‘আমি জানতাম আমার সিরিজ শেষ’

সিডনি টেস্টে হনুমা বিহারি ১৬১ টি বল খেলেছেন। উইকেটে ছিলেন ৫০ ওভারেরও বেশি সময়। এর মধ্যে ৪০ ওভারের বেশি হ্যামিস্ট্রংয়ের ইনজুরি নিয়ে খেলেছেন। যার কারনে ভারত সিডনি টেস্ট ড্র করতে পেরেছে। সিডনি টেস্টের ফলাফল ব্রিসবেনে অসাধারণ জয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলো। যেখানে ব্রিসবেন টেস্টের আগে ভারতে প্রায় ১০ জন ক্রিকেটার ইনজুরি এবং ব্যক্তিগত কারণে দল থেকে বাদ পড়েছিলো। তারপরও অস্ট্রেলিয়ার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ জিতে অসাধ্য সাধন করেছে।

ব্রিসবেন টেস্টে ঐতিহাসিক টেস্টের সাক্ষী না হয়ে চোটের কারণে দেশে ফিরে এসেছেন হানুমা বিহারী। ঘরের মাটিতে আসন্ন টেস্ট সিরিজের শেষ অংশ খেলার জন্য পূর্নবাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। পূর্ণবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যেই তিনি ব্রিসবেন টেস্টে দলের সম্পূর্ণ খেলা দেখেছেন।

এরপরই সেই সিডনি টেস্টের বিখ্যাত লড়াই নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোর সাথে।

এসসিজিতে টেস্ট বাঁচানোর পর সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় আপনার অনুভূতি কি ছিলো?

দুইটি অনুভূতি মাথায় এসেছিলো। একটা নিজের ইনজুরি। আর একটা দলের জন্য স্বস্তি। পায়ে ব্যথা ছিলো। কিন্তু স্বস্তির বিষয়, দলের জন্য আমি কাজ করতে পেরেছি। দিনশেষে ইনজুরিও আমার জন্য স্বস্তিদায়ক ছিলো। যদি আমি দলের জন্য কিছু করতে না পারতাম, তাহলে আমাকে মানসিকভাবে আরো বেশি আঘাত করতো। যেহেতু আমরা টেস্টটি বাচাতে পেরেছি তাই ইনজুরি আমার জন্য খুব বেশি বেদনাদায়ক না।

ঐ সময়ে কি অ্যাডিলেডের (৩৬ অলআউট) কথা মনে পড়ছিলো?

আপনি বিশ্বাস করবেন না, অ্যাডিলেড টেস্টের পর দলের কেউ খেলা নিয়ে কোনো কথা বলি নাই। আমরা ভাবছিলাম এটা আগে কখনো ঘটেনি। আমি ভাবি না ভবিষ্যতেও ঘটবে না। এটি অস্বাভাবিক একটা ইনিংস ছিলো। তাই সামনে এগিয়েছি এবং মেলবোর্ণ থেকে তিন টেস্টের সিরিজ হিসেবে বিবেচনা করেছি। আপনি যদি তিন ম্যাচে টেস্ট সিরিজ হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে দেখবেন আমরা ২-০ তে সিরিজ জিতেছি। আমরা ভারতীয় দলের যে লড়াই দেখি সেটা আমরা মাঠেই করি। এটাই ভারতীয় দলের ঐতিহ্য। আমরা এইভাবেই খেলি।

আমরা দেখিছি আপনি খেলতে গিয়ে অনেক বার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। এই সিরিজের জন্য গড়ে ৯-১০ টি বল আপনার নিয়ন্ত্রনের বাইরে ছিলো। আর ঐ ইনিংসে (৩৬/১০) এটা ঘটেছিলো তিন থেকে চার বলের মধ্যে। আমি জানি একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে এটা আপনি জানেন। কিন্তু ঘটনাকে শক্তিশালী করার জন্য আপনার কি ঐ জাতীয় সংখ্যার প্রয়োজন ছিলো? যদিও সেটা অস্বাভাবিক একটা ইনিংস ছিলো।

