ডিকেন্সদের কেউ মনে রাখে না

মুহূর্তের মধ্যেই একটা ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেলেন। সেই ভিড় থেকে তাকে আলাদা করবার উপায় নেই। এতটা নিভৃতে তিনি থেকে যান। ফয়সাল হোসেন ডিকেন্সের নামটা বাংলাদেশ ক্রিকেটে খুব একটা জোরেশোরে উচ্চারিত হয়নি কখনোই। হওয়ার মত তিনি অবশ্য কিছুই করতে পারেননি।

ক্যারিয়ারটা ছিল বড্ড সাদামাটা। সাদা ক্যারিয়ারে তিনি এক বিন্দু পরিমাণ কালিমা লাগাতে দেননি। দীর্ঘদিন ধরে খেলে গেছেন ক্রিকেট। বিদায় বলার আগে তিনি দেখিয়েছেন ক্রিকেটের প্রতি তার অমোঘ প্রেম। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে ক্রিকেটের প্রতি তার নিবেদনের সর্বোচ্চ উদাহরণই রেখে গিয়েছিলেন।

বয়সটা তখন তার ৪০ এর ঘরে। তখন তার বোলিং অ্যাকশন হয়েছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে ওয়াহিদুল গণির কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন বারেবারে। জিমে ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর আবার দিয়েছেন বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা।

পরীক্ষা দিয়ে এসেই তিনি জানিয়েছিলেন বিদায়। ক্রিকেটকে এভাবেও বিদায় জানানো যায়! তিনি তার ক্যারিয়ারের কোন ধরণের বিতর্কের সাথে যুক্ত ছিলেন না। তার ধ্যান আর জ্ঞান ছিল কেবলই ক্রিকেট। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আশার প্রতিফলন তিনি ঘটাতে পারেননি। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি।

ময়দানকে এতটাই আপন করে নিয়েছিলেন যেন নির্বাণ প্রাপ্ত কোন এক ঋষি। তাই তো শেষবেলায় কোন প্রকার কালিমা রাখতে চাননি নিজের নামের পাশে। তাকে কেউ অন্তত মনে রাখেনি। কিন্তু তিনি চাননি কেউ তাকে খানিক তিরস্কারের সুরে মনে রাখুক। তাই শেষ বেলায়ও নিজের উপর ওঠা প্রশ্নের সঠিক উত্তরটা দিয়ে গেলেন।

এরপর তিনি আড়ালেই চলে গেলেন। তাকে নিয়ে আর সোরগোল হল না। কিন্তু একটু আলোচনা পাওয়ার যোগ্য তিনি। একটু নজর তার প্রাপ্য। তিনি যে নিরবেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। এমন কি এখন অবধি বাংলাদেশের পাওয়া সেরা সাফল্যের পেছনেও কারিগর ছিলেন তিনি।

২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই দলের সাথে ছিলেন তিনি। দলটার ফিল্ডিংয়ের গুরু ছিলেন ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স। তার অবদান নিশ্চয়ই রয়েছে। কিন্তু তাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে কি-না সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

ক্রিকেট যাদের কাছে আদরের শিশুর মত, তারা এসব নিয়ে মাথা ঘামান না। বরং তারা সকল রোশনাইয়ের আড়ালে থেকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যান। এখনও তাই করছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পে ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। তরুণ সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের কাছে টেনে নিয়ে দিচ্ছেন দীক্ষা। ২৫ বছর ধরে দেশের প্রতিটা মাঠে চষে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা নিঙড়ে দিচ্ছেন। গড়ে তুলছেন আগামীর তারকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link