বডিগার্ড থেকে ক্রিকেটার কিংবা ফুটবলার থেকে ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্পগুলোতো আমরা কমবেশি জানি। আবার ক্রিকেট থেকে অভিনয় জগতেও পদচারণা দেখা যায় ক্রিকেটারদের। সলিল আনকোলা থেকে এস শ্রীসান্থ, এমনকি অজয় জাদেজা এবং সুনীল গাভাস্কার অনেককেই চলচ্চিত্রে ছোট ছোট ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা গেছে।
ভারতের বিরাট কোহলি, বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটারদের তো আবার সচরাচর বিজ্ঞাপনে দেখা যায় ব্র্যান্ডগুলোতে তাঁদের দারুণ চাহিদার জন্য। কিন্তু অনেক সময় এমন হয় স্বল্প মেয়াদে বা শখের বশে নয়, বরং একেবারে পুরদস্তুর ক্রিকেটার থেকে অনেকেই অভিনয় জগতে আগ্রহ খুঁজে পায়।
ভারতীয় বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি বিশ্বের অন্যতম বড় একটি ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে গণ্য হয়। ভারতীয় ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কয়েকজন পরিচিত অভিনেতাকে খুঁজলেই পাওয়া যাবে যারা কিনা ক্রিকেটার হওয়ার বন্ধুর পথে অনেকখানি হেঁটেছেন। এরপর ভাগ্যদেবীর বর না পেয়ে ক্যারিয়ার বদলে পুরদস্তুর অভিনেতা হয়ে গিয়েছেন। ক্রিকেটার থেকে অভিনেতা হওয়া এমন পাঁচজন ব্যক্তির নাম জানবো আমরা।
- হার্ডি সান্ধু
হার্ডি সান্ধু তাঁর হিট ট্র্যাক ‘নাহ গোরিয়ে’, ‘টাকিলা শট’ দিয়ে সঙ্গীত শিল্পে সুপরিচিত। পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, তিনি মূলত ক্রিকেটে একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন এবং পাঞ্জাবের রঞ্জি দল এবং ভারতের অনূর্ধ্ব- ১৯ দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তিনি ভারতের হয়ে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখতেন, কিন্তু জীবন তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি।
ইনজুরির কারণে তাঁর খেলাধুলার ক্যারিয়ার থেমে গিয়েছিল। সান্ধু পাঞ্জাবের হয়ে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে মাত্র তিনটি প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন, তন্মধ্যে একটি হায়দ্রাবাদ, একটি বরোদা এবং অন্যটি উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে। মাত্র তিন ম্যাচের প্রথম শ্রেণী ক্যারিয়ারে তাঁর ঝুলিতে ১২টি উইকেট রয়েছে!
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সান্ধুর সাম্প্রতিক অভিনয়গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো কবির খানের ‘এইটি থ্রি’ মুভিতে অভিনয়। যেটি ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারতের শিরোপা জয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। এই মুভিতে হার্ডি সান্ধু অভিনয় করেছেন ক্রিকেটার মদন লাল চরিত্রে।
- সলিল আঙ্কোলা
সলিল আঙ্কোলা ছিলেন একজন পেস বোলার, যার ১৯৮৮-৮৯ সালে বোম্বের হয়ে একটি স্মরণীয় অভিষেক ঘটে। এই পেসার বরোদার বিরুদ্ধে ছয় উইকেট নেওয়ার আগে গুজরাটের বিরুদ্ধে একটি হ্যাটট্রিকসহ ৪৩ রান করেন। এমন অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে ভারতীয় জাতীয় দলে জায়গা করে দিয়েছিল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক ঘটেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে শচীন টেন্ডুলকারের সাথে। ইনজুরির কারণে পরের টেস্টেই বাদ পড়েন। তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার তাই ওই একটি টেস্টে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। ১৯৯৩ সালে ভারতের ওয়ানডে দলে খেলার ডাক পান।
