ফুটবল রপ্তানির ‘মাস্টারমাইন্ড’

রপ্তানি শব্দটি শুনলেই মনে হয় চাল, ডাল, গমসহ বিভিন্ন খাদ্য শস্য একদেশ থেকে অন্যদেশে ক্রয়-বিক্রয় করা। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে গাড়ি, মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি প্রযুক্তিও বর্তমানে রপ্তানি করা হয়। এমনকি মানব শক্তি ও হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের পন্থা। কিন্তু যদি বলা হয় ফুটবলার রপ্তানির কথা, তখন নিশ্চয়ই খটকা লাগে। মূলত এক দেশের ফুটবলার অন্যদেশের ঘরোয়া লিগগুলোতে খেলতে আসা-ই ফুটবলার রপ্তানি।

কিন্তু বিদেশের বিভিন্ন লিগে কোন দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ফুটবলার রপ্তানি করে — এই প্রশ্নের উত্তরে সবার আগে যে দুইটি দেশের নাম আসবে তারা হলো ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায়। এই দুটি দেশের ফুটবলারেই সয়লাব প্রায় গোটা বিশ্ব। কিন্তু শীর্ষে আছে কোন দেশ, ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা – এমন বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে সুইজারল্যান্ডের ফুটবল বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সিআইএস ফুটবল অবজারভেটরি।

তাদের বিশ্লেষণে চোখ রাখলে এতদিনে জানা হয়েছে গিয়েছে উত্তরটা। গত বছর ফুটবলার রপ্তানিতে শীর্ষে ছিল ব্রাজিল, এবারও নিজেদের শীর্ষস্থান থেকে নড়ে নি পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। অন্যদিকে ফুটবলার রপ্তানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর একটি হলেও দীর্ঘদিন শীর্ষে উঠতে পারে নি।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি চলতি মাসের শুরুতে ফুটবলার রপ্তানির বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১ মে পর্যন্ত ব্রাজিল থেকে বিদেশে বিভিন্ন লিগে খেলা ফুটবলারের সংখ্যা প্রায় বারোশত এর বেশি। অথচ আর কোন দেশের এক হাজার ফুটবলারও খেলেন না ভিনদেশী লিগ গুলোতে।

৯৭৮ জন ফুটবলার রপ্তানি করে এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।এছাড়া লাতিন আমেরিকার পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ৮১৫ ফুটবলার রপ্তানি করে ফ্রান্সের পরেই অবস্থান করছে।

তবে বিদেশের বিভিন্ন লিগে খেলা ফুটবলারদের শতকরা হারে তিনটি দেশের ফেডারেশনের অবস্থানের তারতম্য আছে। ফ্রান্সের শতকরা ৯০ শতাংশ খেলোয়াড় খেলছেন বিদেশের লিগে। অর্থাৎ দেশটির খুব কম সংখ্যক ফুটবলারই নিজ দেশের ঘরোয়া লিগে খেলে থাকেন। অন্যদিকে লিওনেল মেসি’র দেশ আর্জেন্টিনা থেকে ৪৬.১ শতাংশ ফুটবলার বাইরের লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।

অন্যদিকে সর্ব্বোচ্চ ফুটবলার রপ্তানি করা সত্ত্বেও ব্রাজিল থেকে বিদেশে খেলছেন মাত্র ৩.৫ শতাংশ ফুটবলার। এতেই বোঝা যায় যে, বিপুল পরিমান ফুটবলারের জন্ম এই দেশে। ফুটবলারের খনি বলাই যায় বিশ্ব আসরের সবচেয়ে সফলতম দেশটিকে।

