হান্নানের স্বপ্ন আজও দেশের জন্যই

‘হান্নান সরকার রেইজেস হিজ ব্যাট আফটার রিচিং ফিফটি এগেইনস্ট শ্রীলঙ্কা’ -অভিষেক টেস্টেই শ্রীলঙ্কার সেই ভয়ংকর বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করার পর পত্রিকাগুলো এভাবেই শিরোনাম করেছিল তাঁকে নিয়ে। সেদিনেরই একটি ছবি, আর এই শব্দগুলো এখনো শোভা পায় হান্নান সরকারের ড্রয়িং রুমের দেয়ালে।

তখন এই ওপেনিং ব্যাটারের বয়স ছিল মাত্র বিশ বছর। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বিদেশের মাটিতে স্বপ্নের মত শুরু। তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাও শুরু হলও তখন থেকেই। হান্নান সরকারও যেন সেই পথেই হাটতে শুরু করলেন।

সাউথ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মত কঠিন কন্ডিশনগুলোতে নিয়মিত পারফর্ম করেছেন। সতেরো টেস্টের সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারে যে পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তাঁর চারটিই এসেছে বিদেশের মাটিতে। সেই সময়ের পুচকে বাংলাদেশের বড় পারফর্মার হয়ে উঠলেন তিনি। এমনকি টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অধিনায়ক হবেন হান্নান সরকার, এমন একটা আলোচনাও ছিল। তবে এরপরই হঠাৎ সবকিছু থমকে গেল।

২০০৪ সালেই শেষ হয়ে গেল তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। যার ব্যাপ্তি মাত্র দুই বছর। ২২ বছর বয়সেই থেমে যেতে হল তাঁকে, খেলে ফেললেন নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এত অল্প বয়সে বাদ পড়ার পর আর কখনোই জাতীয় দলে ফেরা হয়নি তাঁর। ক্রিকেটটা ছাড়ার সময়ও বুঝি এই আক্ষেপটা কাজ করেছিল তাঁর মনে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবার জন্য বাইশ বছর যে বড্ড কম বয়স।

এতদ্রুত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ার থেমে যাওয়ার আক্ষেপ নিয়েই হান্নান সরকার বলছিলেন, ‘আমি কিন্তু বাদ পড়ার আগে শেষ দশ ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান করেছিলাম। তবে টেস্ট ক্রিকেটে ভালো হচ্ছিল না। এখন যেমন ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাট নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়। তখন এমন করা হতো না। আমার আক্ষেপটা এখানেই।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে মোট ১৭ টি টেস্ট ও ২০ টি ওয়ানডে খেলেছেন এই ব্যাটার। টেস্টে পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরির পাশপাশি ওয়ানডে ফরম্যাটে আছে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি। সেই সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ওপেনারে পরিণত হয়েছিলেন হান্নান সরকার।

 

তবে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটকেও দ্রুতই বিদায় বলেছিলেন এই ক্রিকেটার। একজন ব্যাটার যখন পরিণত হন তখনই ক্রিকেটটা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। ২০১০ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সেই বিদায় জানিয়েছেন সবধরনের ক্রিকেটকে।

এতদ্রুত ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ার কারণে হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে নিজের ওয়েট ধরে রেখেই খেলাটা ছেড়ে দিতে চেয়েছি। তখন খেলা চালিয়ে গেলে হয়তো কিছু টাকা পেতাম। তবে আমার মনে হচ্ছিল আর হচ্ছেনা। সেজন্য নিজের সম্মান রেখেই ছেড়ে দিয়েছি। আমি কেন কারো কাছে খেলার জন্য রিকুয়েস্ট করবো। আমি তো একজন টেস্ট ক্রিকেটার। সেজন্যই আমার কাছে টাকার থেকে নিজের সম্মানটা বড় ছিল।’

ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ার পর কোচিংটাতেই বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন তিনি। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এখন তাঁকে দিয়েছে নির্বাচকের দায়িত্ব। বয়সভিত্তিক দলগুলোর নির্বাচক হিসেবে এই মুহূর্তে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী আকবর আলী, তৌহিদ হৃদয়দের তিনিই খুঁজে বের করেছিলেন।

এবার তাঁর পরিকল্পনা ২০২৪ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে। এই দলটার সাথেও কাজ করছেন তিনি। পাকিস্তানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে আসা এই যুব দলটার ম্যানেজার হিসেবে ছিলেন হান্নান সরকার। এই ছেলেদের সাফল্যেই নিজের ক্যারিয়ারের আক্ষেপগুলো ঘুচাতে চান তিনি।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link