আনন্দের কান্না ভাল

ভেবেছিলাম, অল কোয়ায়েট অন দ্য ফ্রন্ট। রাত চলে গেছে, ভুভুজেলার শব্দ থেমে গেছে। এখন সব শান্ত। ধীরে সুস্থে টু স্টার জার্সিটা পরেই অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলাম।

আমাদের গলিতে একটা বাক-প্রতিবন্ধী ছেলে আছে। ওর মা বিভিন্ন বাসায় কাজ করেন। আর ছেলেটা সারাদিন গলির মধ্যে খেলে বেড়ায়। আজ কোত্থেকে একটা আর্জেন্টিনার জার্সি জোগাড় করে ফেলেছে।

আমি বাসা থেকে বের হতেই ‘পাগল’ ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। ইশারায় বারবার বলে-জিতে গেছি, জিতে গেছি। আমার অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে। তারপরও বোবা মুখে তাঁর কথা ফুরোয় না। অনেক কষ্ট করে হাতের ইশারায় চোখ নাচিয়ে জানতে চাইল-খেলা দেখেছ?

আমার খেলা দেখা! সে এক বিরাট ইতিহাস। এবার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা দেখলাম টিভিতে। সৌদি আরবের কাছে হেরে গেলো ৩৬ ম্যাচ জিতে আসা, দুটো ইন্টারন্যাশনাল ট্রফি জিতে আসা আর্জেন্টিনা! সব মিথ্যে হয়ে গেল।

আমার বিশ্বাস টলে গেল। পরের ম্যাচটা তাই টিভিতে দেখার ইচ্ছে হল না। রাত ১টায় খেলা। সবার সাথে শুয়ে পড়লাম। মোবাইলে টফি চালু করে শুয়ে শুয়ে খেলা দেখলাম। আর্জেন্টিনা জিতল। কী যেন মনে হল। মনে হল, আমি টিভিতে খেলা না দেখলে আর্জেন্টিনা জিতবে।

এরপর সব ম্যাচ ওই শুয়ে শুয়ে মোবাইলে দেখেছি। টিভিতে আর খেলা দেখি না। আর্জেন্টিনাও জিতে চলে। কিন্তু ফাইনালে হল মুশকিল। সন্ধ্যা ৯টার সময় শুয়ে পড়ি কী বলে? বাসায়ও বোঝাতে পারি না। কিন্তু আমার তো টিভিতে খেলা দেখলে চলবে না।

ফলে খেলা শুরু হতেই চলে গেলাম পাশের রুমে। কম্পিউটারে টুকটাক করি। গোল হয় কি না কান পেতে রই। প্রবল আওয়াজে বুঝলাম গোল হয়ে গেছে। মেসি পেনাল্টি থেকে গোল করেছেন। এবার টিভির সামনে এসে বসলাম। একটু পর ডি মারিয়ার অবিশ্বাস্য সেই গোল!

আর ভয় নেই। আনন্দে একটা লেখা রেডি করতে শুরু করলাম। লেখাটা কিছুতেই আগে লেখা ঠিক হয়নি। ওই লেখা শেষ হতে না হতেই এমবাপ্পে দু মিনিটের ঝড়ে সব স্তব্দ করে দিলেন। আমি হতভম্ব-এখন কী করবো?

তাড়াতাড়ি সবাইকে বললাম, টিভি বন্ধ। বাঁচতে হলে এখন শুয়ে পড়া ছাড়া উপায় নেই। ছেলে একটু মন খারাপ করছিল। তারপরও সবাই শুয়ে পড়লাম। আমি মোবাইল চালু করলাম। মেসির গোল। আবার উঠে এলাম; টিভি চললো। মুহুর্তে ফ্রান্সের পেনাল্টি; এমবাপ্পের হ্যাটট্রিক! লাউতারোর তিনটে মিস।

আমি চললাম ব্যালকনিতে। আর ফিরে তাকালাম না। শেষ চিৎকারের অপেক্ষায় রইলাম। চিৎকার করতে করতে পেনাল্টি জয়ের খবর নিয়ে রুমে ঢুকলাম। আমি তখন হাউ মাউ করে কাঁদছি।

ছেলে অবাক হয়ে বললো, ‘কাঁদো কেনো বাবা?’ আমি বললাম, ‘আনন্দে।’ ‘তাহলে বেশি করে কাঁদো বাবা। আনন্দের কান্না ভাল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link