বিশ্বকাপ প্রস্তুতি: কেমন উইকেট চাই?

সদ্য শেষ হওয়া পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের কাছে পাত্তায় পায়নি অস্ট্রেলিয়া। মন্থর এবং টার্নিং উইকেট বানিয়ে ঘরের মাঠের সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এই সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করলেও প্রশ্ন উঠেছে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এরকম উইকেটে খেলার যৌক্তিকতা নিয়ে। সিরিজ শুরুর পর থেকেই উইকেট নিয়ে বিস্তর আলোচনা সমালোচনা হয়েছে; যেটা চলছে এখনো।

এরকম উইকেটে খেলার পক্ষে যেমন অনেকেই সমর্থন দিয়েছেন তেমনি বিপক্ষেও মতামত কম নেই। যারা বিপক্ষে ছিলেন তাদের যুক্তি ছিল মন্থর ও টার্নিং উইকেটে খেলে বিশ্বকাপের জন্য আদর্শ প্রস্তুতি হবে না বাংলাদেশের। আর যারা পক্ষে ছিলেন তাদের যুক্তি ছিল কেমন উইকেটে খেলা হচ্ছে এটা বড় বিষয় নয়, বিশ্বকাপের আগে ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাস অর্জন করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বকাপের আগে চলতি মাসের শেষের দিকে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসবে নিউজিল্যান্ডও। এই সিরিজের সব গুলো ম্যাচও অনুষ্টিত হবে মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এই সিরিজেও হয়তো একই রকম উইকেটে খেলবে বাংলাদেশ। তখনও হয়তো আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকবে মিরপুরের উইকেট ও বিশ্বকাপ প্রস্তুতি।

এই রকম মন্থর ও টার্নি উইকেটে খেলে আসলেই কি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে ঘাটতি থেকে যাবে, নাকি সঠিক পথেই আছে বাংলাদেশ। এই বিষয়ে মতামত নিতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন ও খালেদ মাসুদ পাইলটের মুখোমুখি হয়েছিল খেলা ৭১। তবে সাবেক দুই অধিনায়কের মতামতেও থেকে গেছে ভিন্নতা।

সুজন যেমন মনে করেন বিশ্বকাপের আগে এই রকম মন্থর উইকেটে খেলা আদর্শ না। আবার পাইলট মনে করেন বিশ্বকাপের আগের সিরিজ গুলোতে এরকম উইকেটে খেলে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের যুক্তির পক্ষে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়ক।

দেশের মাটিতে মন্থর উইকেটে ব্যাটসম্যানরা রানের জন্য সংগ্রাম করলেও তেমন পরিক্ষা দিতে হয়নি বোলারদের। কিন্তু বিশ্বকাপে ফ্ল্যাট উইকেটে দেখা যাবে একদম ভিন্ন চিত্র। ঠিক এই জন্যই এটাকে আদর্শ প্রস্তুতি বলছেন না খালেদ মাহমুদ সুজন।

তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার সাথে সিরিজ জেতা বড় অর্জন। কিন্তু আপনি যদি দেখেন আইসিসির ইভেন্টে প্রচুর রান হয়। ঐ বিষয়টা মাথায় রেখে আমি বলবো এটা আদর্শ প্রস্তুতি না।’

তবে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি না নিতে পারলেও সুজন মনে করেন বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকবে না বাংলাদেশের। আসন্ন এই বিশ্বকাপের মূল পর্বে সরাসরি অংশ নিতে পারবে না বাংলাদেশ। মূল পর্বে জায়গা করে নিতে ওমানে গিয়ে কোয়ালিফায়ার রাউন্ড খেলতে হবে বাংলাদেশকে।

সুজন মনে করেন বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকলেও ওমানে গিয়ে কোয়ালিফায়ার রাউন্ড খেলে ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘এই উইকেটে খেলে হয়তো বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হবে না। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতেও হয়তো ঘাটতি থাকবে না। আমরা বিশ্বকাপ শুরুর আগে ওমানে গিয়ে কোয়ালিফায়ার রাউন্ড খেলবো। ওখানে একটা প্রস্তুতি হবে।’

