টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। মুখোমুখি পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ প্রায় শেষের দিকে। পাকিস্তানের লেগ স্পিনার সাদাব খানের স্পিন ঘূর্ণিতে কুপোকাত হওয়া অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং লাইন আপ ঘুরে দাঁড়িয়েছে মার্কাস স্টোয়িনিস ও ম্যাথু ওয়েডের ব্যাটে। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ২২ রান।
১৯ তম ওভারে বোলিং এ এলেন শাহীন আফ্রিদি। প্রথম দুই বল থেকে রান দিলেন দুই। তারপর তৃতীয় বলে সুযোগ তৈরি করলেন উইকেট তুলে নেওয়ার। বাহাতি ব্যাটার ম্যাথু ওয়েডের টাইমিং মিস করা বল ধাবিত হয় ডিপ মিড উইকেটের দিকে। সেখানে থাকা ফিল্ডার ম্যাচ মিস করেন। তাতেই যেন ম্যাচ জেতানোর রসদ খুঁজে পান ম্যাথু ওয়েড। আফ্রিদির পরবর্তী তিন বলে তিন ছক্কা হাকিয়ে নিজেদের জয় সুনিশ্চিত করেন ওয়েড।
ক্যাচ মিস করা ফিল্ডার ছিলেন পাকিস্তানের অন্যতম স্ট্রাইক বোলার হাসান আলী। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের অন্যতম নায়ক। ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে হলোও তাই। হাসান আলী সমালোচকদের কাঠগড়ায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যমগুলোতে হাসান আলীর নিন্দা ও সমালোচনায় সয়লাব হয়ে যায়।
শুধু যে ক্যাচ মিস করেছেন তিনি তা নয়। নিজের চার ওভারে ৪৪ রান দিয়ে ছিলেন সেমিফাইনালের অন্যতম সেরা খরুচে বোলার। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই হাসান আলী ছিলেন নিষ্প্রভ। ছয় ম্যাচ খেলে তাঁর উইকেট সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। যেখানে ২০১৭ এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাঁচ ম্যাচে তাঁর উইকেট সংখ্যা ১৩টি। যদিও দুইটি ভিন্ন ফরম্যাট। তবুও এই উইকেট সংখ্যা অন্তত বলে দেয় ঠিক কতটা কার্যকরী বোলার তিনি।
নিজের সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স ও সেমিফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ মিস প্রসঙ্গে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে হাসান আলী লিখেছেন, ‘আমি জানি আপনারা আমার সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স নিয়ে অসন্তুষ্ট কেননা আমি আপনাদের প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু আপনারা অন্তত আমার থেকেও বেশি হতাশ না।’
হাসান তাঁর ফর্মে ফিরে আসা নিয়ে আশাবাদী হয়ে এবং দর্শক সমর্থকদের অনুরোধ করে সেই টুইটার বার্তায় আরো লিখেছেন, ‘আপনারা আমার থেকে করা প্রত্যাশার পরিবর্তন করবেন না। আমি চাই নিজের সবটুকু দিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেটে অবদান রাখতে। তাই কঠোর পরিশ্রমে ফিরে যাচ্ছি।’
দর্শক সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের অভিমত শেষ করার আগে হাসান আলী আরো লিখেছেন, ‘এই খারাপ সময় আমাকে আরো বেশি শক্তিশালী করবে।’
পাকিস্তানের বর্তমান অধিনায়ক বাবর আজমও জানেন হাসান আলী ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাঁর দলের জন্য। তাইতো তিনি তাঁর অন্যতম সেরা বোলার হাসান আলীকে মানসিক দৃঢ়তা ও নিজের উপর আস্থা রাখতে অনুরোধ করেছেন এবং বাবর আজম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সে (হাসান) আমার প্রধান বোলারদের একজন, সে পাকিস্তানকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছে। খেলোয়াড়েরা সাধারণত ক্যাচ মিস করেই তবে সে একজন লড়াকু সৈনিক।’
হয়ত হাসান আলী তাঁর এই ফর্মের ঘাটতি কাটিয়ে ফিরবেন পূর্ণ উদ্যমে, নতুন একজন হাসান আলী হয়ে। আরো বিধ্বংসী হয়ে। এমনটাই হয়ত প্রত্যাশা দর্শক সমর্থক থেকে শুরু করে গোটা পাকিস্তান দলের।