শ্রেয়াস-আইপিএল-আনন্দ/বেদনা

দিল্লী ক্যাপিটালসের অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের কথা। তবে, সাবেক অধিনায়ক বললে কি ভুল হবে? কারণ এ আসরে তো তিনি থাকছেন না!

বয়সভিত্তিক দলে যখন তিনি খেলতেন তার সতীর্থরা তাঁকে সাবেক ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগের সাথে তুলনা করতেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) দিল্লী ডেয়ারডেভিলসে সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে অধিনায়কের দায়িত্ব পান তিনি (২৩ বছর ১৪২ দিন)। গত আসরে দিল্লী ক্যাপিটালসকে তার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও পারফরম্যান্স দিয়ে ফাইনালে টেনে নেন।

পাঠকরা নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন বলছিলাম দিল্লী ক্যাপিটালসের অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের কথা। তবে, সাবেক অধিনায়ক বললে কি ভুল হবে? কারণ এ আসরে তো তিনি থাকছেন না!

সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের সময় চোট পান তিনি৷ ২৬ বছরের এই ক্রিকেটারের অস্ত্রোপচার করা হবে ৮ এপ্রিল৷ তাঁর কাঁধের হাড় ডিসলোকেট হয়ে গেছে৷ সার্জারির পর পাঁচ মাস অবধি তাঁকে রিহ্যাবে থাকতে হবে৷ শুরুতে ধারণা করা হয়েছিলো আসন্ন আইপিএলের বেশ কিছু ম্যাচ তিনি মিস করতে পারেন! তবে সব ধারনা ভ্রান্ত হয়ে গেলো, এবারের আসরে দেখা যাবে না শ্রেয়ার আইয়ারকে। তার বদলী দলকে নেতৃত্ব দেবেন আরেক তরুন তুর্কি ঋষাভ পান্ত।

চলুন দেখে নেই শ্রেয়াস আইয়ারের খেলা ছয় আসরের আইপিএলনামা।

ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে ২০১৫ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) আসরে তাঁকে দলে ভেড়ায় দিল্লী ডেয়ারডেভিলস (বর্তমান দিল্লি ক্যাপিটালস)। ভিত্তি মূল্য মাত্র ১০ লাখ রুপি থাকলেও ২ কোটি ৬ লাখ রুপিতে তাঁকে কিনে নেয় দিল্লি! সেবারের আসরে আন্তর্জাতিক অভিষেক না হওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম পেয়েছিলেন আইয়ার।

সে আসরে ১৪ ম্যাচে ১২৮ স্ট্রাইক রেটে প্রায় ৩৪ গড়ে ৪৩৯ রান করেন তিনি। করেছিলেন চার ফিফটি! নিজের প্রথম এবং আইপিএল ইতিহাসের ৮ম আসরে সেবার সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেন শ্রেয়াস।

পরের বছর টা অবশ্য মোটেও সুখকর হয়নি তার জন্য। ৬ ম্যাচে মোটে ৩০ রান করতে পেরেছিলেন সেবার, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯ রান! শ্রেয়াসের আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে বছরটিই ছিলো ২০১৬!

তবে বাজে সময়কে পাশ কাটিয়ে ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলেন পরের বছর। ২০১৭ সালে আইপিএলের ১০ম আসরে ১২ ম্যাচে ৩৩৮ রান করেন শ্রেয়াস। ১৩৯ স্ট্রাইক রেটে ২ ফিফটির সাথে সর্বোচ্চ স্কোর ছিলো ৯৬ রানের! যা আজ পর্যন্ত আইপিএলে তার সেরা ইনিংস৷

একাদশ আইপিএলে যেনো তিনি আরো ভয়ংকর রুপ নিলেন। সে আসরের করা ৩৭ গড়ে রান এখন পর্যন্ত গড়ের দিক থেকে তার জন্য সেরা আসর! ১৪ ম্যাচে চার ফিফটিতে ৪১১ রান! ১৩২+ স্ট্রাইক রেট! টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তিনি যে রাজত্ব করতে এসেছেন সেটা যেনো প্রতি আসরে ব্যাট হাতে আরো ভয়ংকর রুপ ধারণের মাধ্যমে প্রমাণ করে চলেছেন।

২০১৯, দ্বাদশ আইপিএলে গড় কমলেও রান ফোয়ারা থামাননি আইয়ার। প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পেলেন অধিনায়কত্বের! ১৬ ম্যাচে করেছেন প্রায় ৩১ গড়ে ৪৬৩ রান, সাথে তিনটি ফিফটি। সে আসরে কিছুটা ধীর গতিতেও খেলেছিলেন তিনি! প্রায় ১২০ এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছিলেন তিনি।

সবশেষ ত্রয়োদশ আইপিএল! করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ভেন্যু নির্ধারিত হয় আরব আমিরাতে। আইয়ারের জন্য প্রথমবার দেশের বাইরে আইপিএল খেলা। তবে বিগত আসর গুলোর সবকিছু ছাপিয়ে গত আসরে আইয়ার ব্যাট হাতে ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে।

প্রথমবারের মতো আইপিএলে করলেন ৫০০ এর অধিক রান। ১৭ ম্যাচে ৩ ফিফটিতে গত আসরে তিনি করেন ৫১৯ রান! ১২৩-এর ওপর স্ট্রাইক রেট আর ৩৪ গড়ের সাথে সর্বোচ্চ ৮৮ রানের ইনিংস। নিজের দূর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে মরুর বুকে দলকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে!

আইপিএলে দল পাবার আশায় মাত্র ১০ লাখ রুপি ভিত্তি মূল্যে নিবন্ধন করা ছেলেটি আজ ভারতের জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করছে! নিজের প্রতিভা আর সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে চাইছেন নিজেকে নিয়ে যেতে অনন্য এক উচ্চতায়।

তিনি কতটুক সফল হবেন সেটা সময়ই বলে দিবে, তবে একজন তরুন হিসেবে আইপিএলে তিনি তার দলকে যেভাবে নিচ থেকে উপরে টেনে তুলেছেন সেটি সত্যি প্রশংসনীয়। গত আসরে দিল্লীর সিংহাসনে বসে থাকা ছেলেটিকে এবারের আসরে খুব মিস করবে তাঁর দল সেটা নিশ্চিত!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...