বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর

আইসিইউ থেকে ফিরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনে অনবদ্য এক অর্ধশতক হাকানোর গল্প-তো সকলেরই। কি এক দূর্দান্ত ইনিংস খেললো বলুন! তিন চার ও চার ছক্কার ৫২ বলের ৬৭ রানের ইনিংস পাকিস্তানকে এনে দিয়েছিল এক স্বস্তির স্কোর। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারদের নৈপূর্ণ্যে রিজওয়ানের এমন সাহসিকতা ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা খানিক হলেও ফিঁকে হয়ে যায়।

‘আমরা আসলে এত দ্রুত রিকভারি প্রত্যাশা করিনি এই কথা অব্যশই বলতে হবে। সাধারণত রিকভারি করতে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে যেমন পরস্থিতিতে এসেছিলেন তিনি।’ – পাকিস্তানের উইকেট রক্ষক ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ানের দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার ব্যাপারে এমন অভিমতই প্রকাশ করেছিলেন দুবাইয়ের মিডিওর হাসপাতালের চিকিৎসক সাহের সাইনালাবদিন।

আইসিইউ থেকে ফিরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অনবদ্য এক অর্ধশতক হাকানোর গল্প-তো সকলেরই জানা। কি এক দূর্দান্ত ইনিংস খেললো বলুন! তিন চার ও চার ছক্কার ৫২ বলের ৬৭ রানের ইনিংস পাকিস্তানকে এনে দিয়েছিল এক স্বস্তির স্কোর। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারদের নৈপূর্ণ্যে রিজওয়ানের এমন সাহসিকতা ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা খানিক হলেও ফিঁকে হয়ে যায়।

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে গণমাধ্যমে গুঞ্জন উঠেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হয়ত দেখা যাবে না পাকিস্তানের বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। সেমিফাইনালের ম্যাচের পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইসিইউতে অবস্থানরত মোহাম্মদ রিজওয়ানের ছবি ভাইরাল হয়ে জনসম্মুখে আসে ওরকম গুঞ্জনের আসল কারণ।

সেমিফাইনালের মাত্র দুই দিন আগে অর্থাৎ নয় নভেম্বর প্রচণ্ড বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান পাকিস্তানের ২৯ বছর বয়সী ব্যাটার রিজওয়ান। প্রাথমিকভাবে কর্তব্যরত ডাক্তারেরা ভেবেছিলেন হৃদপিণ্ডজনিত কোন সমস্যার দরূণ রিজওয়ানের এমন অস্বস্তি।

রিজওয়ানের সে সময়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পালমোনোলজিস্ট সাইনালাবদিন বলেন, ‘তাঁর অস্বস্তির শুরু হয় কাশি এবং ঠাণ্ডা দিয়ে কিন্তু নভেম্বরের নয় তারিখে তা রুপান্তরিত হ্য তীব্র বুক ব্যথায়। আমরা হৃদরোগ সন্দেহ করেছিলাম প্রাথমিক পর্যায়ে।’

ডাক্তার সাইনালাবদিন জানান, পরে অবস্থার অবনতি হয়। তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানতে পারি তাঁর গলায় গুরুতর সংক্রমণ হয়েছে। যা পরবর্তীতে ফুসফুস ও খাদ্যনালীর খিচুনির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

ডাক্তারদের ধারণা ছিল রিজওয়ানের হয়ত পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লাগবে আরো পাঁচ থেকে সাতদিন। তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা চলতে থাকে। তবে রিজওয়ানের আস্থা ছিল সৃষ্টি কর্তার প্রতি এবং পাকিস্তানের হয়ে সেমিফাইনালে প্রতিনিধিত্ব করার তীব্র ইচ্ছা তাঁর মধ্যে ছিল। এ কারণেই তিনি এত দ্রুত সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে পেরেছিলেন বলে মত প্রকাশ করেন ডাক্তার সাইনালাবদিন।

এছাড়াও সাইনালাবদিন আরো বলেন, ‘যেহেতু তিনি একজন খেলোয়াড় তাঁর নিয়মতান্ত্রিক জীবনধারা তাঁকে এত দ্রুত শারীরিক উন্নতি করতে সহয়তা করেছে। তবুও এটা একটি অলৌকিক বিষয়। আমি মনে তাঁর সৃষ্টিকর্তার উপর অগাধ আস্থা ও পাকিস্তানের হয়ে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে নামার বিশ্বাস কাজ করেছে তাঁর দ্রুত সুস্থতায়।’

মাত্র দুই দিনে এমন গুরুতর রোগ থেকে সুস্থ হয়ে রিজওয়ান অস্ট্রেলিয়ান বাঘা-বাঘা বোলারদের বিপক্ষে ব্যাট করতে নামেন। এমনকি ১২ তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্কের বল আঘাত হানে তাঁর হেলমেটে। তবুও দমে যাননি রিজওয়ান। ১৮ ওভার পর্যন্ত টিকে থেকে গতিশীল রেখেছিলেন তিনি।

আইসিইউ থেকে ফিরে তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। প্রথম স্থানে রয়েছে তাঁর সতীর্থ ও অধিনায়ক বাবর আজম। এছাড়াও এক পঞ্জিকা বর্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হাজার রান ছাড়িয়ে যাবার রেকর্ড গড়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে।

দুবাই মেডেওর হাসপাতালের ডাক্তার সাহের সাইনালাবদিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মোহাম্মদ রিজওয়ান নিজের সাক্ষর করা একটি জার্সি উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাছাড়া সাইনালাবদিন জানিয়েছেন এমন কঠিন পরিস্থিতি থেকে ফিরেই রিজওয়ানের সেই অদম্য ব্যাটিং তাঁকে মুগ্ধ করেছে।

ক্রিকেট যতটা না আবেগের ঠিক তাঁর থেকেও বেশি দায়িত্ববোধের। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই রিজওয়ানের মত খেলোয়াড়েরা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে বারেবারে ফিরে আসেন ক্রিকেটের সেই বাইশ গজে আর তৈরি করেন রুপকথাকে হার মানানো এক একটি নতুন গল্প।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...