আমি সম্পাদকীয়টি পড়েছি। আমি বিষয়টি জানি। দেখেন ঐ সময়ে ভালো সবগুলো ভালো বল আসছিলো। আমরা বল খেলেছি এবং সরাসরি ফিল্ডারের কাছে গিয়েছিলো। যেহেতু এটি অস্বাভাবিক একটি ঘটনা তাই আপনাকে এটা মানতে হবে। আর আপনাকে সামনে এগিয়ে চলতে হবে। দিনশেষে এটা টেস্ট ক্রিকেট। আপনার এই রকম একটা দিন আসতেই পারে। কিন্তু আমরা ৬০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ের মধ্যে সচারচর এরকম দেখতে পাইনি।

এসসিজি টেস্টের পরের সন্ধ্যা কেমন কাটলো?

আমি ঘুমাতে পারি নাই বললেই চলে। একদিকে পায়ে প্রচুর ব্যথা ছিলো আর অন্যদিকে খুব খুশি ছিলাম। মেসেজ আর ইন্টারনেট থেকে পাওয়া ভালোবাসায় আমি অভিভূত। আমি মনে হয় ১ ঘন্টা ঘুমাতে পেরেছি। পরের দিন সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আমি বলতে চাই এটা আমার দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফসল। যা আমি প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে করেছি। এখানে মানুষ আপনাকে দেখবে না আর প্রচুর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আর এখানে ১.৩ বিলিয়ন মানুষ দেখছে আপনি ঘরে ফিরছেন আর সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে আমি টেস্ট ম্যাচ বাচিয়েছেন। এই চিন্তাটাই প্রথম মাথায় এসেছে। প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার পর এই অর্জন সত্যিই আশ্চর্যজনক।

কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে কি আপনার দলে এতো জন ইনজুরি প্রাপ্ত ক্রিকেটার দেখেছেন?

না। এই সিরিজটি ছিলো একটি আবেগের যাত্রা। আমাদেরকে অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমরা সম্ভাব্য সব কিছু দেখেছি। যা আপনি একটি সিরিজে দেখতে পারেন। দলের স্টাফরা যেভাবে দলকে পরিচালনা করছিলো তাতে তারা একবারের জন্যও বিচলিত হননি। এক মুহুর্তের জন্য আশাও ছাড়েনি। তারা বিশ্বাস করে যে, প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন, আমরা ভারতীয় দল মাঠে শতভাগ দিতে পারবো। কোভিড পরিস্থিতির জন্য দল বড় ছিলো। কিন্তু এভাবে ক্রিকেটারদেরকে হারানো আসলেই দু:খজনক। এতে দলের ভারসাম্য হারিয়ে যায়। এতে করে আপনি দলে সঠিক ভারসাম্য,খুঁজে পাবেন না। আপনি যদি গ্যাবা টেস্টের দিকে তাকান,আমরা ওয়াশিকে (ওয়াশিংটন সুন্দর) নিয়ে ঝুঁকি নিয়েছি। যদিও গত তিন বছরে সে প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাচ খেলেনি। সে আমাদেরকে খেলতে দেখেছে, নেটে দেখেছে। তাই তারা জানে আমরা কি করতে পারবো। তাদের কাজ সঠিক ভারসাম্য খুঁজে বের করা। তারা জানে যে খেলবে সে ভালোভাবে খেলতে পারবে।

ফিজিও এবং ট্রেনারদের কিরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিলো? ড্রেসিং রুমের দৃশ্য কি রকম ছিলো?

ফিজিও এবং ট্রেনারদের অনেক বেশি কৃতিত্ব প্রাপ্য। তাদেরকে অনেকগুলো ইনজুরি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। তারা অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। কোনো অবস্থাতেই মনে হয়নি তারা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ বা আতঙ্কগ্রস্থ। ট্রেনার এবং ফিজিওরা খুব শান্তভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমরা এক সময় ঠাট্টা করে বলছিলাম আমাদের মনে হচ্ছে আমরা আহত যোদ্ধাদেরকে নিয়ে যুদ্ধ করতে এসেছি। এক সময় মনে হচ্ছিলো কেউই বাকি থাকবে না। চতুর্থ টেস্টে ফিজিও ট্রেনারদেরকেও খেলতে হবে। যাই হোক, মেডিকেল টিম দূর্দান্ত কাজ করেছে।

কখন দল বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলো আপনি সিডনি টেস্ট বাঁচাতে পারবেন?

