বিপদে মোরে রক্ষা করো…

২০১৭ সাল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের ছুঁড়ে দেয়া ৩৩৭ রান তাড়া করতে নেমে ভারতের শক্তিশালী টপ অর্ডার ফিরে গেছে দ্রুত। বাকিরাও পাকিস্তানি পেসারদের দৌরাত্ম্যে দ্রতই ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে।

একজন ঘুরে দাঁড়ালেন, অমন পাহাড়সম চাপেও তাঁকে লাগছিল স্বভাবসুলভ নির্ভার। একের পর এক ছয় দর্শকদের টিকিট যেমন উসুল করছিল, ভ্রু কুঁচকে দিচ্ছিল সরফরাজেরও। যেভাবে খেলছিলেন, অপরপ্রান্তে কেউ যোগ্যসঙ্গ দিতে পারলে স্কোরকার্ডটা ভিন্ন ফলাফল বললেও বলতে পারতো।

আন্তর্জাতিক ঘরানায় হার্দিক পান্ডিয়ার ভালোরকম পরিচয় পেল সবাই ওই ইনিংস দিয়েই।

অনেকদিন কেউ আক্ষেপ মেটাতে পারেনি। এরআগে ইরফান পাঠান আশা দেখিয়েছিলেন। তিনিও হারিয়ে গেছেন। কপিল দেবের পর ভারত আর জেনুইন পেস অলরাউন্ডার পায়নি, যে দুইদিকে সমানতালে ব্যাকআপ দিতে পারবেন। হার্দিক পান্ডিয়া কি সেই আক্ষেপই মেটাতে চলেছেন? নাকি করতে চলেছেন এরচেয়েও বেশি কিছু?

ব্যাটিংয়ে ক্লাসিক সৌন্দর্য্য নেই। হাতে অনেক হিট, স্পিনার সামনে পেলে হামলে পড়েন যেন, পেসেও বাউন্ডারি বের করেন খারাপ না, সিঙ্গেল বের করতে পারেন মোটামুটি, মোদ্দাকথা প্রয়োজনে কিছু রান এনে দেন। মোটামুটি সামর্থ্যের ব্যাটসম্যান বলা চলে। তাঁর শক্তি তাঁর সাহসে তাঁর মানসিকতায়। ব্যাট হাতে স্টিভ স্মিথ কিংবা বোলিংয়ে মিশেল স্টার্ক। ১০০ এর আগে পাঁচ উইকেট নাই কিংবা প্রতিপক্ষের শেষ ৩ বলে ২ রান লাগে। পান্ডিয়ার এসব দেখতে বয়েই গেছে! আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর এই বাজির ঘোড়ার সামনে মাথা নত করে দক্ষতার হিসাব।

ধোনির অবসরের পর হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। অবশ্য আশংকা আগেই শুরু হয়ে গেছিল। যে ব্যাটনটা প্রথম টেস্টে হাতে তুলে পথ দেখিয়েছিলেন লক্ষণ, ওয়ানডেতে সেই ভূমিকায় এলেন মোহাম্মদ কাইফ। সময় পরিক্রমায় এই জায়গাটায় নিজেকে রীতিমত কিংবদন্তি করে তুলেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। দ্য ক্রাইসিস ম্যান! নম্বর ছয়!

টপ অর্ডারের দ্রুতপতন, মিডল অর্ডারের গড়পড়তা পারফর্ম, তারপর এসে ইনিংসের হালধরা, নি:সঙ্গ যোদ্ধার মত একাই লড়ে যাওয়া, জিতলে অবিশ্বাস্য নায়ক, হারলে ট্র্যাজিক হিরো। ধোনির ওয়ানডে ক্যারিয়ারের হাইলাইটস!

ধোনির অবর্তমানে অনেককেই রিপ্লেসমেন্ট গুণে যাচ্ছেন অনেক বোদ্ধা। কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়া যে সবার অলক্ষ্যেই এই গুরুদায়িত্বের জন্য তৈরি হয়ে আছেন, দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে ত্রাতা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন প্রায়ই। বোলিংটাও মন্দ নয়। তবে, দুর্নামও ছিল। বিশেষ করে মাঠের বাইরে আচরণ, কফি উইদ করণ-এ গিয়ে আজে বাজে কথা বলে নিজের ইমেজটা অন্যরকমই বানিয়ে ফেলেছিলেন।

গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা ভাল যায়নি। বাজে পারফরম্যান্সের জের ধরে সংবাদমাধ্যম ও দর্শকরা পর্যন্ত তাঁর শত্রু বনে গিয়েছিল। সেই দু;সময় তিনি কাটান পরিশ্রম দিয়ে। এরপর অধিনায়ক হিসেবে জিতে নেন আইপিএলের শিরোপা। জাতীয় দলে জায়গা ফিরে পান, পারফরমও করে। তবে, হার্দিক যেন অপেক্ষায় ছিলেন আরো বড় কিছুর।

সেটার প্রমাণ পাওয়া গেল, এশিয়া কাপে। পাকিস্তানের  বিপক্ষে ম্যাচে। ব্যাটে বলে তিনিই তো নায়ক। এশিয়া কাপে এই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই তিনি বদনাম ছড়ান, আবার সেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দিয়েই ফিরে পেলেন হারানো জায়গা।

একটা সময় পান্ডিয়ার সবচেয়ে বেশি জুটি ছিল ধোনির সাথে। ম্যাচ শেষ করে এসেছেন পাঁচটি ম্যাচে। ধোনির উত্তরসূরী হিসেবে শুরুটা তবে খারাপ না, তবে নিজেকে প্রমাণের অনেকটা বাকি। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে ভারতের ক্রাইসিস ম্যানের অভাব পূর্ণ হতে চলেছে বলাই যায়। সৌরভ গাঙ্গুলি মজা করে বলেছিলেন, ‘এই ছেলে মহাত্মা গান্ধীর শহরের হতেই পারেনা, এই ব্যাটা তো পুরো ক্যারিবিয়ান।’ এজন্যেই তো তিনি হার্দিক পান্ডিয়া, তিনি অন্যরকম। তাঁকে কোনো ছকে ফেলা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link