বাতাসে মহাদেশীয় রোমাঞ্চের গন্ধ

আর মাত্র কয়েকটা দিন, এরপরই মাঠে গড়াবে ক্রিকেট বিশ্বের একমাত্র আন্ত:মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট। ছয় দলের তেরো ম্যাচের লড়াই শেষে একজনের মাথায় উঠবে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দৌরাত্মে এখন কিছুটা হলেও এশিয়া কাপ নিয়ে উন্মাদনা হ্রাস পেয়েছে৷ তবে ইতিহাসের পাতায় ঘুরে আসলে আগের আসরগুলোতে দেখা যাবে অবিশ্বাস্য কিছু ম্যাচ।

কখনো ভারত, শ্রীলঙ্কা কখনো আবার পাকিস্তান বা বাংলাদেশ দর্শকদের উপহার দিয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর কিছু মুহূর্ত। এশিয়া কাপের এমনই কিছু রোমাঞ্চকর ম্যাচ নিয়ে আজকের আয়োজন।

  • ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা (২০০৪): আতাপাত্তুদের প্রতিশোধ

২০০৪ সালের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। মারভান আতাপাত্তুর নেতৃত্বে সেবার দারুণ দল গড়েছিল স্বাগতিকরা। অন্যদিকে ২০০৩ বিশ্বকাপের রানার আপ ভারতও ছিল ছন্দে, তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে ভারতীয় দল শিরোপার অন্যতম বড় দাবিদার ছিল। গ্রুপ পর্বে এই দুই দলের লড়াই হয়েছে সমানে-সমানে। শুরুতে ব্যাট করতে নামা ভারত যুবরাজ এবং সৌরভ গাঙ্গুলির ফিফটিতে ২৭২ রান করে।\

দ্বিতীয় ইনিংসে সনাথ জয়াসুরিয়ার সেঞ্চুরিতে জবাবটা ভাল ভাবে দিয়েছিল লঙ্কানরা। কিন্তু জয়ের কাছাকাছি এসে জয়াসুরিয়া আউট হয়ে যাওয়ায় ভারতের দিকে হেলে যায় ম্যাচ। শেষ ওভাবে স্বাগতিকদের ১১ রান প্রয়োজন হলেও জহির খান মাত্র ছয় রান খরচ করেন। অবশ্য সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে প্রতিশোধ নিতে ভুল করেনি আতাপাত্তুর দল।

  • ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা (২০০৮): অজন্তা রহস্য

চার বছর পর আরো একবার এশিয়া কাপের ফাইনালে দেখা হয় ভারত এবং শ্রীলঙ্কার। এবার অবশ্য আগে ব্যাট করতে নেমে ২৭৩ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। মাত্র তিন রাত আগে এই মাঠে দাপটের সাথে ৩০৯ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতা ভারতের কাছে তাই এই সংগ্রহ তেমন কিছু মনে হয় নি।

কিন্তু ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট শ্রীলঙ্কার রহস্য সেদিন ভেদ করতে পারেনি ভারত। মিস্ট্রি স্পিনার অজান্তা মেন্ডিস এক স্পেলে ছয় উইকেট তুলে নিয়ে ধ্বসিয়ে দেন তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। মাত্র ১৭৩ রানে অলআউট হয়ে যায় দুই বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত।

  • বাংলাদেশ বনাম ভারত (২০১২): শচীনের মঞ্চে সাকিবদের উত্থান

ঘরের মাঠে ২০১২ সালে স্মরণীয় একটি এশিয়া কাপের আসর কাটিয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার প্রথমবারের মত টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে সক্ষম হয় তারা। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের শততম শতক তুলে নিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। কিন্তু সেদিন তাকে ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছিল তামিম, মুশফিকের মত তরুণেরা।

ভারতের বেঁধে দেয়া ২৯০ রানের টার্গেট পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় স্বাগতিক দল। সেই সাথে জন্ম দেয় এশিয়া কাপ ইতিহাসের অন্যতম বড় অঘটনের।

  • বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান (২০১২): সুযোগ  হারানো বাংলাদেশ

ঘরের মাঠে ভারত এবং শ্রীলঙ্কাকে হারানোর সুখ স্মৃতি নিয়েই সেবারের এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। নিজ দেশের দর্শকদের সামনে শিরোপা উঁচিয়ে ধরার সুযোগ পেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি, অল্পের জন্য হেরে যেতে হয়েছিল পাকিস্তানের কাছে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান ২৩৫ রান করতে সক্ষম হয়।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সাকিব এবং তামিমের ফিফটিতে জয়ের পথে ভালভাবেই ছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু শেষ ওভারে প্রয়োজনীয় নয় রান তুলতে ব্যর্থ হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আইজাজ চিমা মাত্র ছয় রান দিয়েছিলেন শেষ ওভারে। সেদিন বাংলাদেশ দলের কান্নাভেজা দৃশ্য এখনো ক্ষত হয়ে আছে টাইগার ভক্তদের মনে।

  • ভারত বনাম আফগানিস্তান (২০১৮): আফগানদের লড়াই

২০১৮ সালের এশিয়া কাপে ফাইনাল নিশ্চিত করায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিয়মিত একাদশের চারজন খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দেয়। সেই টুর্নামেন্টের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বিশ্রামে থাকায় টস করতে আসেন কিংবদন্তি মহেন্দ্র সিং ধোনি। কিন্তু ভারতীয় উইকেট রক্ষক ধোনি নয়, বরং সে ম্যাচে আফগান উইকেট কিপার মোহাম্মদ শাহজাদ দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছিল, শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তান ভারতকে ২৫৩ রানের টার্গেট দেয়।

রাহুল, রাইডুদের ব্যাটে ছড়ে সাবলীলভাবেই জয়ের পথে এগিয়ে গিয়েছিল ভারত। কিন্তু মিডল অর্ডার হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ায় শেষদিকে চাপে পড়ে যায় তারা। ইনিংসের পঞ্চাশতম ওভারে জয়ের জন্য সাত রান প্রয়োজন হলেও রশিদ খানের ওভার থেকে মাত্র ছয় রান নিতে পেরেছিল ভারতীয় লোয়ার মিডল অর্ডার। অবশ্য সুপার ওভার না থাকায় ড্র-তেই নিষ্পত্তি হয় এই উত্তেজনাকর ম্যাচটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link