১৯৯৬ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপেও দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তাঁর ক্যারিয়ারে তিনি কেবল ২০ টি ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। ২৮ বছর বয়সে বাম পায়ে শিন বোনে (অস্টিয়ড অস্টিওমা) টিউমারের ফলে খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন তিনি। প্রায় ২ বছর চলাফেরা করতে পারেননি।
- করণ ওয়াহি
আপনি জেনে অবাক হবেন যে ফিল্ম এবং টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির সুপরিচিত মুখ করণ ওয়াহি, কোন এক কালে দিল্লির বয়সভিত্তিক দলের হয়ে ক্রিকেট খেলতেন। টিভি প্রোগ্রাম রিমিক্স এর মাধ্যমে তিনি পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। পরিনীতি চোপড়া এবং আদিত্য রায় কাপুর অভিনীত ‘দাওয়াত–ই–ইশক’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ওয়াহি বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন।
ওয়াহি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সেন্ট মার্কস সিনিয়র সেকেন্ডারি পাবলিক স্কুলের হয়ে খেলে। ২০০৩ সালে কিংবদন্তি বিরাট কোহলি এবং শিখর ধাওয়ানের সাথে দিল্লীর অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলে খেলার জন্য তাঁর ডাক পড়ে। কিন্তু একটি গুরুতর ইনজুরি তাকে খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছিল। তারপর থেকে, তিনি ডেইলি সোপ, উপস্থাপনা এবং বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব।
- আঙ্গাদ বেদি
খেলাধুলায় তাঁর বাবার অর্জনের জন্য তাঁর নামটি সবার কাছে সুপরিচিত। অঙ্গদ বেদি হলেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেট কিংবদন্তি বিষান সিং বেদীর ছেলে।
অঙ্গদ বেদি নিজেও দিল্লির অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অংশ ছিলেন। তিনি একজন ধীরগতির বাঁ-হাতি অর্থোডক্স বোলার এবং একজন ডানহাতি ব্যাটার ছিলেন। কিন্তু বেশিদিন খেলা চালিয়ে যাননি তিনি। কারণ তিনি মডেলিং এর দিকে মনোনিবেশ করেন এবং বিনোদন শিল্পে যোগ দেন। এই স্টাইলিশ অভিনেতা অন্যতম প্রশংসিত ওয়েব সিরিজ ইনসাইড এজ–এ একজন ক্রিকেটারের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য।
- বিষ্ণু বিশাল
বিশাল কুদাওলা যিনি বিষ্ণু বিশাল নামে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। তিনিএকজন ভারতীয় প্রযোজক এবং অভিনেতা যিনি তামিল চলচ্চিত্র শিল্পে কাজ করেন। ক্রিকেটে একটি সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারের পর, তিনি ২০০৯ সালে অভিনয় শুরু করেন। তিনি স্পোর্টস মুভি ভেনিলা কাবাদি কুঝুতে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রশংসা পান।
তিনি তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (টিএনসিএ) হয়ে খেলতেন। বিষ্ণু রঞ্জি ট্রফি প্রতিযোগিতায় তামিলনাড়ুর হয়ে পেশাদারভাবে খেলেছিলেন। কিন্তু পায়ের ইনজুরি তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটায়। এই অভিনেতা স্মরণ করেন যে, অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকাকালীন তিনি সিনেমা দেখা শুরু করেছিলেন এবং তখন অভিনয়ে আগ্রহ তৈরি করেছিলেন।
উপরের নামগুলো সবাই ক্রিকেটকে ধ্যানজ্ঞান করেও ক্রিকেটে নিজেকে শেষমেশ প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। তাই বলে তাঁরা জীবনের হাল ছেড়ে দেননি। এক ক্যারিয়ার যেখান থেকে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই অন্য ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। তাঁদের জীবনী আমাদের শিক্ষা দেয়, ‘ইটস ওকে নট হ্যাভিং ইট অল’। হতাশ না হয়ে জীবনকে নতুন করে গুছিয়ে নিতে হয়।