সৌরভ-চ্যাপেল বিতর্ক, পুরনো আগুনে নতুন ঘিঁ

সৌরভ গাঙ্গুলি-গ্রেগ চ্যাপেল বিতর্ক। ক্রিকেট ইতিহাস নিয়ে টুকটাক আগ্রহ থাকলে এ ঘটনা কারো কাছেই অজানা থাকার কথা নয়। অনেকের মতে, ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই ঘটনাকে।

সময়টা ২০০৫ সাল। তখনকার ভারত জাতীয় দলের কোচ জন রাইটের চুক্তি প্রায় শেষ। জন রাইট আর চুক্তি বাড়ালেন না। তাই ভারতকে বাধ্য হয়েই খুঁজতে হলো নতুন কোচ। ভারতের ড্রেসিংরুম সামলাতে কোচ হয়ে এলেন অস্ট্রেলিয়ান কোচ গ্রেগ চ্যাপেল।

সৌরভ গাঙ্গুলি তখনকার অধিনায়ক। ভারতের ক্রিকেট বদলে গিয়েছে তাঁর অধীনেই। শোনা যায়, গাঙ্গুলির পছন্দেই গ্রেগ চ্যাপেলকে কোচ করা হয়। কিন্তু কী এক নিয়তি। গ্রেগ চ্যাপেলকে দলে এনে এক প্রকার নিজের পায়েই কুড়াল মারেন গাঙ্গুলি।

গ্রেগ চ্যাপেল কোচ হয়ে আসার পর থেকেই বদলে যেতে শুরু করে সব কিছু। সৌরভকে অধিনায়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর উপর চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করেন চ্যাপেল। সৌরভও বুঝে গেলেন, দলে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বিসিসিআই-এর কাছে চ্যাপেলের পাঠানো একটি মেইল প্রকাশ্যে আসে। আর এর পরেই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে ভারতবাসী।

সেই মেইলে, চ্যাপেল সৌরভকে অধিনায়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এমনকি জিম্বাবুয়ে সফরে দল থেকে বাদ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। মূলত এরপরেই সৌরভ গাঙ্গুলীর অধিনায়কত্ব আর বেশিদিন টিকেনি। এমনকি দলেও ছিলেন অনেকটা যাওয়া আসার মতোই।

সৌরভের ক্যারিয়ারের গতিপথ রূদ্ধ হয়ে যায় সেই গ্রেগ চ্যাপেলের সময়ে। অবশ্য চ্যাপেলও আর বেশিদিন টিকতে পারেননি। ২০০৭ সালে ভারতের ভরাডুবির পরই তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সৌরভ গাঙ্গুলির সাথে গ্রেগ চ্যাপেলের এমন রেষারেষিতে ভারতের অন্যান্য ক্রিকেটার একটা সময় পর্যন্ত চুপ থাকলেও অনেকেই পরে মুখ খুলতে শুরু করেন।

শচীন টেন্ডুলকার তো তাঁর আত্মজীবনী বই প্লেয়িং ইট মাই ওয়েতে লিখেই ছিলেন যে, ‘গ্রেগ চ্যাপেল সে সময় ড্রেসিং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার জন্য দায়ী ছিলেন। তাছাড়া গাঙ্গুলির সঙ্গে চ্যাপেল যা করেছেন, তা মোটেও ঠিক ছিল না।’ শচীনের সাথে গলা মিলিয়ে অনেকবারই সমালোচনা করেছেন জহির খান, ভিভিএস লক্ষণ, হরভজন সিংও।

হরভজন সিং বলেছিলেন, ‘গ্রেগ চ্যাপেল ভারতের ক্রিকেটকে এমনভাবে ধ্বংস করে গিয়েছিলেন যে, আবার সব কিছু ঠিক ঠাক করে উঠতে প্রায় তিন বছর লেগে গিয়েছিল।’

সম্প্রতি সৌরভ-চ্যাপেলের সেই বিতর্ক আবারো আলোচনায় এসেছে বীরেন্দ্র শেবাগের কথায়। স্টার স্পোর্টসের এক অনুষ্ঠানে তিনি সেই স্মৃতি আবারো টেনে এনেছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, গাঙ্গুলিকে অধিনায়ক থেকে অব্যাহতির পর ভারতের ড্রেসিংরুমে কিছুটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। প্রথমে বুঝা না গেলেও পরই ঠিকই চ্যাপেলের আচরণ অনেককে অতীষ্ট করে ফেলে। সেই তালিকায় দলের প্রায় সবাই ছিলেন।

শেবাগ সে সময়ের স্মৃতি টেনে আরো যুক্ত করে বলেন, ‘দাদাকে (সৌরভ গাঙ্গুলি) অধিনায়ক থেকে বাদ দেওয়ার পর আমরা নতুন অধিনায়ক পেলাম। আর কোচ গ্রেগ চ্যাপেল আমাদের সাথে দীর্ঘ এক মিটিংয়ে বসলেন। কিন্ত এর কিছুদিন পরেই তাঁর অন্য রূপ বেরিয়ে আসে। তিনি খেলোয়াড়দের মাঝেমধ্যেই ধমক দিতেন।’

এই প্রসঙ্গে শেবাগ টানেন ভিভিএস লক্ষ্মণের প্রসঙ্গ। বলেন, ‘ভিভিএস লক্ষ্মণকে একবার অনেক উচ্চস্বরে কথা শুনিয়েছিলেন। এ ছাড়া দলের সে সময় অন্য ক্রিকেটাররাও তাঁর ধমক থেকে রেহাই পায়নি। আর এটাই তখন অনেককে বিষিয়ে তুলেছিল। চ্যাপেল চলে যাওয়ার পর অনেকেই সে সব তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে এনেছেন।’

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link