ইতালির বামপাশটা যে কতটা শক্ত সেটার প্রমাণ দেখিয়েছেন গতকাল। নামের পাশে কোনো গোল-এসিস্ট না থাকলেও ম্যাচটা নিজের করে নিয়েছেন তিনি।

ইউরোর শুরুটা দিনটা স্পিনাৎসোলা রাঙিয়ে নিয়েছেন নিজের মতন করে। তাও সেটা গ্যালারিতে নিজের ছেলের সামনে। দর্শকদের সামনে আবার খেলতে পারাটা অনেক বড় ব্যাপার।

তিনি বলেন, ‘বাসে করে আসতে আসতেই আমার গুজবাম্প হচ্ছিল। এর মধ্যেই একটা সময়ে আমি আমার ছেলের মুখ দেখলাম গ্যালারিতে। ম্যাচের সবচেয়ে ইমোশনাল মোমেন্ট ছিল সেটা।’ নিজের সন্তানের সামনে দিনটা নিজের করে রাখার মতো গত্তবের ব্যাপার আর কী-ই বা হতে পারে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link