আপনি যদি প্রথম সেশন দেখেন, বিশেষ করে দ্বিতীয় সেশনের বেশিরভাগ অংশ। আমরা কিন্তু জয়ের জন্য খেলছিলাম। অন্তত যেভাবে রিশভ (রিশভ পন্থ) এবং পূজারা (চেতেশ্বর পূজারা) খেলছিলো। সত্যি বলতে তারা আউট হওয়ার পরও আমি জয়ের কোনো সম্ভাবনা দেখছিলাম। আমার আগে থেকেই অ্যাশ (রবিচন্দন আশ্বিন) পিঠের ইনজুরিতে ভুগছিলো। দলের প্রয়োজনে জাদেজা মাত্র কয়েক ওভার ব্যাটিং করতে পারতো। ড্র তখনই হয়েছে যখন আমরা জানতে পারি অ্যাশ রান করতে পারবে না এবং আমি ইনজুরিতে পড়ি। আমরা জানতাম আমাদের শুধু সময় শেষ করতে হবে। সাথে প্রায় ৪৩ ওভার ব্যাটিং করতে হবে। ৪৩ ওভার (এক জুটিতে) ব্যাটিং করা সহজ নয়। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পঞ্চম দিনে শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে। আমি আর অ্যাশ একেবারে একটি বল, এক ওভার ব্যাট করছিলাম। প্রতি ওভারে আমরা আলোচনা করছিলাম আমাদের কি করা উচিত। আমাদের পরিকল্পনা আমাদেরকে সাহায্য করেছে। ড্রেসিংরুম থেকে আমরা বার্তা পাচ্ছিলাম। কিন্তু তার আগেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম অ্যাশ লায়নকে (নাথান লায়ন) খেলবে আর আমি পেস বোলারদেরকে মোকাবিলা করবো। সে লায়নকে ভালোভাবেই খেলছিলো। আর আমি হ্যামিস্ট্রংয়ের ইনজুরি নিয়ে স্পিন খেলতে পারতাম না। পরিকল্পনা ভালো মতই কাজ করেছে। পঞ্চম দিনের পিচে সে ভালোভাবেই লায়নকে মোকাবিলা করছিলো। আর আমি পেসারদের বিপক্ষে খুবই স্বাচ্ছন্দ্য ছিলাম।

পান্ত আউট হওয়ার আগে আপনি সাধারন ব্যাটিং করছিলেন। নাকি বলবেন জয়ের জন্য ব্যাটিং করছিলেন?

না না আসলে তা নয়। আমাদের মধ্যে কথা হয়েছিলো, আমরা স্বাভাবিক ব্যাটিং করবো। এতে করে যদি আমরা জয়ের কাছাকাছি যাই, তারপর এটা নিয়ে কথা বলবো। জয় তাড়া করা বা অন্য কিছু নিয়ে আমরা ভাবিনি।

কিন্তু রিশভ যেভাবে খেলছিলো তা অসম্ভব ছিলো না। সে তার স্বাভাবিক খেলা খেলছিলো। জয় বা ড্রয়ের চেয়ে আমাদের স্বাভাবিক খেলাটাই গুরুত্বপূর্ণ। ৯৮ ওভার অনেক দীর্ঘ সময়। এই সময়ে কি ঘটবে তার জন্য আপনি পরিকল্পনা বা ভবিষ্যতবাণী করতে পারবেন না। আমরা শুধু দেখতে চাচ্ছিলাম কি ঘটে। তারপর আমরা পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে চেয়েছিলাম।

মানে যদি পান্ত রক্ষণাত্মক খেলতো, তাকে আউট হতে হত। তাকে এটাও জানতে হত….

