তাঁকে আপনি ‘স্যার’ বলতে পারেন। ট্রল করতে পারেন। কিন্তু, সীমিত সামর্থ্য দিয়ে ক্যারিয়ার সামলে যাওয়া, পারফরম করা, ম্যাচ জেতানো – সহজ কথা নয়। টানা বিশ বছর এই কাজটা করে গেছেন ফরহাদ রেজা। জাতীয় দল না হোক, ঘরোয়া ক্রিকেরে কিংবদন্তি তাঁকে বলাই যায়।
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান তাঁকে ‘পরাজিত’ই বলবে। কিন্তু, যখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায় বললেন তখন তাঁকে ফাইটার বলতেই হয়। প্রায় ছয় হাজার রান আর ৩০০-এর ওপর উইকেট – প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি সাকিব আল হাসানের পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে গিয়ে তবেই থেমেছেন।
২০০৫ সালে প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে অভিষেক, পরের বছরই জিম্বাবুয়ে সিরিজে পা রাখলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নেমেই হাঁকালেন ৫৭ বলে ৫০ রানের ইনিংস, যাতে ছিল চারটি বাউন্ডারি আর একটা ছক্কার মার। ঐ ম্যাচের দলীয় সর্বোচ্চ তো বটেই, ষষ্ঠ উইকেটে খালেদ মাসুদ পাইলটের সাথে গড়েছিলেন ৭১ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটিও।
সেই সিরিজে আরও দুই তরুণের অভিষেক হয় – মুশফিকের রহিম আর সাকিব আল হাসান। প্রত্যাশার বারুদে সবচেয়ে বেশি আগুন পেস বোলিং অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজাই দিয়েছিলেন। এ পজিশনে একজন খেলোয়াড় তো আজও পরম আরাধ্য দেশের ক্রিকেটে।
তবে, সকালের সূর্যটা সবসময় হয়ত পুরো দিনের অবস্থা সর্বদা জানাতে পারেনা। তারই উৎকর্ষ উদাহরণ ফরহাদ রেজা, অভিষেকে হাফ সেঞ্চুরি করা রেজা মাত্র ৩৪টি ও্য়ানডে আর আটটি টি-ট য়েন্টি খেলাছেন বাংলাদেশের হয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটিই তার একমাত্র অর্ধশতক। অপরদিকে মুশফিক, সাকিবরা নিয়ে গেছেন নিজেদের এক অনন্য উচ্চতায়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যর্থ হলেও দেশীয় ক্রিকেটে ফরহাদ রেজার অবদান অপরিহার্য। সবধরনের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করে গেছেন তিনি। ১৪৩ টি প্রথম শ্রেনির ক্রিকেট ম্যাচে ৩০ এর উপরে গড়ে প্রায় ছয় হাজার রান আছে তার। সাতটা সেঞ্চুরির সাথে নামের পাশে ৩৩টা অর্ধশতক। ব্যাটের সাথে বল হাতেও আলো ছড়িয়েছেন তিনি, শুধু প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটেই নামের পাশে ৩১৫ উইকেট, চার উইকেট শিকার করেছেন ১৫ বার আর পাঁচ উইকেট নিয়েছেন নয়বার।
এত সাকসেসফুল একজন ঘরোয়া খেলোয়াড়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যর্থ হওয়াটা ট্রাজেডিই বলা যায়। তবে ফিনিক্স পাখির মত ধ্বংসস্তুপ থেকে একবার ফিরে আসার ব্যর্থ প্রচেষ্টা তিনি একবার করেছিলেন অবশ্য।
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের স্কোয়াডে প্রায়ই সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। শেষ অবধি, বিশ্বকাপ ফ্লাইটটা ধরতে পারলে তা কোন রূপকথা থেকে কম হতো না। কেননা ২০১৪ এরপর থেকে জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন তিনি, সবশেষ লাল-সবুজের জার্সি গায়ে ওয়ানডে খেলতে নেমেছিলেন ২০১১ তে।
তিনি একবার বলেছিলেন, ‘সুযোগ পেলে আমি সাকিবের আশেপাশেই থাকতাম।’ বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের সাথে একজন ব্যর্থ ক্রিকেটার তুলনা আমজনতা আমলে নেয় নি। প্রকৃতির নিয়ম এমনিই, বিজয়ী না হলে পরিশ্রমের মূল্য মেলে না।
রবার্ট ব্রুস আজ জগৎবিখ্যাত কারণ তিনি জয়ী হয়েছিলেন, সপ্তমবারেও পরাজিত হলে তাকে কেও মনে রাখত না হয়ত। পৃথিবী পরাজিতদের মনে রাখে না, রাখতে চায় না, বরং উপহাসকে বেশি প্রাধান্য দিতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই হইতো ফরহাদ রেজাদেরও সবাই ভুলে যেতে চায়।