একটি আউট ও শচীনের নির্ঘুম রাত

একশো খানা শতক হাঁকাতে প্রচণ্ড ক্ষুধার প্রয়োজন। অনবরত সেই ক্ষুধা বিতৃষ্ণার জন্ম দিতে পারে। তবে মানুষটি যদি হয় শচীন টেন্ডুলকার তবে বদলে যাবে দৃশ্যপট। মহেন্দ্র সিং ধোনি একবার বিস্মিত কণ্ঠে বলেছিলেন যে এমন রান ক্ষুধা বছরের পর বছর থাকা বেশ কঠিন। ক্লান্তি চলে আসার কথা। তবে শচীন যেন ছিলেন ভিনগ্রহের কেউ। তাঁর রানক্ষুধা প্রচণ্ড ভয়ানক।

তবে এই যে রানের জন্য তাড়না, সেটা কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি তাঁর। তিনি হুট করেই বনে জাননি ক্রিকেটের মহাতারকাদের একজন। সময় লেগেছে। পরিশ্রম লেগেছে। আর লেগেছে হার না মানার অদম্য শক্তি। তিনি ভেঙে পড়েছেন, হার মেনে নিয়েছেন। কিন্তু দমে জাননি। বরং আবার উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষের প্রতিটা আঘাতের জবাবটা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করে গেছেন শচীন। তেমন এক উদাহরণের নব্বই দশকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কোন এক ম্যাচের কথা মনে পড়া স্বাভাবিক।

এখন আর ভারতকে খুব একটা ম্যাচ খেলতে দেখা যায় না জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। কালেভদ্রে এক দু’খানা সিরিজ এই যা। তবে একটা সময় প্রায় নিয়ম মেনেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ থেকে শুরু করে টুর্নামেন্টের ম্যাচও খেলত ভারত। সেটা অবশ্য সেই গেল শতকের শেষ দশকের কথা। নব্বই দশকে বেশ একটা আলোড়ন সৃষ্টি করা টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়। সেটা ছিল কোকা-কোলা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ত্রিদেশীয় সে টুর্নামেন্টের ভারত ও জিম্বাবুয়ের সাথে যুক্ত হত শ্রীলঙ্কা।

সে টুর্নামেন্টের ফাইনালটাও খেলেছিল ভারত ও জিম্বাবুয়ে। সে সময় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের আজকের দিনের মত করুণ দশা ছিল না। বরং সে সময়টা জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে ছিল তারকার ছড়াছড়ি। ফ্লাওয়ার ভাতৃদ্বয় ছাড়াও হিথ স্ট্রিক, অ্যালিস্টেয়ার ক্যাম্পবেলদের মত তারকা ক্রিকেটাররা সুসজ্জিত করেছিল আফ্রিকান দেশটির ক্রিকেটকে। তবে সেবারের কোকা-কোলা টুর্নামেন্টে আরেক তারকার উদয় হয়েছিল।

হেনরি ওলঙ্গা রীতিমত বিষন্নতায় ডুবিয়েছিল ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ ব্যাটারকে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও জিম্বাবুয়ে। সে ম্যাচে আগুন ঝড়িয়েছিল। তাঁর একার নৈপুণ্যে সেদিন ১৩ রানে ম্যাচ জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। চারখানা উইকেট নিজের পকেটে পুরেছিলেন ওলঙ্গা। সেখানে সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড় ও অজয় জাদেজার উইকেট ছাড়াও ছিল শচীন টেন্ডুলকারের উইকেট।

আর ওলোঙ্গাকে উইকেট দেওয়ার পর রাতে ঘুমাতে অবধি পারেননি শচীন। তেমনটাই বলছিলেন ভারতের সাবেক খেলোয়াড় অজয় জাদেজা। সে সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করে জাদেজা বলেন, ‘সে বলটা তাঁকে রীতিমত পরিবর্তন করে দেয়। সে খুব বেশি ইগোসেন্ট্রিক না। তবে তিনি তাঁর খেলা নিয়ে বেশ গর্ববোধ করেন। বাজে ভাবে আউট হলে সে পরবর্তী কিছু রাত ঘুমাতে পারত না। সে সারারাত মন খারাপ করে বসেছিল। আমি তাঁকে এর আগে এত মন খারাপ করতে দেখিনি। শুধুমাত্র সেটা তাঁর অহমের পতনের জন্য না, আমরা ম্যাচটা হেরেও গিয়েছিলাম বলেই বোধহয়।’

কিছুটা খাটো লেন্থের বল করেছিলেন ওলঙ্গা। সে বল খেলতে গিয়ে ব্যাটের খোঁচা লাগে। আর ক্যাচ আউট হয়ে সেদিন প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। তবে ঐ-যে শুরুতেই বলা শচীন টেন্ডুলকার দমে যাওয়ার পাত্র নন। তিনি লড়াই করতে পছন্দ করেন এবং তিনি তেমনটাই করেন।

ফাইনালে জিম্বাবুয়েকে দশ উইকেটে হারায় ভারত। সে ম্যাচে শতকের দেখা পেয়েছিলেন শচীন। এই যে ভাল করার অদম্য এক স্পৃহা সেটাই শচীনকে বানিয়েছে অপ্রতিরোধ্য, অনন্য। তিনি হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটের ঈশ্বর। খারাপ থেকে শিক্ষা নেওয়ার আরও এক উদাহরণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link