ওপেনার কিংবা ফিনিশারদের মত আলোচনা হয় না পাঁচ নম্বর পজিশন নিয়ে। তবে ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় সবচেয়ে ভার্সেটাইল হতে হয় পাঁচ নম্বর ব্যাটারকে। যেকোনো দলের জন্য এই পজিশনে সেরা ব্যাটারদের খেলানোটা গুরুত্বপূর্ণ। আর আজকের আয়োজন তাঁদের নিয়েই যারা সাদা পোশাক জড়িয়ে এই পজিশনে নিজের সেরাটা দিয়েছেন।
- শিবনারায়ণ চন্দরপল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
পাঁচ নম্বরে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটার বলা যায় শিবনারায়ণ চন্দরপলকে। এই পজিশনে ব্যাট করে ৬৮৮৩ রান করেছেন তিনি, আর তাঁর ব্যাটিং গড় ৫৬.৪১। ঘরের মাঠে কিংবা বিদেশে সমানতালে পারফরম করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এককথায় ক্যারিবীয় মিডল অর্ডারের স্তম্ভ হয়ে ছিলেন এই ব্যাটার।
- স্টিভ ওয়াহ (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার অজেয় হয়ে উঠার পিছনে মহাগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল স্টিভ ওয়াহর। অজি ব্যাটিং লাইনআপে দৃঢ়তা নিয়ে এসেছিলেন তিনি, এবং একমাত্র ব্যাটার হিসেবে একশর বেশি টেস্ট খেলেছিলেন পাঁচ নম্বরে। ১৪২ ইনিংসের মধ্যে ৫৩ বারই পঞ্চাশ রানের গন্ডি পেরিয়েছিলেন এই তারকা। মজার ব্যাপার, দেশের চেয়ে বিদেশেই তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা বেশি। তিনি আসলে ট্যাকটিক্সের চেয়ে রান করার দিকে বেশি মনোযোগী থাকতেন।
- মাইকেল ক্লার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
ঘরের মাঠে পাঁচ নম্বর ব্যাটার হিসেবে মাইকেল ক্লার্কের ব্যাটিং গড় ৮৪.৫! সংখ্যাটা অবিশ্বাস্য, ক্যারিয়ার জুড়ে ক্লার্ক এমন অবিশ্বাস জাগানিয়া অনেক ইনিংস খেলেছেন। দেশের বাইরেও তাঁর পরিসংখ্যান ঈর্ষনীয়; অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য একজন। কিন্তু একটা সময় হুট করে চার নম্বরে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন এই ডানহাতি, যা কি না পরবর্তীতে ভুল প্রমাণিত হয়েছিল।
- এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)
সেরা ব্যাটারদের নিয়ে আলোচনা হবে আর এবি ডি ভিলিয়ার্স সেখানে থাকবেন না তা বোধহয় সম্ভব নয়। সাদা বলে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য বিখ্যাত হলেও টেস্ট ফরম্যাটেও সফলতম তিনি। পাঁচ নম্বরে তাঁর মোট অর্জন ৩৫৭৪ রান, সেটাও প্রায় ৬৪ গড়ে। হোম এবং অ্যাওয়ে দুই ক্ষেত্রেই ৬০ এর বেশি গড় ধরে রাখা মোটেই সহজ নয়, ভিলিয়ার্স কঠিন কাজটা অনায়াসে করেছেন। তিনি তো এমনই, কত কঠিন কাজ চোখের পলকে করে ফেলেন।
- অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার (জিম্বাবুয়ে)
