ভারতীয় ক্রিকেটে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে অস্থিরতা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর সাদা বলের ক্রিকেটে অধিনায়কের পরিবর্তন, টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে বিরাটের সরে দাঁড়ানো, বর্তমান বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলির সাথেও বিরাট কোহলির সম্পর্কও আগের মতো নেই – সব মিলিয়ে ভেতরকার পরিবেশ যে খুব ভালো অবস্থায় নেই সেটা অনুমেয় করাই যায়। এর মাঝেই নতুন বিতর্ক ভারতের দল নির্বাচনী বৈঠকেও নাকি উপস্থিত থাকেন স্বয়ং বোর্ড সভাপতি ও সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি!
হ্যাঁ, ক্রিকেটীয় যে প্রজ্ঞা আর অভিজ্ঞতা তাঁর আছে – তাতে বৈঠকে তিনি থাকতেই পারেন, কিন্তু বোর্ড সভাপতি হিসেবে এমন হস্তক্ষেপ কি তাঁকে মানায়! ভারতের দল নির্বাচনের বেশ কয়েকটি মিটিংয়ে সৌরভের উপস্থিতির কথা জানা গেলেও প্রথমে এটি নিশ্চিত না হওয়ায় অনেকেই গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) এক উর্ধতন কর্মকর্তার মতে এসব কিছুই গুজব এবং বানোয়াট খবর। তবে এরপরই বিসিসিআইর আরেক কর্মকর্তা ভারতের এক শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সে (সৌরভ) বেশ কয়েকবারই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। এভাবেই বর্তমানে বিসিসিআই চলছে। গাঙ্গুলির তো কোনো অধিকার নেই নির্বাচক কমিটির মিটিংয়ে আসার। সত্যি দূর্ভাগ্য এটা।’
সর্বপ্রথম টুইট বার্তায় এই ব্যাপারে জানান দেন ভারতের একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি টুইট বার্তায় লিখেন, ‘বিসিসিআই কর্মকর্তাদের কেউ একজন বেশ কিছু সময় ধরেই নির্বাচক কমিটির বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন।’
এরপরই ধীরে ধীরে সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে বোর্ড সম্পর্কিত অনেকেই নাম গোপন রেখে এ ব্যাপারে মুখ খোলে। পরবর্তীতে ভারতীয় ক্রীড়া সাংবাদিকদের একাংশের তথ্যমতে জানা যায় বিসিসিআই’র সেই কর্মকর্তা বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি – যিনি নির্বাচক কমিটির মিটিংয়ে বেশ কয়েকবার হস্তক্ষেপ করেছেন।
বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী কোনো বোর্ড প্রেসিডেন্টই নির্বাচক কমিটির কোনো মিটিংয়ে থাকতে পারবেন না এমনকি দল নির্বাচনেও হস্তক্ষেপও করতে পারবে না! দল নির্বাচনের অধিকার শুধুমাত্র নির্বাচক কমিটির। এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদের সিদ্ধান্তই সর্বশেষ বলে গণ্য করা হয়ে থাকে।
সম্প্রতি বিসিসিআইর পোস্ট করা এক টুইটে দেখা যায় নির্বাচক কমিটির সাথে মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সৌরভ। এরপরই রীতিমতো হৈচৈ ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে। একই সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পর এটি স্পষ্ট যে সৌরভ গাঙ্গুলি নির্বাচক কমিটির মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন।
ক্রিকেট ভক্তদের অনেকের দাবি সৌরভের কারণেই বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেট একটা ঘোলাটে পরিস্থিতির মাঝে দাঁড়িয়ে। এছাড়া অনেকেই এর পেছনে বিসিসিআই সেক্রেটারী জয় শাহকে দায়ী করছেন। এদিকে চলতি বছরই শেষ হবে সৌরভ গাঙ্গুলি ও সেক্রেটারি জয় শাহের মেয়াদ।
সবশেষ বিরাট কোহলির সাথে কথার দ্বন্দ্বের পর সৌরভকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনায় মেতে উঠেন ভারতীয় সমর্থথরা। এমনকি তাদের মতে বিরাটের টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়া পেছনেও দায়ী সৌরভ। এই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন ভারতের বর্তমান এই বোর্ড সভাপতি। নিয়ম ভঙ্গ করে নির্বাচক কমিটিতে হস্তক্ষেপ করায় ভারতীয় ক্রিকেটে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। অবশ্য এ ব্যাপারে কিছুই জানাননি সৌরভ। মেয়াদের একদম শেষ সময়ে এসে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না প্রিন্স অব কলকাতার!