ভারতে ‘খাবি খাওয়া’ একাদশ

ভারত ক্রিকেট দুনিয়ায় অন্যতম পরাক্রমশালী এক দেশ এটা মেনে নিতে নিশ্চয়ই দ্বিধা হওয়ার কথা নয়। আর সেই ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতেই ম্যাচ জেতা কিংবা সিরিজ জেতা ঠিক কতটা কষ্টকর তা নজির তো কম নেই। ক্রিকেটের খোঁজ-খবর রাখা প্রতিটা মানুষই হয়ত ক্রিকেট ময়দানে ভারতের নিজস্ব দূর্গ সম্পর্কে জানেন। উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোর জন্য প্রায় অভেদ্য এক দূর্গ।

ভারত ক্রিকেট দুনিয়ায় অন্যতম পরাক্রমশালী এক দেশ এটা মেনে নিতে নিশ্চয়ই দ্বিধা হওয়ার কথা নয়। আর সেই ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতেই ম্যাচ জেতা কিংবা সিরিজ জেতা ঠিক কতটা কষ্টকর তার নজির তো কম নেই। ক্রিকেটের খোঁজ-খবর রাখা প্রতিটা মানুষই হয়ত ক্রিকেট ময়দানে ভারতের নিজস্ব দূর্গ সম্পর্কে জানেন। উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোর জন্য প্রায় অভেদ্য এক দূর্গ।

কত মহারথী ক্রিকেটাররা এখানে এসে যে খাবি খেয়েছেন তাঁর ইয়ত্তা নেই। পরাশক্তি দলগুলোও তাঁদের স্বর্ণালী সময়ে এসেও  নাকানি-চুবানি খেয়ে গেছে ভারতের মাটিতে। ভারতের মাটিতে পারফর্ম করাটা যেন বিশাল বড় অর্জন। তবে বিশ্বক্রিকেটে ভুড়িভুড়ি অর্জন থাকা অনেকেই ভারতের মাটিতে ছিলেন নিস্তেজ। উপমহাদেশের বাইরের সে সব খেলোয়াড়দের নিয়ে রীতিমত একটা একাদশ সাজিয়ে ফেলা যায়। আজকের আয়োজনে থাকছে সাদা পোশাকে ভারতের মাটিতে হিমশিম খাওয়া খেলোয়াড়দের একাদশ যাদের সবাই উপমহাদেশের বাইরের।

  • জাস্টিন ল্যাঙ্গার (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ওপেনার জাস্টিন ল্যাঙ্গার। যার নামের পাশে রয়েছে ৭৬৯৬ টেস্ট রান। যিনি কিনা তাঁর ক্যারিয়ার জুড়ে রান তুলে গেছেন ৪৫ এর একটু বেশি গড়ে। সে জাস্টিন ল্যাঙ্গার ভারতের মাটিতে খেলেছেন সাত টেস্ট। সেই সাত ম্যাচে তাঁর গড় মোটে ২৯.৯২। আর রান করেছেন মাত্র ৩৮৯। তিনটি হাফ-সেঞ্চুরি থাকলেও নেই কোন সেঞ্চুরি।

  • ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)

৩৩৫ রানে অপরাজিত থাকার কীর্তি গড়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। খেলাটা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। হয়ত ভারতের মাটিতে নিজের পরিসংখ্যানটার একটু উন্নতি করে যেতে পারবেন। তবে এখন অবধি ভারতের মাটিতে তাঁর পরিসংখ্যানটা ওয়ার্নারের নামের সাথে বড্ড বেমানান। আট টেস্ট খেলে তিনি ২৪.২৫ গড়ে রান করেছেন কেবল ৩৮৮। তিনিও তিনটি হাফ-সেঞ্চুরি নিয়ে রয়েছেন সন্তুষ্ট।

  • ব্রায়ান লারা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

এক ইনিংসে চারশো রান করার মত অনন্য এক রেকর্ডের মালিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো বটেই পুরো বিশ্বক্রিকেটের কিংবদন্তি ব্যাটার ব্রায়ান লারাও খাবি খেয়েছেন ভারতের মাটিতে। যেখানে তিনি তাঁর পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে রান করেছেন ৫২.৮৮ গড়কে নিয়ম বানিয়ে। সেই লারার গড় ভারতের মাটিতে মাত্র ৩৩। তিন ম্যাচে দুই হাফ-সেঞ্চুরির বদৌলতে করেছেন মাত্র ১৯৮ রান।

  • রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে অন্যতম সেরা অধিনায়ক ও ব্যাটারদের একজন নিঃসন্দেহে রিকি পন্টিং। তিনি দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশপাশি দলে মিডল অর্ডারও সামলেছেন ব্যাট হাতে। তবে ভারতের মাটিতে ব্যাট হাতে খুব একটা সফলতা তাঁর কাছে এসে ধরা দেয়নি। তিনি ১৪ ম্যাচ খেলে একটি সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। সেই সাথে ২৬.৪৮ গড়ে রান করেছেন ৬৬২। ও হ্যাঁ, আজকের একাদশের অধিনায়কও তিনিই।