আপনি প্রথম সেশন থেকেই ড্রয়ের জন্য খেলতে পারেন না। আপনার মনে রাখতে হবে সে ১৩০ বল খেলেছিলো। যদি সে তার স্বাভাবিক খেলা না খেলতো তাহলে প্রথম সেশন থেকেই  প্রতিপক্ষ বোলাররা রাজত্ব করতো। সে যেভাবে খেলেছে, সত্যিই অসাধারণ।

আপনি কি তৎক্ষণাৎ জেনেছেন আঘাত গুরুতর ছিলো? যদি জানতেন জোর করে খেললে দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের বাইরে যেতে হবে?

আমি তখনই জানতে পেরেছিলাম। আর এটাও জানতাম ইনজুরির কারণে আমার সিরিজ শেষ। আমি জানতাম এটা ক্রাম্প বা ছোটো খাটো কোনো বিষয় নয়। আমি ভালোমতই জানতাম আমার হ্যামিস্ট্রংয়ের সমস্যা হয়েছে। কারন আগেও এই রকম হয়েছিলো। আমি জানি এই ইনজুরির ব্যথা কি রকম। আমি হাটতে বা দৌড়াতে পারছিলাম না। আমি জানতাম কিছু ছিড়ে গিয়েছে।

আমি জানতাম আমি দলের জন্য কিছু করতে পারবো। আর যতই সমস্যা হোক না কেন আমার এটাই উপযুক্ত সময়। একদিক থেকে এই ইনজুরি আমাকে মনের দিক থেকে স্বচ্ছ করেছে। আমি এটাও জানতাম আমাকে শুধু শরীরের মাধ্যমে খেলতে হবে এবং অন্য কিছু করতে হবে না। কারন আমি রান করতে চাচ্ছি না আর রান করতে পারবোও না। এই বিষয়টি আমার দিকে আশা বলগুলো মোকাবিলা করতে সহজ করেছে।

যখন অশ্বিন ক্রিজ থেকে বের হলো আপনাকে দ্রুত এক রান দিতে চেয়েছিলো। আপনি প্রায় রান আউট হতে যাচ্ছিলেন…

এটার আগে আমি অ্যাশকে বলেছিলাম আমি রান নিতে পারবো না। ও সহজাতভাবে রান নিয়ে ছিলো। আর এটা আমার পছন্দও ছিলো না। এই রানের আগে আমি জানতাম আমি আস্তে আস্তে দৌড়াতে পারবো। রান নেয়ার পর অ্যাশকে বললাম দেখো আমি আস্তে আস্তেও দৌড়াতে পারছি না। আমি শুধু হাটতে পারি, তাও অনেক ব্যথা হচ্ছে। তখন সে বললো আচ্ছা ঠিক আছে রান নিতে হবে না, ওভার শেষ করে খেলো।

সে কি ভালো তেলেগু বলতে পারে? নাকি আপনি ভালো তামিল বলতে পারে?

সে ভালো তেলেগু বলতে পারে। আমি তামিল বলতে পারি না। আমি শুধু তামিল বুঝি।

কিন্তু আমরা টিভিতে শুধু তামিলই শুনেছি।

সে তেলেগুও বলেছিলো। তামিল ভাষায় সে বলছিলো “আড্ডু মামা,আড্ডু মামা”। আড্ডু মামা এর অর্থ খেলো। সে দুই ভাষাই বলছিলো।

আপনি কি “দশ-দশ বল” গুনছিলেন?