কিন্তু বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার রাউন্ডও তো বাংলাদেশের জন্য একটা মরণ ফাঁদ। এর আগে দেশের মাটিতে কোয়ালিফায়ার রাউন্ডে কেনিয়ার কাছে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার কোয়ালিফায়ার রাউন্ডে রয়েছে তিনটি ম্যাচ। যেখানে গ্রুপ ‘বি’ তে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি ও স্বাগতিক ওমান।

এবারও যে এরকম কিছু ঘটবে না এর কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই কোয়ালিফায়ার রাউন্ডের আগেও একটা প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল। সুজন এই বিষয়টা ছেড়ে দিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনার উপর। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় টিম ম্যানেজমেন্টের একটা পরিকল্পনা আছে। এটা তারাই ভালো বলতে পারবে।’

আর খালেদ মাসুদ পাইলট মনে করেন দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের আগে কিছু ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে তাঁর কাছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয় বিশ্বকাপে তরুণ ক্রিকেটারদের উজ্জ্বীবিত করবে বলেও মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। এই জন্যই তাঁর কাছে দলের পরিকল্পনাটা সঠিক বলে মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় যে পরিকল্পনায় যাচ্ছে এটা আমাদের জন্য ভালো। এজন্যই ভালো বলবো কারণ বিশ্বকাপ কিন্তু এখনো অনেক দূরে আছে। এখন আপনি যদি ফ্ল্যাট উইকেট বানিয়ে ম্যাচ গুলো হেরে যেতেন আপনার আত্মবিশ্বাস আরো তলানিতে যেতো। আত্মবিশ্বাসের জন্য দিন শেষে ম্যাচ জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপে তরুণ ক্রিকেটারদের মাঝে কাজ করবে যে অস্ট্রেলিয়ার মত দলকে আমরা হারিয়েছি।’

চলতি মাসের শেষের দিকে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসবে নিউজিল্যান্ড। এই সিরিজে আসবেন না নিউজিল্যান্ডের নিয়মিত ক্রিকেটাররা। পাইলট মনে করেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মন্থর উইকেট বানিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করার পর শেষের দুই ম্যাচে ফ্ল্যাট উইকেট বানিয়ে ব্যাটসম্যানদের প্রস্তুতির সুযোগ করে দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশের দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের সাথেও আমাদের এরকম উইকেটেই খেলা উচিত। পাঁচ ম্যাচের প্রথম তিনটা জিতলে শেষের দুইটা হয়তো ফ্ল্যাট উইকেটে খেললেন। তাহলে কিছু রান করে সবাই আরো একটু আত্মবিশ্বাসী হবে।’

এছাড়াও বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য আরো একটা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন খালেদ মাসুদ পাইলট। নিউজিল্যান্ড সিরিজ শেষে বিশ্বকাপের আগে প্রায় এক মাস কোন খেলা নেই বাংলাদেশের। পাইলট মনে করেন এই সময়ে দেশের মাটিতে ফ্ল্যাট উইকেট বানিয়ে তিন চারটা দল নিয়ে একটা টুর্নামেন্ট করলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পুরোপুরি হয়ে যেত বাংলাদেশের।

তিনি বলেন, ‘এছাড়া বিসিবির পরিকল্পনা আছে কিনা জানিনা। বিশ্বকাপের আগের একটা টি-টোয়েন্টি লিগ করা। যেখানে বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটারদের সাথে স্থানীয় কিছু ক্রিকেটার খেলবে। মান ধরে রাখতে বেশি ক্রিকেটার নেওয়া যাবে না। তিন চারটা দল করে ফ্ল্যাট উইকেটে খেলতে হবে। যদি ছয়টা ম্যাচ ফ্ল্যাট উইকেটে খেলা যায় তবে ভালো প্রস্তুতি হবে।’

জানিয়ে রাখা ভালো, চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখ থেকে মাঠে গড়াবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসর। এবারের আসর অনুষ্ঠিত হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ও ওমানে। মূল পর্বে ১২ দলের লড়াই শেষে বিশ্বকাপ শেষ হবে ১৪ নভেম্বর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link