ফুটবল যত দিন যাচ্ছে তত পরিণত হচ্ছে একটি বানিজ্যিক খেলায়। ফুটবলে এখন প্যাশন, পারফরম্যান্সের পাশাপাশি পয়সার জরুরতও বেশি। কেনই বা হবে না? এই যুগে খেলোয়াড়েরা দেখতে চায় নিজেদের ভালো, নিজেদের সেরাটা দেখতে গিয়ে বড় অংকের সাইনিং করা কিংবা বড় অংকের বেতন নেওয়াটা নতুন কিছু নয়। তর্কাতীতভাবে পৃথিবীর সেরা লিগ প্রিমিয়ার লিগে তো এই ঘটনা আরো বেশি।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ মানেই টাকার খেলা। একক মালিকানাধীন দল থেকে সাপোর্টার বেইজড ক্লাব, সবই আছে এখানে। এমনকি টিভি রাইটস, ফটো রাইটস, সব মিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগ অন্য সব লিগ থেকে যোজন যোজন এগিয়ে। সেই লিগের খেলোয়াড়দের মধ্যে টাকার ছড়াছড়ি হবে না তা কী কখনও হয়? কিন্তু ভেবে দেখেছেন এতো সব তাকার খেলায় যাদের জন্য এতোকিছু সেই খেলোয়াড়েরা আসলে কতটা টাকা পায়? প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড়ই বা কারা?
- অ্যান্থনি মার্শিয়াল
২৫ বছর বয়সী ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকারের জন্য গত দুই মৌসুম ছিল স্বপ্নের মতন। ক্যারিয়ারে সেরা দুই মৌসুম কাটিয়ে এই মৌসুমে আবার কেমন যেন ধার হারিয়ে ফেলেছেন মার্শিয়াল। সত্যি বলতে ইউনাইটেড সমর্থকদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম মার্শিয়ালের কন্সিস্টেন্সি। এক ম্যাচে গোলমুখে যতটা ভয়ানক মার্শিয়াল, ঠিক ততটাই নিষ্প্রভ তিনি পরবর্তী ম্যাচে। তার পেছীএনে সপ্তাহে এতটা খরচ করতে দেখে দেখে ইউনাইটেড ফ্যানদের যখন সমালোচনা শুরু হয়, ঠিক তখনই ম্যাচ বের করে নিয়ে আসেন একক কৃতিত্বে।
ফ্রেঞ্চ স্টাইকারকে প্রতি সপ্তাহে ইউনাইটেডের বেতন দিতে হয় ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড। বাংলা টাকায় যা প্রায় ৩ কোটি টাকা।
- পল পগবা
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সবচেয় বড় সাইনিং এই তালিকায় থাকবে না এমন কী কখনও হয়? স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সাথে কথা কাটাকাটির জের ধরে একদিন ইউনাইটেড ছেড়েছিলেন পগবা। সেই পগবাকেই দুই হাতে বরণ করেছে রেড ডেভিলরা, সেই ঘটনারই ঠিক ৪ বছর পরে। যে পগবাকে নবিশ ছেড়েছিল ইউনাইটেড, তাকেও ১০৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে দলে ভিড়িয়েছিল তারা।
যদিও পগবার ইনক্লুশন কতটা প্রভাব ফেলেছে ইউনাইটেড স্কোয়াডে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, কিন্তু পগবার দামে তা হেরফের ফেলেনি। এরই মধ্যে কয়েকবার পগবার চলে যাওয়ার রিউমার শক্ত হয়েছে, দল থেকে বাদ পরেছেন ফর্ম হারিয়ে। কিন্তু সবকিছু সত্ত্বেও পগবা ইউনাইটেড মিডফিল্ডে এক ভরসার নাম।
প্রতি সপ্তাহে ইউনাইটেড থেকে পগবার পকেটে ঢুকে ২ লাখ ৯০ হাজার পাউন্ড। বাংলা টাকার যা প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
- রহিম স্টার্লিং
রহিম স্টার্লিং, প্রিমিয়ার লিগে তার শুরুটা হয়েছিল লিভারপুলের জার্সিতে। কিন্তু ২০১৫ সালে যখন ৫০ মিলিয়ন দিয়ে তাকে ম্যানচেস্টার সিটি কিনে আনে, তখনই ব্রিটিশ মিডিয়ার রোশানলে পরেন স্টার্লিং। কেনই বা পরবেন না, ৫০ মিলিয়নের মতো খেলোয়াড়ই ছিলেন না সে সময়।
