ভারতের ‘আগলি ডাকলিঙ’

যতবার দমাবে ঠিক ততবার চির উন্নত মম শির চিৎকারে মাথা তুলে দাঁড়াবো। এই মন্ত্রেই যেন উজ্জীবিত ভারতের পেস বোলিং অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। কেউ তাঁকে দলের নেওয়ার পক্ষে না। ঠিক সেখান থেকে এখন তিনি তো ভারতের আগামী দিনের অধিনায়ক। তিনিই তো কাণ্ডারি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথাই চিন্তা করুন। সদ্যই একটা ইনজুরি কাটিয়ে উঠেছিলেন তিনি। বোলিংটা ঠিক তিনি করতে পারছিলেন না। ইনজুরিটা তো খুব গুরুতর। প্রশ্ন উঠলো, আদৌ কি হার্দিক একজন ব্যাটার হিসেবে দলে থাকার জন্য যোগ্য? তিনি অবশ্য ব্যাটে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেন। তবে ঠিক মনঃপূত হল না সে উত্তর। অগ্যতা তিনি অপেক্ষা করলেন। তিনি নিজেকে ভেঙে গড়লেন আবার নতুন করে।

নতুন উদ্যমে তিনি হাজির ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে। তাঁর বহুদিনের পুরনো দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ছেড়ে দিল। তিনি নতুন দল গুজরাট টাইটান্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলেন। তাঁকে দিয়ে দেওয়া হল অধিনায়কের ব্যাটনটা। তিনিই গুজরাটের প্রথম অধিনায়ক। তারপর তো পুরো ভারত দেখল হার্দিকের ম্যাজিক। ব্যাটে-বলে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রথমবার আইপিএলের মত বড় মঞ্চে তিনি অধিনায়ক।

আর প্রথমেই বাজিমাত। তিনি গুজরাটকে জিতিয়ে দিলেন। এরপর তো ভারতের অধিনায়ক বনে গেলেন। নিজের জায়গাটা ঠিক কি করে আদায় করে নিতে হয় সেটা তো ভালই জানা তাঁর। ভারতের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে হার্দিক পান্ডিয়া এমন এক চরিত্র যাকে দেখে ঠিক চোখ জুড়ায় না। তিনি বিরাট কোহলির মত সুদর্শন নন। সেটা ক্রিকেটের পরিভাষায় হোক কিংবা চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য়ে।

ভারতের ন্যাশনাল মিডিয়ায় তিনি বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। আর এখন তিনি সে মিডিয়ার মধ্যমণি। তাঁকে নিয়ে আলোচনা তো চলেছে গোটা আইপিএল জুড়ে। এরপর ভারতের অধিনায়ক হয়ে তিনখানা ম্যাচে শতভাগ জয়। তিনি যেন নিজেকে আর কখনোই আড়াল করতে চাইছেন না। তিনি চাইছেন একটা ধ্রুবতারা হয়ে রয়ে যেতে ।

তারই ধারাবাহিকতায় তিনি আবারও উজ্জ্বল এশিয়া কাপের মঞ্চে। যে বোলিংটা করতে না পারার জন্য হার্দিককে দল থেকে ছেটে ফেলার একটা বার্তা ভেসে বেড়াচ্ছিল ভারতের ক্রিকেট আকাশে। সেই বোলিং দিয়েই হার্দিক গুড়িয়ে দিলেন পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। প্রায় ১৪০ কিলো/ঘন্টায় তিনি বল করে দৃঢ় এক পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারের মধ্যভাগটাকে পুরে নিলেন নিজের পকেটে।

এশিয়া কাপের মঞ্চে ভারত-পাকিস্তানের মহারণ। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আগের দেখায় বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানের কাছে পাত্তাই পায়নি ভারত। প্রেক্ষাপটে বদলেছে সময় আর হার্দিক পান্ডিয়া। পাকিস্তানের ধস সামলে নেওয়ার জন্যে একপ্রান্তে বেশ ধিরে ব্যাট করছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। সে রিজওয়ান, যে ভারতকে দশ উইকেটের একটা লজ্জাজনক হার উপহারে সহয়তা করেছিল। সে রিজওয়ানকেও এদিন সাজঘরে ফেরান হার্দিক।

তবে প্রথম উইকেট হিসেবে তিনি শিকার করেছিলেন ইফতেখার আহমেদের উইকেট। এরপর এক ওভারেই তিনি তুলে নেন রিজওয়ান ও খুশদিল শাহের উইকেট। পাকিস্তানের আরও একবার জয়ের হাতছানিটা একা হাতেই টেনে বহুদূরে নিয়ে যান হার্দিক পান্ডিয়া। তিনি প্রমাণ করলেন, হারিয়ে যাওয়ার কোন রকম ইচ্ছেই তাঁর নেই।

বছর খানেক আগের শত বঞ্চনা আর তিক্ত অভিজ্ঞতার আগুনে পুড়ে ক্রমশ এক পরশ পাথরে পরিণত হচ্ছেন। হার্দিক এখন আর বাড়তি কথায় কালক্ষেপন করতে চাননা। সময় তাঁকে করেছে সংযত, সময় তাঁকে বুঝিয়েছে সুসময়ের মানে। তিনি জানেন নিজের সেরা ছন্দ তাঁকে করে দিতে পারে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। সে পথেই হয়ত থাকতে চাইবেন। কক্ষচ্যুত হওয়ার পরিকল্পনা নেই।

হার্দিকের গল্পটা অনেকটা শৈশবে পড়া সেই আগলি ডাকলিঙ গল্পটার মত। প্রথম দেখায় আপনি তাঁকে ‍ভুল বুঝতে পারেন। কিন্তু, নিজের দিনে কাজটা তিনি ঠিকই করতে পারেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link