পাহাড় চূড়া থেকে নয় কদম দূরে পা ফসকে যাওয়ার দুঃখ হয়ত মুশফিকুর রহিম উপলব্ধি করতে পারছেন। নিজের ক্যারিয়ারের চতুর্থ দ্বি-শতক থেকে নয় রানের দূরত্বে থেমেছেন মিস্টার ডিপেন্ডবল। সীমাহীন আক্ষেপের সাগরে ভাসছেন নিশ্চয়ই। দারুণ ইনিংসের সমাপ্তিতে একটা আফসোস নিয়ে, মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছেন তিনি।
কিন্তু আদতে মাথা নিচু করে সবুজ গালিচা হতে বেড়িয়ে যাওয়ার মত কিছুই করেননি মুশফিক। বরং তিনি যা করেছেন, তা রীতিমত গর্ব করবার মত। বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সবাই তাই অভিবাদন জানিয়েছেন।
প্রায় ৫ ঘন্টা ১৫ মিনিট ধরে তিনি সংগ্রাম করে গেছেন বাইশ গজে। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ১৯১ রানে থেমেছেন ডান-হাতি এই ব্যাটার। দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং করেছেন তিনি। পাকিস্তানি পেসারদের ভয়কে জয় করেছেন তিনি। ৩৪১ বল খেলেছেন তিনি। নিজের ক্যারিয়ারের একাদশ সেঞ্চুরি পেয়েও আক্ষেপে পুড়ছেন মুশফিকুর রহিম।
এমন দৃঢ়চেতা মুশফিক বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি হয়ে ধরা দিয়েছেন বহুবার। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে তার খেলা ম্যারাথন ইনিংস একটা বার্তা দিয়েছে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটাররাও চাইলেই বড় ইনিংস খেলতে পারেন। পরাজয় এড়ানোর সকল চিন্তার দূর আকাশে ছুঁড়ে দিয়েছে মুশফিকের ব্যাট।
সবাই ধারণা করেছিল পাকিস্তানের পেস আক্রমণের বিপক্ষে মুখ থুবড়ে পড়বে বাংলাদেশ। কিন্তু তেমন কদাকার চিত্র অংকন করতে দেননি মুশি। চীনের প্রাচীর হয়ে তিনি দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন পাক পেসারদের সামনে। তাদেরকে হতাশায় ভাসিয়েছেন মুশফিকুর রহিম।
পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটার হিসেবে দেড়শো রান করেছেন তিনি। সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি। বরং ইনিংসটিকে করেছেন দীর্ঘায়িত। পাকিস্তানের সকল পরিকল্পনার ছকে পানি ঢেলে দিয়েছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। তাইতো মোহাম্মদ রিজওয়ানও ইনিংস শেষে পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন।
এমন অভিবাদন অবশ্যই মুশফিকের প্রাপ্য। ২২ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটিতে তিনি ধৈর্যের চূড়ান্ত পরীক্ষাই দিয়েছেন। ১৯১ রানের বিশাল এই ইনিংস খেলার পথে তিনি, বাউন্ডারি নির্ভর হয়ে যাননি। তাকে ছুঁয়ে যায়নি ক্লান্তি। ৩৭ বছর বয়সেও তিনি ছুটে বেড়িয়েছেন বাইশ গজের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। বাংলাদেশের ব্যাটাররা একেবারেই ফেলনা নয়, সেটিই যেন আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন মুশফিক।
টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে সাতটি ভিন্ন দেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভীষণ বিরল এক রেকর্ড তো অবশ্যই। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নেও মুশফিক প্রমাণ করে যাচ্ছেন, একাগ্রতা আর পরিশ্রমের বিকল্প হয় না। টেস্ট খেলার পূর্ণ দীক্ষাই দিয়ে গেছেন। তিনি চাইলেই তাই মাথা আকাশ সম উঁচু রাখতে পারেন।