আমি আমার ছয়টি বল গুনছিলাম। আমার ছয়টি বল খেলা শেষ হলে অপেক্ষা করছিলাম। কারণ অ্যাশ তার ছয়টি বল খেলবে। আর আমি ৪ মিনিটের বিরতি পাবো। আমরা বিশ্বাস করছিলাম, সেশন শুরু হলে আমরা শুধু ব্যাট করবো। কিন্তু এরপর শেষ ঘন্টার ওভারের সময় আমাদের লক্ষ্য আরো কঠিন হতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা আসলেই তা করতে পেরেছি। এর আগে আমরা শুধু ব্যাটিং করছিলাম এবং সময় নিচ্ছিলাম। আর চেষ্টা করছিলাম যত দ্রুত সম্ভব ৬ টার কাছাকাছি যেতে। শেষ ঘন্টায় আমরা জানতাম বিশেষ কিছু ঘটতে যাচ্ছে।

আপনি কি জানতেন আপনি বিশেষ কিছুর দ্বারপ্রান্তে এসেছেন? এটা কি আপনার মানসিকতার পরিবর্তন করেছে?

ঠিক। এই সময়ে যোগাযোগটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এর আগে আমরা খুব কম কথা বলেছি। আমরা জানতাম আমরা কাছাকাছি এসেছি। আর এটা কিছু সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমরা পরস্পরকে উৎসাহ দিচ্ছিলাম। আর তখনই বেশি কথা হচ্ছিলো।

চা বিরতিতে আপনি কি করছিলেন?

আমি ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়েছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম বিশেষ কিছু করতে হবে। আমার দৃঢ়তা দেখাতে হবে। তাই আমি আড়াই ঘন্টা ব্যাটিং করতে পেরেছিলাম।

আপনি কতটা ব্যথানাশক নিয়েছেন?

প্রথমবার যখন ইনজুরিতে পড়ি তখন ব্যথানাশক খেয়েছিলাম। আর চা বিরতিতে ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়েছিলাম।

ব্যথানাশক কাজ করতে ১৫-২০ মিনিট সময় নেয়,তাই না?

হ্যাঁ।  চা বিরতিতে আমি ইনজেকশন নিয়েছি। চা বিরতির পর ব্যথা অনুভব করছিলাম না। কিন্তু ডান পা দূর্বল অনূভূত হচ্ছিলো। আমি ডান পায়ের অস্তিত্ব বুঝতে পারছিলাম না। ব্যথানাশকটির কারণে দাঁড়ানো সময় আমার কোনো ব্যথা হয়নি। তবে আমি পায়ে আঘাত করার পরও আমার ডান পায়ের অস্তিত্ব পাচ্ছিলাম না।

কোনো পর্যায়ে কি মনে হচ্ছিলো হেরে যেতে পারেন?

আমার ক্যাচ যখন ফেলেছিলো (টিম পেইন)। মিচেল স্টার্ক দূর্দান্ত একটি স্পেল করছিলো। সে বলে রিভার্স সুইং করাচ্ছিলো এবং বল দেরিতে আসছিলো। এই পর্যায়ে আমার মনে হয়েছে লক্ষ্য আরাও মজবুত হতে হবে। আপনি যদি ম্যাচের দিকে তাকান এই সময়ে আমরা ঝামেলায় ছিলাম। শুরুতে অ্যাশ শর্ট বলে অস্বস্তিতে ছিলো। পরে স্বাচ্ছন্দ্যমত খেলতে পারছিলো।

সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ান বোলিং আক্রমণ মোকাবিলা কতটুকু কঠিন ছিলো?

তারা যে উচ্চতা থেকে যে গতিতে বল করে তা সরাসরি স্ট্যাম্পে আঘাত করে। এটা চ্যালেঞ্জিং, তবে আমরা এই সিরিজে এটা খেলে দেখিয়েছি। আপনি যদি চ্যালেঞ্জ নেন তাহলে আপনি যেকোনো বোলারকে বুঝতে পারবেন। আমরা ঠিক তাই করেছি। তারা যেসব খারাপ বল করেছে সেগুলো থেকে রান করেছি। যদিও তারা খুব কম খারাপ বল করেছে। যখন আপনি ৭০-৮০ ওভার বল করবেন তখনই আপনি অল্প কিছু রান করতে পারবেন।

প্যাট ক্যামিন্সের মেশিনের মত বল করেছে। সে কোনো রানই দেয় নি…

এবং সে সঠিক লেন্থে বল করেছে। এমন না যে সে বল করতে আসলো আর যেকোনো জায়গায় বল করলো। সে সব বল সঠিক জায়গায় করে। আর তার বল ব্যাটের উপরের অংশে লাগে। তাই আপনাকে তাকে খেলার জন্য দ্বিগুণ মনযোগী হতে হবে।

লোকজন স্ট্রাইক রেট এবং স্ট্রাইক পরিবর্তন নিয়ে কথা বলে। আপনার কি বলা উচিত,ওদের বিপক্ষে খেলা কতটা কঠিন….