  • রস টেলর (নিউজিল্যান্ড)

কিছুদিন আগেই সব ধরণের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ব্যাটার রস টেলর। ব্যাক্লক্যাপসদের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম স্তম্ভ রস টেলর তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে জড়ো করেছেন ৭৬৮৩ রান। ৪৪.৬৬ গড় তিনি বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। তবে ভারতের মাটিতে তা আর করা হয়ে ওঠেনি। সেখানটায় তাঁর গড় গিয়ে ঠেকে ২১.১৫এ। ১০ ম্যাচ খেলে সমান একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ- সেঞ্চুরির সহয়তায় তিনি করেছেন মাত্র ৪০২ রান।

  • ইয়ান বেল (ইংল্যান্ড)

ইংল্যান্ডের হয়ে ১১৮টি ম্যাচ খেলেছেন ইয়ান বেল। প্রায় আট হাজারের কাছাকাছি রান করেছেন বেল ৪২.৬৯ গড়ে। তবে এই তালিকায় থাকা বাকিদের মতই তিনি ভারতের মাটিতে হয়েছেন নাস্তানাবুদ। এখানটায় তাঁর গড় আহামরি খারাপ না হলেও তা বেশ কম। প্রায় ৩৮ গড়ে তিনি রান করেছেন ভারতের মাটিতে। আট ম্যাচে ৩৫২ রান করেছেন তিনি। একটা করে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন ইয়ান বেল।

  • অ্যালেক স্টুয়ার্ট (ইংল্যান্ড)

উইকেট রক্ষক ব্যাটার অ্যালেক স্টুয়ার্ট আজকের একাদশেও থাকছেন উইকেটের পেছনের দায়িত্বে। প্রায় সাড়ে আট হাজার রান তিনি করেছেন ইংলিশ ব্যাটার হিসেবে। ৪০ এর কাছাকাছি একটা গড়ে তিনি এই রানের পাহাড় গড়েছেন। ভারতের মাটি অবশ্য তাঁকে এই রানের পাহাড় গড়তে খুব একটা সাহায্য করেনি। এখানে খেলা তিন টেস্টে তাঁর গড় ২৪.৩৩। রান করেছেন মোটে ১৪৬।

  • শেন ওয়ার্ন (অস্ট্রেলিয়া) 

বোলারদের রোল মডেল। ঘূর্ণি জাদুকর শেন ওয়ার্ন উপমহাদেশের বাইরের উইকেটে ব্যাটারদের নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন। অথচ ভারতের মত স্পিন সহায়ক উইকেটে তিনি কার্যত কার্যকরী স্পিন বিষ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হন। যেখানে তাঁর ক্যারিয়ারের বোলিং গড় ২৫.৪১ সেখানে ভারতের মাটিতে ভিন্ন চিত্র। ভারতে তিনি নয় ম্যাচে প্রায় ৪৩ গড়ে উইকেট নিয়েছেন কেবলমাত্র ৩৪টি। স্পিন সহায়ক উইকেট হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র একবার তিনি ফাইফার নিতে সক্ষম হয়েছেন।

  • ব্রেট লি (অস্ট্রেলিয়া)

বাইশ গজে গতির ঝড় তোলা কিংবদন্তি ব্রেট লি, যার পকেটে রয়েছে ৩১০টি টেস্ট উইকেট। যিনি কিনা নিয়ম করে ৩০.৮১ গড়ে উইকেট শিকার করেছেন তাঁর ক্যারিয়ার জুড়েই। সে ব্রেট লির ভারতের মাটিতে গড় ৬১.৬২। কতটা দৃষ্টিকটু এক বিষয়। তাছাড়া চার ম্যাচ খেলে কেবলমাত্র আটটি উইকেটই তিনি নিয়ে যেতে পেরেছেন ভারত থেকে।

  • মিশেল জনসন (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণকে নেতৃত্ব দেওয়া আরও একজন কিংবদন্তি হচ্ছেন মিচেল জনসন। বাঁ-হাতি এই পেসার ছিলেন ব্যাটারদের ভয়ের কারণ। ৩১৩ খানা উইকেট শিকার তো আর তিনি এমনি এমনি করেন নি। সুইং আর গতির মিশ্রণে ২৮.৪০ গড়ে উইকেট নেওয়া জনসন ভারতের মাটিতে বড্ড ফিকে। ৪০.০৯ গড়ে নিয়েছেন মাত্র ২১ উইকেট।

  • স্টুয়ার্ড ব্রড (ইংল্যান্ড)

টেস্টে ক্রিকেট ৫৩৭টি উইকেট রয়েছে স্টুয়ার্ড ব্রডের ঝুলিতে। লাল বলের ক্রিকেটে তিনি লম্বা সময় ধরে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন ইংল্যান্ড ক্রিকেট। এ সময়ে তিনি এখন অবধি ২৭.৮০ গড়ে উইকেট নিয়েছেন নিয়মিত। তবে ভারতের মাটিতে দৃশ্যপটে আমুল পরিবর্তন। ৬১.৭০ গড় এখানটায়। উইকেট মাত্র আট ম্যাচে দশটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link