আজাজের মুম্বাই ফিল্ম

মুম্বাই। কেবল সিনেমা আর ক্রাইম নয়; ভারতের ক্রিকেট রাজধানী বলেও ডাকতে পারেন মুম্বাইকে। যেনো থ্রি সি-এর এক মঞ্চ।

সেই সুনীল গাভাস্কার থেকে শচীন টেন্ডুলকার; ক্রিকেটার কম জন্ম দেয়নি মুম্বাই। ভারতের হয়ে তো বটেই, ভিন দেশের হয়ে খেলা মুম্বাই ক্রিকেটারের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। আর এরই সর্বশেষ সংস্করণ আজাজ ইউনুস প্যাটেল।

মুম্বাই থেকে উঠে এসেছেন। ২৫ বছর পর আবার সেই মুম্বাইতেই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে খেলতে নামলেন। তবে ভারতের নয়, নিউজিল্যান্ডের জার্সি পরে। আর এই ভিনদেশের জার্সি পরেই হোম গ্রাউন্ডে ছুঁয়ে ফেললেন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা এক মাইলফলক। জিম লেকার আর অনিল কুম্বলের পর তৃতীয় বোলার হিসেবে এক ইনিংসে ১০ উইকেট তুলে নিলেন; অল টেন।

অথচ ৮ বছর বয়সে আজাজ যখন মুম্বাই ছাড়েন, তখন ১০ উইকেট তো দূরে থাক, ক্রিকেট খেলবেন, এটাই কল্পনা করেননি।

বাবা ইউনুস প্যাটেল ছিলেন রেফ্রিজারেটর মিস্ত্রি। আর মা শাহানাজ প্যাটেল ছিলেন শিক্ষিকা। ইউনুস প্যাটেলের ভাইয়েরা আগে থেকেই অকল্যান্ডে ছিলেন। ভাইয়েদের দেখানো পথেই নতুন জীবনের টানে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইউনুস প্যাটেল।

এজাজ হয়তো ফুটবলার হতে পারতেন। বা নিউজিল্যান্ডে গিয়ে রাগবি খেলাটাও তার পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু চাচা সাঈদ প্যাটেল একদিন জোর করে চাচাতো ভাইদের সঙ্গে এক ক্রিকেট ক্লাবে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন। অকল্যান্ডের নিউ লিন নামের এই ক্লাবে শুরু হলো ‘ফাস্ট বোলার’ আজাজের ক্রিকেট খেলা!

বিশ্বাস করুন, বিশ্বরেকর্ড করে ফেলা বাঁহাতি স্পিনার এজাজ মূলত ফাস্ট বোলার ছিলেন।

যদিও টিভিতে দেখে দেখে ততোদিনে শেন ওয়ার্ন আর শচীন টেন্ডুলকারের খুব ভক্ত হয়ে গেছেন। কিন্তু হতে চাইতের ফাস্ট বোলার। তবে খুব একটা ভালো করতে পারছিলেন না। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা আজাজ কয়েক বছর পর সিদ্ধান্ত নিলেন, তাকে দিয়ে ক্রিকেট হবে না।

হয়তো ছেড়েই দিতেন। কিন্তু একদিন অনুশীলনে একটা মজা হলো। একটু কম কষ্ট করার জন্য আস্তে আস্তে গিয়ে নেটে অফস্পিন করছিলেন। আর সাথে সাথেই ঘটে গেলো এক চমৎকার। সতীর্থরা অবাক হয়ে বললেন-এ তো অসাধারণ স্পিনার!

ভাগ্য বদলে গেলো আজাজের। এরপর  স্বপ্নের মত দ্রুততায় সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট দলে এসে সাফল্য পেতে শুরু করলেন। ২০১৮ সালে জাতীয় দলে ডাকও পেয়ে গেলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়ে গেলো। অভিষেক টেস্টেই ৫ উইকেট নিলেন। এরপর গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু চক্রটা পূরণ হওয়ার বাকি ছিল।

অবশেষে এই চলমান টেস্টে ওয়াংখেড়েতে, মাতৃভূমিতে টেস্ট খেলতে নামলেন আজাজ।

এই ম্যাচে যে রেকর্ড করে ফেলবেন, তা তো আর জানতেন না। তবে ম্যাচের আগেই বলছিলেন, এটা তার জন্য অসাধারণ এক অনুভূতি। এর আগে আইপিএলের সময় ওয়াংখেড়েতে এসেছেন। ছোটবেলায় বেড়াতেও এসেছেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ড দলের সাথে ওয়াংখেড়েতে আসার এই অনুভূতিটা অনন্য। এজাজের কাছে এর আরেকটা অর্থ ছিলো।

মুম্বাইতে থাকা এজাজের পরিবারের অনেক সদস্য তাকে কখনো সামনাসামনি ক্রিকেট খেলতে দেখেননি। তারা বলে রেখেছিলেন, এই টেস্টে তারা গ্যালারিতে গলা ফাটাবেন। এজাজ লাজুকভাবে বলছিলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের জন্য হলেও স্মরনীয় কিছু করতে হবে।’

আহ! সেই টেস্টকে এমন রেকর্ড বইয়ের পাতায় লিখে স্মরণীয় করে রাখবেন, তা কী কল্পনাতেও ছিলো? জীবন কখনো সিনেমার চেয়েও চমৎকার। আর জায়গাটা মুম্বাই বলেই কি না, চিত্রনাট্যের মতই অসাধারণ আজাজের এই ফিরে আসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link