বড় ভাই হার্দিক পান্ডিয়া ধাতব কয়েনটা ওপরে ছুঁড়লেন। আর টসে জিতলেন ছোট ভাই ক্রুনাল পান্ডিয়া। এতেই হয়েছে ইতিহাস। আইপিএলের ১৬ বছরের যাত্রায় এটিই প্রথম ঘটনা, যেখানে দুই দলের নেতৃত্বে ছিলেন দুই আপন ভাই!
গুজরাট টাইটান্সের শুরুর সময় থেকেই অধিনায়ক ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। আর ইনজুরির কারণে লখনৌর নিয়মিত অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ছিটকে যাওয়ায় চলতি আইপিএলের বাকি সময়ের জন্য অধিনায়কত্ব পেয়েছেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। ব্যাস। কাকতালীয়ভাবে, পরের ম্যাচেই এ দুই ভাইকে দেখা গেল দুই ভিন্ন দলের আর্মব্যান্ড হাতে, একই ম্যাচে!
অবশ্য আইপিএলের ইতিহাসে এটি প্রথম ঘটনা হলেও, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কিন্তু এর আগেও এরকম ঘটনার নজির রয়েছে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিগব্যাশ লিগে মাইক হাসি ও ডেভিড হাসি— দুই ভাই মাঠে নেমেছিলেন দুটি ভিন্ন দলের অধিনায়ক হিসেবে। বড় ভাই মাইক হাসি সেদিন সিডনি থান্ডারের নেতৃত্বে ছিলেন আর ছোট ভাই ডেভিড হাসি ছিলেন মেলবোর্ন স্টার্সের নেতৃত্বে।
মজার ব্যাপার হলো, সেবারের বিগব্যাশের ফাইনালেই আবারো মুখোমুখি হয়েছিল এ দুই ভাই। যথারীতি দুজনই ছিলেন দুই দলের নেতৃত্বে। ফাইনালের মঞ্চে দুই ভাইয়ের অধিনায়কত্ব— যা বিগব্যাশ তো বটেই, ক্রিকেট ইতিহাসেরই প্রথম নজির ছিল সেটি।
তো, দুই ভাইয়ের প্রতিপক্ষের ভূমিকায় আবর্তিত হওয়া সে লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছিল বড়ভাই মাইক হাসি। ডেভিড হাসির মেলবোর্ন স্টার্সকে ৩ উইকেটে হারিয়ে সেবার বিগব্যাশের শিরোপা জিতেছিল মাইক হাসির সিডনি থান্ডার।
অবশ্য দুই অধিনায়ক ভাইয়ের মুখোমুখি লড়াইয়ে প্রথমবারেও জিতেছিলেন মাইক হাসি। রাউন্ড রবিন লিগের সে ম্যাচে মেলবোর্ন স্টার্সকে ১ রানে হারিয়েছিল সিডনি থান্ডার। তবে ১ রানের সে পরাজয়ের হতাশা ডেভিড হাসিকে আরো বাড়িয়েছিল ব্যাট হাতে তাঁর শূন্য রানে ফেরার মুহূর্তে। ছোট ভাই শূন্য রানে ফিরলেও বড়ভাই অবশ্য সেদিন ১১ বলে করেছিলেন ১৬ রান।
যাহোক, মাইক হাসি-ডেভিড হাসির পর এ কীর্তিতে নাম লেখালেন হার্দিক পান্ডিয়া আর ক্রুনাল পান্ডিয়া। অবশ্য একটা সময় পর্যন্ত একই দলের হয়ে খেলতেন এ দুই ভাই। ২০১৫ সালে আইপিএলে মুম্বাইয় ইন্ডিয়ানসের হয়ে খেলার সুযোগ পান হার্দিক পান্ডিয়া। এর এক বছর পর মুম্বাই দলে নেয় ক্রুনাল পান্ডিয়াকে।
এরপর টানা ৫ টি আসর একসঙ্গে খেলেছেন এ দুই ভাই। ২০২২ সালে গুজরাট ও লখনৌ নামে দুটি দল যুক্ত হওয়ায় গত বছর থেকে দুই ভাইয়ের ঠিকানা হয় গুজরাট ও লখনৌতে। প্রতিপক্ষের ভূমিকায় এর মধ্যেই কয়েকটা ম্যাচ খেলা হয়েছে এ দুই ভাইয়ের। তবে অধিনায়ক হিসেবে এটাই প্রথম। আর এতেই দুই পান্ডিয়া ব্রাদার্স হয়ে গেলেন ইতিহাসের অংশ।
আইপিএল ইতিহাসে দুই অধিনায়ক ভাইয়ের প্রথম এ লড়াইয়ে জয়টা পেলেন অবশ্য বড়ভাই হার্দিক পান্ডিয়াই। গুজরাট টাইটান্সের ২২৭ রানের রানপাহাড় শেষ পর্যন্ত টপকাতে পারেনি ক্রুনাল পান্ডিয়ার লখনৌ সুপারজায়ান্টস। গুজরাটের কাছে ৫৬ রানে হেরেছে লখনৌ সুপারজায়ান্টস।
গুজরাটের হয়ে এ দিন ১৫ বলে ২৫ রানের ইনিংস খেলেন হার্দিক পান্ডিয়া। আর ক্রুনাল পান্ডিয়া ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।
কাকতালীয় ব্যাপার হলো, হাসি ব্রাদার্স আর পান্ডিয়া ব্রাদার্সের এমন বিরল ইতিহাসে অংশীদার হওয়ার ঘটনায় অদ্ভুত এক মিল রয়েছে। আজ থেকে ৭ বছর আগে, দুই অধিনায়ক ভাইয়ের প্রথম লড়াইয়ে যেমন ছোটভাই ডেভিড হাসি শূন্য রানে ফিরেছিলেন, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে এবার পান্ডিয়া ব্রাদার্সের কনিষ্ঠ ক্রুনাল পান্ডিয়াও ফিরে যান শূন্য রানে!
আরো জানিয়ে রাখা ভাল, অধিনায়ক ভাইদের এ লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত জয় পাননি কোনো ছোটভাই। না ডেভিড হাসি, না ক্রুনাল পান্ডিয়া। ভাইদের লড়াইয়ে জয়ের পুষ্পমাল্য তাই এখন পর্যন্ত বড় ভাইদের গলাতেই থাকছে।