এছাড়া ফুটবলের আবিষ্কারক দেশ ইংল্যান্ড থেকে বিদেশের লিগে খেলছেন ৫২৫ জন ফুটবলার। বিদেশে খেলোয়াড় রপ্তানির তালিকায় চার নম্বরে রয়েছে ইংলিশরা। তাছাড়া ৪৪১ জন ফুটবলার রপ্তানি করে পাঁচে আছে জার্মানি এবং ছয়ে থাকা কলম্বিয়া থেকে বিদেশের লিগে খেলে থাকেন ৪২৫ জন ফুটবলার। ইউরোপের আরেক শক্তিশালী দেশ স্পেনের ৪০৯ জন ফুটবলার খেলে থাকেন বিদেশের লিগে, ফুটবলার রপ্তানির তালিকায় তারা রয়েছে সাত নম্বরে।

সিআইএসের গত বছরের হিসাব অবশ্য বলছে, গত এক বছরে ব্রাজিল থেকে বিদেশের লিগে খেলা ফুটবলারের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, ১২৮৭ জন ফুটবলার বিদেশের লিগে রপ্তানি করেছিল সেলেসাওরা।

তবে খেলোয়াড় রপ্তানিতে শীর্ষ তিন দেশের অবস্থানের কোনো নড়চড় হয়নি। আগের বছর ৯৪৬ জন ফুটবলার রপ্তানি করে দুই নম্বরে ছিল ফ্রান্স এবং তিনে থাকা আর্জেন্টিনার ৭৮০ ফুটবলার খেলেছিল বিদেশি লিগে।

সিআইএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের বেশির ভাগ খেলছেন পর্তুগিজ লিগে। বর্তমান হিসাব অনুযায়ী, পর্তুগিজ লিগে এখন ২৩১ জন ব্রাজিলিয়ান খেলছেন। তাদের পছন্দের তালিকায় এরপরই আছে এশিয়ার দেশ জাপান – সেখানে ৭৯ জন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার রয়েছেন।

আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক খেলছেন প্রতিবেশি দেশ চিলির বিভিন্ন লিগে। ১২৭ জন আর্জেন্টাইন খেলেন সেখানে। চিলি ছাড়াও আর্জেন্টিনার ৬৭ জন ফুটবলার স্প্যানিশ লিগগুলোতে এবং ৫৬ জন ইতালিয়ান লিগগুলোতে খেলছেন।

ফ্রান্স থেকে সর্বোচ্চ ১২৩ ফুটবলার খেলছেন লুক্সেমবার্গের লিগে। দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ ৯৬ জন খেলছেন বেলজিয়ামের লিগে। স্প্যানিশদের পছন্দ ইংল্যান্ডের লিগ এবং ইংলিশ ফুটবলারদের অধিকাংশ খেলেন স্কটিশ লিগে।

ফুটবলার রপ্তানিতে ব্রাজিলের এমন আধিপত্য বুঝতে অবশ্য গানিতিক হিসাব প্রয়োজন হয় না। ইউরোপ সহ বিভিন্ন দেশের ফুটবল সম্পর্কে নিয়মিত খবর রাখলেই এটি সহজে অনুধাবন করা যায়। এই যেমন, এবারের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লিভারপুল এবং রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলবেন ব্রাজিলের মোট আটজন ফুটবলার। অথচ অনেক বড় বড় পরাশক্তির একজন প্রতিনিধি-ও নেই ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই মহাদ্বৈরথে।

এছাড়া ইংলিশ লিগ চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি’তে রয়েছেন দুই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার। লা লিগা চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদে খেলছেন পাঁচজন ব্রাজিলিয়ান। অন্যদিকে ফ্রেঞ্চ জায়ান্ট পিএসজি’তে আছেন দুইজন সেলেসাও ফুটবলার। সিরি আঁ এর শিরোপা জয়ী এসি মিলানেও আছেন তরুন এক ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার।

এমনকি বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগের চ্যাম্পিয়ন দল বসুন্ধরা কিংসেও খেলছেন দুই ব্রাজিলিয়ান রবসন রবিনিও এবং মিগুয়েল ফিগুয়েরা। এদের ছাড়াও লিগের অন্য ক্লাবগুলোতে রয়েছেন রাফায়েল অগাস্তু, ডরিয়েল্টন এর মত বেশ কয়েকজন ব্রাজিলিয়ান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link