কথাটা ক্লিশে হয়ে গেছে।
তারপরও বাংলাদেশ দলের আচরণে খুব মনে পড়ছে। বাঙ্গালীর নাকি তিনতে হাত-ডান হাত, বাম হাত এবং অজুহাত। বাংলাদেশ দলের ব্যাপার অবশ্য একটু আলাদা। তারা ডান হাত ও বাম হাতকেই অজুহাতে পরিণত করেছে।
আজও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বললেন, উইকেটে দুই বাহাতি ছিলেন বলে তিনি আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে বোলিং আক্রমণে আনেনি।
এই পর্যন্ত শুনে অবাক হবেন না। এটা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশি ক্রিকেট অধিনায়কদের একটা ‘কমন’ অজুহাত। তারা বাহাতি ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকলে লেগস্পিনার বা বাহাতি স্পিনারকে আক্রমণে আনতে চান না। এমনও হয়েছে যে, দু জন বাহাতি বল করছেন বলে সেরা ফর্মের সাকিব আল হাসানকে আক্রমণে আনা হয়নি।
হাস্যকর মনে হচ্ছে, তাই না?
কিন্তু বাংলাদেশের অধিনায়কদের কাছে এটা মোটেও হাস্যকর নয়। তাদের কাছে এটাই নিয়ম। আর এই নিয়মের ব্যতয় ঘটানো যাবে না।
এটা সত্যি যে, বাহাতি ব্যাটসম্যানরা লেগস্পিনার বা বাহাতি অফস্পিনারের ক্ষেত্রে একটু সুবিধা পেয়ে থাকেন। কারণ, এই বোলারদের রেগুলার ডেলিভারি বাহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য সহজ হয়; ফলে তারা সহজে খেলতে পারেন। একে তো ডেলিভারির টার্ন ব্যাটসম্যানের অনুকূলে থাকে, তারপর আবার বোলাররা এ ক্ষেত্রে সঠিক লাইনে বল করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না।
তাই বলে এটা কী নিয়ম হয়ে যেতে পারে?
তা পারলে শেন ওয়ার্ন, অনিল কুম্বলে থেকে আব্দুল কাদিররা পৃথিবীতে খেলে গেলেন কী করে। বিষেণ সিং বেদি বা ড্যানিয়েল ভেট্টোরিও নিশ্চয়ই কেবল ডানহাতিদের বল করে বড় স্পিনার হননি। একটা ছোট পরিসংখ্যান দেওয়া যাক। শেন ওয়ার্নের ২৪০টি আর্ন্তজাতিক উইকেট আছে, যেখানে ব্যাটসম্যান বাহাতি ছিলেন। ২৪০ উইকেট নিতে নিশ্চয়ই তিনি হাজারের ওপরে বল করেছেন বাহাতিদের বিপক্ষে।
এখন স্টিভ ওয়াহ বা রিকি পন্টিং যদি বাহাতি ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকলে ওয়ার্নকে আক্রমণে না আনতেন, তাহলে তা তিনি এই উইকেটই পেতেন না! তারা নিশ্চয়ই রিয়াদদের এই আইন অনুসরণ করেননি।
ক্রিকেট আসলে এভাবে হয় না।
আপনি আপনার সেরা খেলোয়াড়রকে খেলাবেন। সে জন্য সে ডানহাতি, বামহাতি; এটা খুব বড় বিবেচ্য হতে পারে না। এটা ট্যাকটিকসের ছোট একটা অংশ হতে পারে। যেমন আমরা দু জন বাহাতি ওপেনার পছন্দ করি না বলে টেস্ট ব্যাটসম্যান সাইফ হাসানকে টি-টোয়েন্টি ওপেন করতে হচ্ছে!
এটাও একটা তামাশা বিশেষ। হ্যা, আপনার হাতে যদি ঠিক একই মানের তিনটি বিকল্প থাকে, তাহলে আপনি ডানহাতি-বাহাতি কম্বিনেশন করে দেখতে পারেন। কিন্তু বাইরে শ্রেয়তর খেলোয়াড় রেখে লেফটি, রাইটি হিসাব করার কোনো সুযোগই নেই।
তা হলে তামিম-ইমরুল বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ওপেনিং জুটি হতে পারতেন না। ইতিহাসে আপনি এমন অনেক দুই বাহাতি বা দুই ডানহাতির জুটি পাবেন। অন্তত রাহুল-শচীনকে ডানহাতি বলে ব্যাটিং অর্ডারে কাছাকাছি রাখা নিয়ে ভাগ্যিস ভারত কখনো সংশয় প্রকাশ করেনি!
এ পর্যন্ত ক্রিকেটীয় আলোচনা হলো। আজ রিয়াদ বিপ্লবের সাথে যা করেছেন, তার পুরোটা ক্রিকেটীয় নয়। বিপ্লবকে পুরো ১৯ ওভার ধরে বল না করিয়ে ২০তম ওভারে এসে বল হাতে তুলে দিলেন; যখন পাকিস্তানের জয়ের জন্য আর ২ রান দরকার।
আমরা বুঝলাম যে, বিপ্লবকে ১৯ ওভারের মধ্যে বল না দেওয়ার ক্রিকেটীয় কারণ আছে। সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে। দু পক্ষেই তা নিয়ে যুক্তি থাকবে। কিন্তু একজন তরুন বোলারকে ২ রান ডিফেন্ড করতে শেষ ওভার বল করতে দেওয়ার কারণ কী?
স্রেফ তার হাত দিয়ে হারটা নিশ্চিত করা ছাড়া আর কোনো কারণ ছিলো?
রিয়াদ ৩ ওভার বল করেছেন। তাহলে তিনি আর একটা দুটো বল নিশ্চয়ই করতে পারতেন। তাতে কী হতো? রিয়াদের হাত ধরেই পরাজয়টা আসতো। রিয়াদ কী সেখান থেকে লুকাতে চাইলেন নিজেকে?
অতোটুকু একটা ছেলেকে এই ধাক্কার মধ্যে ঠেলে দিয়ে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াটা কী খানিকটা পলায়নপর কাজ হলো না?