কিন্তু ব্রিটিশ মিডিয়া কাওকে তুলোধুনো করেছে আর তারাই তাদের ভুল প্রমাণ হওয়ার যেন অবিচ্ছদ্য অংশ ব্রিটিশদের জন্য। ২৬ বছর বয়সী এই উইঙ্গার সুই মৌসুম নিয়েছেন নিজেকে সেট করতে। এরপর থেকে পেপ গার্দিওলার দলকে বদলে দিয়েছেন তার উইং অ্যাটাক দিয়ে। একের পর এক উইং দিয়ে স্পিডি বল, বদলে দিয়েছে সিটির খেলার স্টাইল। সিটির ব্যাক-টু-ব্যাক প্রিমিয়ার লিগ টাইটেলের অন্যতম মূল তারকা ছিলেন স্টার্লিং।
ম্যানচেস্টাড় সিটির এই নাম্বার ‘৭’ প্রতি সপ্তাহে কামান ৩ লাখ পাউন্ড। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা।
- কেভিন ডি ব্রুইনা
প্রিমিয়ার লিগের সেরা মিডফিল্ডারদের কথা আসলে সেখানে কোনো তর্ক ছাড়াই প্রথম যে নামটা আসে তা হলো কেভিন ডি ব্রুইনা। কেনই বা আসবে না, এই মৌসুমেই দেখুন না প্রতিটি ম্যাচেইতার পারফরম্যান্স চোখে লেগে থাকার মতন। এমনকি যেদিন পুরো দলের অবস্থা শোচনীয় সেদিনই নিজ প্রতিভায় উজ্জ্বল ডি ব্রুইনা। পেপ গার্দিওলার অধীনে নিজেকে এক তারকায় পরিণত করেছেন এই বেলজিয়ান।
যদিও প্রথমে যখন প্রিমিয়ার লিগে নাম লিখিয়েছিলেন তখন তিনি ছিলেন আরেক নীল দলের সারথি। জোসে মোরিনহোর চেলসির হয়ে প্রথম প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক হয়েছিল তার। কিন্তু সেখানের বাজে পারফরম্যান্সের পর ব্রিটিশ মিডিয়া তাকে তুলোধুনো করতে বাকি রাখেনি। কিন্তু ফিরে এসেছেন ফিনিক্স পাখি হয়ে।
প্রতি ম্যাচে ডি ব্রুইনাকে হয়তো গোল করতে কিংবা অ্যাসিস্ট করতে দেখা যাবে না। কিন্তু ম্যাচ শেষে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে সে সরাসরি একটা কথাই বলবে, আজকের ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছে ডি ব্রুইনা। যে কারণে ৩০ বছর বয়সী এই তারকা ম্যানচেস্টার সিটির সর্বোচ্চ আয়কারী খেলোয়াড়। প্রতি সপ্তাহে তার আয় ৩ লাখ ২১ হাজার পাউন্ড। বাংলা টাকায় যা ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
- ডেভিড ডে গিয়া
শুনে একটু অদ্ভুত লাগতে পারে বৈকি, কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় এখনও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই গোলরক্ষকই। গত কয়েক মৌসুম ধরে খুব একটা ভালো অবস্থা যাচ্ছে না তার। দৃষ্টিকটু কিছু ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে তার দলকেও। কিন্তু তবুও সর্বোচ্চ জায়গাটি তারই দখলে।
২০১১ সালে তাকে স্কাউট করতে স্বয়ং স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন পাড়ি দিয়েছিলেন স্পেন। যে কোচ তার ডাগ-আউট ছেড়ে কালে-ভদ্রে উঠেন, পুরো ক্যারিয়ারে মিস দিয়েছেন মাত্র ৩টি ম্যাচ, তার একটি ছিল তাকে স্কাউট করতে গিয়ে। তার প্রতিদানও দিয়েছেন ডে হ্যেয়া খুব ভালোভাবেই। ফার্গুসন পরবর্তী দলের কাণ্ডারি ছিলেন তিনি। এমনকি ময়েস-ভ্যান গানলের সময়ে যখন পুরো ইউনাইটেডের তথৈবচ অবস্থা, তখন তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন দেওয়ালের মতন।
এই মৌসুমে ডেভিড ডে গিয়া প্রতি সপ্তাহে কামান মোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার পাউন্ড। বাংলা টাকায় যা প্রায় ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।