আপনি শুধুমাত্র এর অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। আপনি এটা ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। তাদের বিপক্ষে ব্যাট করার অনুভুতি ব্যাখ্যা করা যায় না।

সিরিজে আপনি কি ব্যাটিংয়ে ছোটো কোনো পরিবর্তন এনেছেন?

শেষ টেস্টে (সিডনি টেস্ট) জশ হ্যাজলেউডের বিপক্ষে ব্যাটিং করার সময় ছোটো পরিবর্বতন করেছি। আমি ক্রিজের বাইরে এসে ব্যাট করছিলাম। সে এমন একজন বোলার যে কিনা একই লেন্থে বল করে। আমি চাইছিলাম সে যেন ভিন্ন লেন্থে বল করে। এটা ট্যাকটিক্যালি একটা পরিবর্তন ছিলো। অন্য ক্ষেত্রে আমি আগের মত ব্যাট করছিলাম যেটা আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং নিউজিল্যান্ডে করেছি। আমার সব সময় মনে হয়েছে আমি ভালো ব্যাট করছি। কিন্তু প্রথম দুই টেস্টে রান পাচ্ছিলাম না। প্রথম টেস্টে ভালো বলে আউট হয়েছিলাম। দ্বিতীয় টেস্টে আমি উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছিলাম। সিডনি টেস্টের প্রথম ইনিংসে দূর্ভাগ্যবশত রান আউট হয়েছি। কত রান করছি সেটা ব্যাপার না,কিন্তু ভালো ব্যাটিং করছিলাম।

আপনি কি মনে করেন সিডনি টেস্টের প্রথম ইনিংসে রান হচ্ছিলো?

আমি বলবো না যে রান হচ্ছিলো। এতো বিপদজনক রান নেয়ার প্রয়োজন ছিলো না। হ্যাজলেউড দূর্দান্ত ফিল্ডিং করেছে। উইকেটে ভালো খেলছিলাম,অপেক্ষা করা উচিত ছিলো। তাহলে পূজারার সাথে জুটিতে বড় অঙ্কের রান করতে পারতাম। কিন্তু আমার জন্য এটা খারাপ একটা মুহুর্ত্ব ছিলো।

আপনি যদি এ বিষয়ে চিন্তা করেন,আপনি কি কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পান। কেন টেস্ট ক্রিকেটে এটা (রান আউট) ঘটে?

আমার মনে হয় না আমি পারবো। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় এক রান আছে। এক মুহুর্ত্বেই আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন। কারণ আমি এগিয়েছি আর আমার গতিও আছে। আর শেষের দিকে বিপদটা আমারই ছিল। আমি ভাবছিলাম আমি পৌঁছাতে পারবো। আমি জশের কাছ থেকে এইরকম ফিল্ডিং আশা করি নাই।কারন সে বোলিং স্পেলের মধ্যে ছিলো। সে তিন-চার ওভার বলও করেছিলো। সে দৌড়ে এসেছিলো এবং আমাকে আউট করেছিলো। তাকে কৃত্বিত্ব দিতেই হবে। কিন্তু আমি দুঃখিত কারণ রান নেয়াটা অপ্রয়োজনীয় ছিল।

মুহুর্তের মধ্যে আপনি ফিল্ডার নির্বাচন করেন?

হ্যাঁ। আমি ঠিক এটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু এটা সফল হয়নি।

ঘরের মাটিতে একটি মাত্র টেস্ট খেলেছেন। আপনি ