যেভাবে লিডারশিপ ইউনিটের বাইরে পান্ডিয়া!

অনেক সমর্থকের মতে, সমস্যাটা ক্রিকেটীয় নয়, বরং ব্যক্তিত্বের। হার্দিক এমন একজন নেতা, যিনি নিজের অবস্থানে দৃঢ়, যিনি সিদ্ধান্তে আপস করেন না। আর ঠিক এখানেই হয়তো অস্বস্তি। শ্রেয়াস আইয়ারকে যেভাবে ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, হার্দিকের ক্ষেত্রেও কি তেমনই কিছু ঘটছে?

ভারতের ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করল, তখনই পরিষ্কার হয়ে গেল বড় এক বার্তা দিল। ঘরের মাঠে শিরোপা রক্ষার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে সুরিয়াকুমার যাদবের কাঁধে। কিন্তু স্কোয়াড ঘোষণার পর যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এল, তা হলো—কেন হার্দিক পান্ডিয়া ভারতের সহ-অধিনায়ক নন?

শুভমান গিল বাদ পড়ার পর বেশিরভাগ সমর্থকই ধরে নিয়েছিলেন, সুরিয়ার ডেপুটি হবেন হার্দিক পান্ডিয়া। অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্স আর আগের নেতৃত্বের রেকর্ড—সবই তার পক্ষেই ছিল। অথচ বিসিসিআই চমক দিয়ে সহ-অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিল অক্ষর প্যাটেলকে। আর সেখান থেকেই শুরু হলো জল্পনা—তাহলে কি হার্দিককে নীরবে নেতৃত্বের বাইরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে?

এই প্রশ্নটা আরও গভীর হয়, কারণ হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বের ইতিহাস মোটেও দুর্বল নয়। রোহিত শর্মার পরবর্তী টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে এক সময় তাকেই ভাবছিল ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসন। ২০২২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ দিয়ে শুরু হয় তার অধিনায়কত্ব।

এরপর শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ—একাধিক সিরিজে তিনি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মোট ১৬টি ম্যাচে ভারত জিতেছে ১০টি, হার মাত্র ৫টি, একটি ম্যাচ টাই—জয়ের হার ৬২.৫ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, অধিনায়ক হিসেবে হার্দিক ছিলেন যথেষ্ট সফল।

তবুও ধীরে ধীরে তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো নেতৃত্বের মূল বৃত্ত থেকে। শুরুতে বলা হলো, তার ইনজুরির প্রবণতা নাকি বড় কারণ। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪-এর পর শুধু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি সিরিজ মিস করেছিলেন হার্দিক। এরপর থেকে প্রায় সব সিরিজেই তিনি নিয়মিত খেলেছেন, ফিট থেকেছেন, পারফর্ম করেছেন। তাহলে ইনজুরির যুক্তিটা কতটা বাস্তব?

বিশ্বকাপ ২০২৪-এই ছিল শেষবার, যখন হার্দিক ভারতের লিডারশিপ ইউনিটের অংশ ছিলেন—রোহিত শর্মার সহ-অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্টে তিনি ছিলেন ভারতের শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক। ব্যাট হাতে ৬ ইনিংসে ১৪৪ রান, গড় ৪৮, স্ট্রাইক রেট ১৫১-এর বেশি। বল হাতে ১১ উইকেট, যার মধ্যে ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া স্পেলও ছিল। চাপের মঞ্চে পারফর্ম করার এই ক্ষমতাই তো একজন নেতার সবচেয়ে বড় গুণ।

এরপরও হার্দিক থামেননি। জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি সিরিজ পর্যন্ত তিনি খেলেছেন ২০টি ইনিংস। রান করেছেন ৫১০, স্ট্রাইক রেট ১৫১-এর ওপরে, তিনটি ফিফটি। বল হাতেও নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ফর্ম, ফিটনেস—কোনো দিক থেকেই প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

তাহলে প্রশ্নটা থেকেই যায়—হার্দিক পান্ডিয়ার অপরাধটা কী? অনেক সমর্থকের মতে, সমস্যাটা ক্রিকেটীয় নয়, বরং ব্যক্তিত্বের। হার্দিক এমন একজন নেতা, যিনি নিজের অবস্থানে দৃঢ়, যিনি সিদ্ধান্তে আপস করেন না। আর ঠিক এখানেই হয়তো অস্বস্তি। শ্রেয়াস আইয়ারকে যেভাবে ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, হার্দিকের ক্ষেত্রেও কি তেমনই কিছু ঘটছে?

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link