ছোট দেশের বড় তারকা, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে এতটুকু দিয়ে সংজ্ঞায়িত করলে ভুল হবে। তিনি তো দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তি বনে গিয়েছেন। ৫৫ ছুঁই ছুঁই গড় নিয়ে ইতিহাসের অন্যতম সেরা পাঁচ নম্বর ব্যাটারের জায়গা পেয়েছেন এই বাঁ-হাতি। তাঁর বড় ইনিংস অবশ্য খুব বেশি নেই, সতীর্থদের ব্যর্থতা যে দায়ী সেটা আর বলতে হবে না। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মত পরাশক্তির হয়ে খেললে তিনি নিশ্চয়ই আরো বেশি অর্জন করতে পারতেন।
- গ্রাহাম থর্প (ইংল্যান্ড)
গ্রাহাম থর্পের সময় ইংল্যান্ডের অবস্থা ছিল শোচনীয়, অ্যাশেজে ধারাবাহিকভাবে লজ্জার স্বাদ পেতে হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু থর্প ছিলেন উজ্জ্বল, বাকিদের ব্যর্থতার মাঝেও তাঁর ব্যাটে রান এসেছিল ফোয়ারার মত। রক্ষণ বা আক্রমণ দু’দিকেই পারদর্শিতা ছিল এই তারকার; পরিসংখ্যান আর ব্যাটিং শৈলির কারণে এখনও ইংলিশ ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার ভাবা হয় তাঁকে।
- মোহাম্মদ ইউসুফ (পাকিস্তান)
নান্দনিক আর স্নিগ্ধ – মোহাম্মদ ইউসুফের ব্যাটিং দেখলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া করার কিছু ছিল না। ঘরের মাটিতে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে তিনি রান করেছিলেন ৬৩ গড়ে, বিদেশের মাটিতে সংখ্যাটা ৪৯! অথচ তাঁকে বারবার বাদ দেয়া হয়েছে দল থেকে, বারবার প্রত্যাবর্তনের চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছিল। এগারো টেস্টে নয় সেঞ্চুরির রেকর্ডের জন্য বহুদিন মনে রাখতে হবে ইউসুফকে, টেস্ট ক্যারিয়ার আরো স্থায়ী হলে হয়তো এমন অনেক রেকর্ড দেখা যেত।
- মিসবাহ উল হক (পাকিস্তান)
মোহাম্মদ ইউসুফের পর কেউই ইউসুফ হয়ে আসেননি তবে মিসবাহ উল হক নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছেন। পাঁচ নম্বরে ৫৩ গড় এবং সাড়ে তিন হাজারের বেশি রান সেই চেষ্টার সাক্ষী। বছরের পর বছর পাকিস্তানের ভঙ্গুর মিডল অর্ডারে নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে ছিলেন তিনি; লড়াই করেছিলেন একাকী।
- থিলান সামারাভিরা (শ্রীলঙ্কা)
পাকিস্তানের সেই কুখ্যাত বোমা হামলা ছাপ রেখে গিয়েছিল তিলান সামারাভিরার জীবনে। তবে তাঁকে শুধু সেই কারণে মনে রাখলে অন্যায় হবে। উইকেট কিভাবে ধরে রাখতে হয় সেটা তাঁর চেয়ে ভাল কম ব্যাটারই জানতেন। বিপর্যয়ের মধ্যে ঠান্ডা মাথায় দলের হাল ধরে রাখতে পারতেন তিনি – পাঁচ নম্বরে এই ব্যাটার প্রায় চার হাজার রান করেছেন, যদিও সংখ্যার চেয়ে তাঁর ইম্প্যাক্ট বেশি ছিল।
- মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন
ক্যারিয়ারের প্রথম তিন টেস্টে তিন সেঞ্চুরি, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের জন্য ইতিহাসের পাতায় একটা অধ্যায় সবসময়ই থাকবে। তবে টানা তিন সেঞ্চুরি হাঁকানো ছাড়াও ক্যারিয়ার জুড়ে পারফরম করে গিয়েছেন তিনি। পাঁচ নম্বরের জন্য আদর্শ ব্যাটার ছিলেন এই কিংবদন্তি; হাফসেঞ্চুরির চেয়ে সেঞ্চুরি বেশি হাঁকিয়েছেন তিনি। এ পজিশনে ৪৩৪৬ রান করলেও সেটা দিয়ে তাঁর সামর্থ্য পুরোপুরি মূল্যায়ন করা যাবে না।