সাকিব-মুশফিকের ‘মধুর’ লড়াই

সাকিব-মুশফিক লড়াই। চটকদার এক সংবাদ। তবে কি দলের ভেতর রয়েছে অন্তর্কোন্দল? বিশ্বকাপের আগেই তবে থলের বিড়াল বেড়িয়ে এলো। নিন্দুকেরা নিশ্চয়ই খুশি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আসল খুশিটা বোধহয় হওয়া উচিত প্রকৃত ক্রিকেট প্রেমীদের।

ওয়ানডে ক্রিকেটে একই সাথে পদার্পণ সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা মূলত ছিলেন সিনিয়র জুনিয়র। আগে পরে হয়ত অভিষেক হওয়ার কথা। তবে ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট  হারারেতে দুইজনের শুরু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছরের পথ চলায় আবারও এক বিন্দুতে এসে মিলিত হয়েছেন সাকিব-মুশফিক।

বাংলাদেশের এই দুই কাণ্ডারির ওয়ানডে ক্রিকেটে রানের সংখ্যা এক। দুইজনের নামের পাশে রয়েছে ৭১০৬। ক্যারিয়ারের প্রায় গোধুলী লগ্ন ছুয়ে ফেলেছেন তারা। এই পুরোটা পথজুড়ে বাংলাদেশের আস্থার নাম হয়ে ছিলেন সাকিব-মুশফিক। সাকিব যখন ব্যাট-বলে দারুণ প্রতিভার আলো ছড়িয়েছেন। ঠিক তখন উইকেটের পেছনে থিতু হয়েছেন মুশফিক আর ব্যাট হাতে হয়েছেন আস্থার প্রতীক।

দুই জনের ক্যারিয়ারের শুরুর ম্যাচটায় ব্যাট হাতে নামার সুযোগ হয়ে ওঠেনি মুশফিকের। তবে অভিষেক ম্যাচে চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৩০ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেছিলেন সাকিব আল হাসান। কেবলই এক নিখাঁদ ব্যাটার হিসেবে একাদশে সুযোগ মিললেও বাইশ গজে নামার সুযোগ সেবার হয়নি মুশফিকের। উইকেটের পেছনেও ছিলেন তখন খালেদ মাসুদ পাইলট।

এরপর তো সেই শূন চিবুক ভরে উঠলো। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে এগিয়ে চলা সাকিব আর মুশফিক আজ বিশ্ব নন্দিত। টাইগার ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থান তৈরিতে এই দু’জনের অবদান অস্বীকার করবার সুযোগই নেই। অন্তত হাজার সাতেক রান সেটাই প্রমাণ করে।

ওয়ানডেতে সাত হাজার রানের মাইলফলকটা দু’জনে একসাথে ছুতে পারেননি। তবে দৈবভাবে একটা জায়গায় এখন তারা এক। এই ৭১০৬ রান করতে মুশফিক সময় নিয়েছেন ২৪৬ ম্যাচ। অভিষেক ম্যাচটার মতই বহু ম্যাচে ব্যাট করবার সুযোগটুকু হয়নি তার।

অন্যদিকে সাকিব আল হাসান ২৩১ ম্যাচেই ছুঁয়ে ফেলেছেন মুশফিকুর রহিমকে। ঠিক যেমননি করে তিনি ছুঁয়ে আছেন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারের মাইলফলকটি। আরও একটা জায়গায় এই দুই ব্যাটারের বেশ মিল রয়েছে। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে তাদের দু’জনেরই রয়েছে নয়টি করে শতক। বন্ধুত্ব সুলভ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের মাঝেও চলছে বেশ স্বাস্থ্যকর এক প্রতিযোগিতা। যে লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছিল একেবারে শুরুতে।

সাকিব আবার এগিয়ে হাফ সেঞ্চুরির ট্যালিতে। ৫৩টা হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি এখন অবধি তার ক্যারিয়ারে। সেখানে মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা ৪৪টি। স্ট্রাইকরেটেও সাকিব এগিয়ে। তবে এবার নিশ্চয়ই নিজেদের এই রানের লড়াইটা চালিয়ে যেতে চাইবেন সাকিব ও মুশফিক।

তাদের এই লড়াই বেশ স্বাস্থ্যকর। সামনেই ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এই দু’জন রানের এই লড়াইটা চালিয়ে গেলে আখেরে লাভটা তো বাংলাদেশেরই। টাইগার ক্রিকেটের ব্যাটিং স্তম্ভের অন্যতম দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মাঝে অন্তত এই লড়াইটা চলুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link