পাকিস্তান ছেড়ে আমেরিকায় ফাওয়াদ আলম

অভিষেকেই সেঞ্চুরি; পরের দুই ম্যাচে সাদামাটা। অন্য কেউ হলে হয়তো আরো সুযোগ পেতো কিন্তু ফাওয়াদ আলমের ব্যাটিং স্টাইল কিছুটা আনঅর্থোডক্স বলেই হয়তো বাদ পড়েছেন তিনি। শুধু দল থেকেই নয়, নির্বাচকদের ভাবনা থেকেই। এরপর এক, দুই বছর করে করে কেটে গিয়েছে এগারো বছর।

অভিষেকেই সেঞ্চুরি; পরের দুই ম্যাচে সাদামাটা। অন্য কেউ হলে হয়তো আরো সুযোগ পেতো কিন্তু ফাওয়াদ আলমের ব্যাটিং স্টাইল কিছুটা আনঅর্থোডক্স বলেই হয়তো বাদ পড়েছেন তিনি। শুধু দল থেকেই নয়, নির্বাচকদের ভাবনা থেকেই। এরপর এক, দুই বছর করে করে কেটে গিয়েছে এগারো বছর।

শেষমেশ ২০২০ সালে আবারো জাতীয় দলের জার্সিতে ফেরেন ফাওয়াদ আলম; পরের দুই বছর চার সেঞ্চুরি আর দুইটি হাফসেঞ্চুরিতে ৭০৩ রান করেন মাত্র বারো ম্যাচেই। ফাওয়াদের এমন ফর্ম তাঁকে দলে না রাখতে চাওয়া নির্বাচকদের যেন ব্যঙ্গ করেছে।

তবে মধুর প্রত্যাবর্তন স্থায়ী হলো আর, ২০২২ সালে চার ম্যাচ খেলেও বলার মত কিছু করতে না পারায় দল থেকে আবারো বাদ পড়ে যান ফাওয়াদ আলম। টানা দুই বছর ভাল করার পরে একটু ভরসা বোধহয় করাই যেত তাঁর উপর, কিন্তু করেনি টিম ম্যানেজম্যান্ট। আর তাতেই পাকিস্তানের সবুজ জার্সিকে অভিমানে বিদায় বলে দিয়েছেন এই বামহাতি।

আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানকার স্থানীয় খেলোয়াড় হিসেবে মাইনর ক্রিকেট লিখে খেলার পরিকল্পনা করেছেন ৩৭ বছর বয়সী ফাওয়াদ আলম। এর আগে স্বদেশী সামি আসলাম, হাম্মাদ আজম, সাইফ বাদর, মোহাম্মদ মহসিনের মত সাবেক ক্রিকেটাররা ঘাঁটি গেড়েছিলেন আমেরিকায়; ফাওয়াদও যোগ দিতে যাচ্ছেন তাদের সঙ্গে।

২০০৭ সালে পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখলেও জাতীয় দলের জার্সিতে কখনোই নিয়মিত হতে পারেননি ফাওয়াদ আলম। যেই ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে তাঁর পথ চলা শুরু হয়েছিল সেই ফরম্যাটে করেছেন চল্লিশের বেশি গড়ে ৯৬৬ রান। এমন পারফরম্যান্সের পরেও খেলতে পেরেছেন মাত্র ৩৮ ম্যাচ।

অন্যদিকে ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণে বরাবরই ফাওয়াদ আলম ছিলেন দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে ব্যাটিং করেছেন, জাতীয় দলে যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন সেটির প্রায় সবটুকু কাজে লাগিয়েছেন। ১৯ ম্যাচে পাঁচ সেঞ্চুরিতে ছড়ে করেছেন ১০০০ এর বেশি রান; গড়টা ৩৯ ছুঁই ছুঁই। অতিমানবীয় না হলেও, খারাপ বলার সুযোগ নেই।

টি-টোয়েন্টিতে তুলনামূলক অনুজ্জ্বল ছিলেন ফাওয়াদ আলম। ১৭ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলেও করেছেন কেবল ১৯৪ রান, স্ট্রাইকরেট মাত্র ১১৪। তবে ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহুর্তের দেখা পেয়েছেন এই সংস্করণেই; ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা পাকিস্তান দলের অংশ ছিলেন তিনি।

টি-টোয়েন্টি না হোক, ওয়ানডে আর টেস্টে আরো অনেক ম্যাচ খেলতে পারতেন ফাওয়াদ আলম। কিন্তু শেষ বয়সে এসে ক্যারিয়ার খুব একটা বড় করতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই বিদায় বলতে হচ্ছে এই ব্যাটসম্যানকে। অবশ্য তাঁর সময়ে মিসবাহ উল হক, ইউনুস খানের মত তারকারা ছিলেন পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে; তাঁদের হটিয়ে জায়গা পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল।

ক্রিকেটে যুগে যুগে এমন অনেকেই এসেছেন ভুল সময়ে; পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে তাঁরা দেখাতে পারেননি নিজের প্রতিভার সবটুকু। ফাওয়াদ আলমও সেই দুর্ভাগাদের একজন হয়েই ছুটি নিলেন পাকিস্তান জাতীয় দল থেকে; ছুটি নিলেন ক্রিকেটের ভিন্ন এক স্বাদ নিতে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...