ফুরানোর আগেই না হোক ফুরাবার স্লোগান

ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে সজোরে পুল শট খেললেন। তবে বিনুরা ফানার্ন্দোর বলটা ছুঁয়ে গেল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট। উইকেট রক্ষকের মাথার উপর দিয়ে সেই বলটা সীমানার বাইরে পরল। এরপরের বলটা স্কোয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে নিজের অর্ধশতক পূরণ করে ফেলেন মাহমুদউল্লাহ। দলের জয়ের জন্যেই যেন ছুটেছিলেন তিনি তার ইনিংসের শুরু থেকে শেষ অবধি।

২০৭ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা। গোটা দলের উপরই যেন এক অদৃশ্য চাপ। সেই চাপকে ঘনিভূত করলেন খোদ টাইগার ব্যাটাররাই। চাপ প্রশমিত করতেই বিশাল সব শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন প্রত্যেকে। ৩০ রানের মাথায় নেই তিন উইকেট। জয় তখন দূর আকাশের কোন এক নক্ষত্র।

তবুও যেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একটা ‘স্টেটমেন্ট’ দিতে চাইলেন। এক্সট্রা কাভারের উপর দিয়ে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করেন নিজের ইনিংস। এরপর আগ্রাসনের সাথে ঠিক কিভাবে বাইশ গজে বাস করতে হয়, তাই যেন শিখিয়ে গেলেন তিনি।

বাংলাদেশের জয়ের নিভু নিভু আশাকে একটু একটু করে জ্বালনি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছিলেন রিয়াদ নিজেই। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ফিরেছেন তিনি। এবারের প্রত্যাবর্তনে অন্তত তিনি জানিয়ে দিলেন, যোগ্যতম হয়েই ফিরেছেন তিনি।

দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, তরুণ জাকের আলি অনিককে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। জয়ের দিকেই চোখ রেখে ব্যাট করে যাচ্ছিলেন তিনি। পথিমধ্যে অর্ধশতকের দেখাও পেয়ে যান রিয়াদ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এটি তার সপ্তম।

কিন্তু বাকি ইনিংসগুলোর চাইতেও যে এই ইনিংসটি ঢের আলাদা। বাকি ইনিংসগুলোতে হয়ত দলের জয় ছিল মুখ্য। তবে এই ইনিংসটিতে দলের জয়ের পাশাপাশি রিয়াদের একটা জবাব দেওয়ার বিষয়ও ছিল স্পষ্ট। তাকে রীতিমত ছুরে ফেলা হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে। দায় দেওয়া হয়েছিল স্ট্রাইকরেট আর বয়সকে।

তবে ফরচুন বরিশালের হয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ জয় করা রিয়াদ সেসব দায়ের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেলেন। সমালোচক কিংবা নিন্দুকদের জবাবটা দিলেন- অবশ্যই তা ব্যাট হাতে। বয়সটা সত্যিকার অর্থেই একটা সংখ্যা, সেটাই প্রমাণ করলেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নিজের জায়গাটা নিশ্চিত করছেন তিনি।

যদিও তার আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় খুঁজে নেওয়া প্রয়োজন। সেই জয়ের সন্ধানই করছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৭৪.১৯ স্ট্রাইকরেটের ইনিংসের প্রতিটা মুহূর্ত জুড়েই তেমনটি মনে হয়েছে। দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রদর্শনের এই ইনিংসটিতে মাহমুদউল্লাহ হাঁকিয়েছেন চারটি সুবিশাল ছক্কা। একটি ছয়কে তো পাঠিয়েছেন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরে।

শেষ অবধি আরও একটি ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই আউট হয়ে ফিরেছেন তিনি। ৩১ বলে ৫৪ রানের এই ইনিংসটি মাহমুদউল্লাহকে দলে নেওয়ার স্বপক্ষেই শুনিয়ে গেল গান। ফুরাবার আগে তাই না উঠুক ফুরানোর স্লোগান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link