মোহাম্মদ নওয়াজ, দ্য গেম চেঞ্জার

এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন; শেষ ওভারেও চেষ্টা করেছেন দলকে জেতানোর। কিন্তু পারেননি, সেই না পারার আক্ষেপ হয়তো ভেতরে ভেতরে বয়ে বেড়িয়েছেন মোহাম্মদ নওয়াজ। তবে এবার সেই আক্ষেপের সমাপ্তি হয়েছে, দ্বিতীয়বারের দেখায় তাঁর পারফরম্যান্সে ভর করেই ভারতকে হারিয়েছে পাকিস্তান।

টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া পাকিস্তানের শুরুটা ভাল হয়নি৷ রোহিত, কোহলিদের দাপুটে ব্যাটিং উড়ন্ত সূচনা পায় ভারত। তবে মোহাম্মদ নওয়াজ হাতে বল তুলে নিতেই ভারতের রানের গতি অনেকটাই কমে যায়। চার ওভার শেষে নওয়াজ মাত্র ২৫ রান খরচ করেছিলেন। ইকোনমিক্যাল বোলিংয়ের পাশাপাশি সুরিয়াকুমার যাদবকেও আউট করেন তিনি।

তবে মোহাম্মদ নওয়াজ মূল কাজটা করেছিলেন ব্যাটিংয়ে নেমে। সাধারণত আট নম্বরে ব্যাট করলেও তাঁকে এদিন চার নম্বরে পাঠানো হয়। হঠাৎ পাওয়া এই সুযোগ কাজে লাগাতে কোন ভুল করেননি তিনি। এই অলরাউন্ডার যখন ক্রিজে এসেছিলেন তখন ৮.৪ ওভারে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল মাত্র ৬৩ রান। ১৮২ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য বিবেচনায় বাবর আজমের দল তখন ঢ়ের পিছিয়ে ছিল।

এর পরই দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন মোহাম্মদ নওয়াজ। ওপেনার রিজওয়ানের সঙ্গে গড়েন ৪১ বলে ৭৩ রানের জুটি। যেখানে তাঁর অবদান মাত্র ২০ বলে ৪২ রান। ছয়টি চার এবং দুইটি ছয়ের সাহায্যে এই ঝড়ো ইনিংসটি খেলেছিলেন তিনি। তাঁর এমন ব্যাটিংয়ের কারণেই আবারও ম্যাচে ফেরে পাকিস্তান। নওয়াজকে পাকিস্তানের পিঞ্চ হিটার হিসেবে নামানোর অভিনব জুয়াটাই ম্যাচের গেম চেঞ্জার।

ষোলতম ওভারে মোহাম্মদ নওয়াজ এবং পরের ওভারে হাফ সেঞ্চুরি করা রিজওয়ান আউট হলেও পাকিস্তানকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে সমস্যা হয়নি আসিফ আলীদের। মোহাম্মদ নওয়াজের অবশ্য সতীর্থদের উপর ভরসা ছিল। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাচটি শেষপর্যন্ত নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম৷ কারন আমাদের খুশদিল, আসিফদের মত ব্যাটসম্যান আছে; যদি শেষদিকে ওভার প্রতি ১০-১২ রান প্রয়োজন হয়, তারা সেটা সহজেই করতে পারবে।’

শেষ পর্যন্ত এক বল এবং পাঁচ উইকেট হাতে রেখে ভারতের ১৮২ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে পাকিস্তান। ব্যাট হাতে ২০০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ৪২ রান, বোলিংয়ে ২৫ রানে এক উইকেট এবং ফিল্ডার হিসেবে তিনটি ক্যাচ – তিন বিভাগেই ঈর্ষণীয় পারফর্ম করা নওয়াজের হাতেই উঠেছে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার।

নিজের এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ভবিষ্যতেও ধরে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মোহাম্মদ নওয়াজ। পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার হওয়ার জন্য আরো বেশি পরিশ্রম করবেন বলেও জানান তিনি। এই বামহাতি অফ স্পিনার বলেন, ‘চাপের মুহূর্তে এমন ইনিংস খেলা অবশ্যই আমাকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে।উদ্ভূত প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’

ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলির চোখেও মোহাম্মদ নওয়াজ ছিলেন ম্যাচের নায়ক। তাঁর মতে, পাক অলরাউন্ডার মূলত দুই দলের মাঝে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। কোহলি বলেন, ‘আমি যেভাবে ম্যাচ দেখেছি তাতে বুঝতে পেরেছি সে (নওয়াজ) গেম চেঞ্জিং পারফরম্যান্স করেছে।’

এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত দুইবার মুখোমুখি হয়েছে ভারত এবং পাকিস্তান। কোন অঘটন না ঘটলে হয়তো টুর্নামেন্টের ফাইনালেও দেখা মিলবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের। প্রথম ম্যাচে হার্দিক পান্ডিয়া আর দ্বিতীয় ম্যাচে মোহাম্মদ নওয়াজ – দুই ম্যাচে দুই অলরাউন্ডার ম্যাচে পার্থক্য করে দিয়েছিলেন। যদি আরও একবার মাঠে নামতে হয় তবে কে হাসবে শেষ হাসি, কে জেতাবে দলকে – উত্তর জানতে আরো কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমীদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link