ভাঙা চোয়াল ও ‘প্রায়’ খোয়ানো চাকরি

২০০২ সালের ভারতের ক্যারিবীয় সফরের চতুর্থ টেস্ট ম্যাচ, অ্যান্টিগার বিখ্যাত রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ডে। প্রথম ইনিংসে ভারত পঞ্চম উইকেট হারালো ২৩৫ রানে। ব্যাটিং অর্ডার অনুযায়ী ব্যাট করতে নামার কথা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অজয় রাত্রার। কিন্তু অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি সাত নম্বরে পাঠালেন অনিল কুম্বলেকে।

শুরু থেকেই কুম্বলেকে বাউন্সারে পর্যুদস্ত করার পরিকল্পনা এঁটেছিলেন ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার মারভিন ডিলন। ডিলনের একটা বাউন্সার গিয়ে লাগলো কুম্বলের বাঁ চোয়ালের খানিকটা নিচে।

মাঠে এলেন ফিজিও অ্যান্ড্রু লিপাস। কুম্বলে থুতু ফেললেন, রক্ত বেরোল। কিন্তু তিনি হেলমেটটা ফের পরলেন, ক্রিজে ফেরত গেলেন।

ডিলন অবশ্য তার পরিকল্পনামাফিকই এগোলেন। ক্রমাগত খাটো লেন্থের বল করতে থাকলেন এবং শেষমেশ কুম্বলেকে আউট করেই ছাড়লেন।

আট নম্বরে নেমে অজয় রাত্রা করলেন সেঞ্চুরি। ভিভিএস লক্ষ্মণ আর রাত্রার শতকে ভর করে ভারত ইনিংস ঘোষণা করলো ৯ উইকেটে ৫১৩ রানে।

গৌতম ভিমানি সেবার প্রথমবার ধারাভাষ্য দিতে গেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। স্যার ভিভ রিচার্ডসের সাথে উড়ন্ত চপারে বসে এক সেশন ধারাভাষ্য দেবার সৌভাগ্যও হয়েছিলো তার। অজয় রাত্রার সেঞ্চুরির ধারাভাষ্য দিয়েছেন চপারে বসেই।

যাহোক, ভিমানিকে এবার প্রযোজক পাঠালেন কুম্বলের ব্যাপারে জানার জন্য। অ্যান্ড্রু লিপাসের সাক্ষাৎকার টেপে ধারণ করে নিয়ে আসলেন ভিমানি, যার সারমর্ম ছিলো এরকম – কুম্বলে এই ম্যাচে আর অংশ নিচ্ছেন না। তার সার্জারি প্রয়োজন। কালই ভারতে উড়ে যাচ্ছেন।

ভিমানি ধারাভাষ্যকক্ষে এলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের সময়। প্রযোজককে বললেন, ‘স্কুপ পেয়ে গেছি। কুম্বলে এই ম্যাচে আর খেলছেন না।’

প্রযোজক টেপটা সরিয়ে রেখে ভিমানিকে বললেন, ‘মাঠের দিকে তাকাও।’

অবিশ্বাস্য দৃশ্য! কুম্বলে চোয়ালে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় ফিল্ডিংয়ে নেমে গিয়েছেন। অ্যান্ড্রু লিপাস পরে বলেছিলেন, ‘আমি কঠিন চোট নিয়ে খেলোয়াড়দের খেলতে দেখেছি, কিন্তু কুম্বলের মতো আর কাউকে দেখিনি।’

প্রথম ওভার বল করার সময় কুম্বলে ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। আম্পায়ার ডেভিড শেফার্ড তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘তোমার জন্যে চিন্তা হচ্ছে।’ কুম্বলে বললেন, ‘চিন্তা করো না, আমি বল করতে পারবো।’ শেফার্ড এবার বললেন, ‘আমি জানি তুমি বল করতে পারবে, কিন্তু আপিল করে বসো না যেন।’

কুম্বলেকে এহেন অবস্থায় বোলিং করতে দেখে হকচকিয়ে গেছিলেন ব্রায়ান লারা। তাইতো কিছুক্ষণ পরই কুম্বলের বলে লেগ বিফোর হয়ে ফিরেন যান তিনি।

ভাঙা চোয়াল নিয়ে কুম্বলের বোলিং বিশ্লেষণ ছিলো ১৪-৫-২৯-১।

সেই ইনিংসে ভারতের ১১ জন খেলোয়াড়ই বল করেছিলেন। ভারতের ৯ উইকেটে ৫১৩ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪৮ ওভার ব্যাট করে তোলে ৯ উইকেটে ৬২৯। ম্যাচের ফলাফল ছিলো নিষ্প্রাণ ড্র।

গৌতম ভিমানি পরবর্তীতে অনিল কুম্বলেকে বলেছিলেন, ‘তুমি ভাঙা চোয়াল নিয়ে বোলিং করতে এসে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলে ঠিকই, কিন্তু তার জন্য আমার চাকরিটা প্রায় চলে গেছিলো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link