নিজেদের প্রথম ম্যাচে তিনি ব্যাটিং করারই সুযোগ পাননি। পরের ম্যাচে যখন সুযোগ আসলো তখন মাথার ওপর আকাশসম চাপ। দলকে জেতাতে হবে ১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে। আজ বরং কাজটা তুলনামূলক সহজ ছিল। তবে এসব ম্যাচেই ব্যাটারদের পরীক্ষা হয়। বড় ক্রিকেটাররা মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের কাজটা শেষ করেন। যেমনটা আজ তৌহিদ হৃদয় করলেন।
প্রথম দুই ম্যাচেই জিতে মাশরাফির সিলেট স্ট্রাইকার্স বেশ ফুরফুরে মেজাজে। তবে আজ পরীক্ষাটা ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে। নামে, ভারে বিপিএলের অন্যতম শক্তিশালী দল। কুমিল্লা ব্যাট হাতে একেবারে মন্দ করেনি। দিনের প্রথম ম্যাচে সিলেটকে ১৫০ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়েছে। মিরপুরে দিনের ম্যাচে এই টার্গেট ম্যাচ জেতার জন্য যথেষ্ট।
তবে তৌহিদ হৃদয়ের জন্য কুমিল্লার বোলিং আক্রমণ যথেষ্ট ছিল না। ১৫০ রানের টার্গেটটাকে মামুলি বানিয়ে ফেললেন। যেমনটা বরিশালের বিপক্ষে ১৯৫ রানের টার্গেটকে বানিয়েছিলেন। টানা দুই ম্যাচেই পেলেন অর্ধশতক। হয়ে উঠছেন সিলেটের পারফেক্ট নাম্বার থ্রি।
হৃদয় অবশ্য চিরকালই যেকোন ব্যাটিং লাইন আপের নিউক্লিয়াস। তিনি যে দলে খেলেন সে দলের ব্যাটিং লাইন আপটা তাঁকে কেন্দ্র করেই সাজানো হয়। নিজেকে প্রথম চিনিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে। ২০২০ সালে বিশ্বকাপ জয়ী সেই দলের ব্যাটিং লাইন আপের নিউক্লিয়াস ছিলেন তৌহিদ হৃদয়ই।
এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটেও গত বছর দুই ধরে কাজটা করে যাচ্ছেন। লাল বলের ক্রিকেট কিংবা সাদা বল সব জায়গাতেই সমান ভাবে পারফর্ম করে চলেছেন। তবুও হৃদয়কে নিয়ে একটা কথা প্রচলিত ছিল। তিনি নাকি লাল বলের ক্রিকেটটাই ভাল খেলেন। পরিসংখ্যানও সেই সাক্ষ্যই দেয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর গড় ৪০ এরও বেশি।
তবে লিস্ট এ ক্রিকেটেও তো হৃদয়ের গড় ৪০ এর উপর। সে কথা লোকে বলে না কেন? একটা আক্ষেপ হৃদয়ের ছিল নিশ্চয়ই। সেই আক্ষেপ এবার মেটাতে চাইছেন বিপিএলে। নজর কেড়ে নেয়ার জন্য সবচেয়ে বড় মঞ্চে। যে দুই ম্যাচে ব্যাট করলেন দুই ম্যাচেই পেলেন অর্ধশতক। দলকে জেতালেন একা হাতে।
তাও আবার দুটি ইনিংসই খেললেন বিপিএলের সবচেয়ে শক্তিশালী দলগুলো বিপক্ষে। প্রথমদিন ভেঙে দিলেন সাকিবদের বোলিং আক্রমণ। আর আজ মুস্তাফিজ, মোহাম্মদ নবীদের বিপক্ষেও একই রকম আক্রমণাত্মক ব্যাটিং।
আজ ৩৭ বল খেলে করেছেন ৫৬ রান। ব্যাটিং করেছেন ১৫১.৩৫ স্ট্রাইকরেটে। সেদিন নাজমুল হোসেন শান্তর সাথে গড়েছিলেন ১০১ রানের জুটি। আজ মুশফিকুর রহিমকে সাথে নিয়ে যোগ করেছেন ৪২ রান।
৫৬ রান করে হৃদয় যখন ফিরে গিয়েছেন তখন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে সিলেটের জয়। সেই সময় ৩৩ বল থেকে সিলেটের প্রয়োজন ছিল ২৩ রান। এই ম্যাচের মাধ্যমে টানা তিন জয় পেল সিলেট। হৃদয়, আকবর, জাকিরদের ব্যাটিংয়েই মিলছে সিলেটের এমন সাফল্য।
সিলেটের তরুণ এই ব্যাটারদের পারফর্মেন্স আসলে বিপিএলেরই আলো ছড়াচ্ছে। সমৃদ্ধ করছে দেশের ক্রিকেটের পাইপলাইনও। কেননা আকবর, হৃদয়, জাকিররাই তো দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ।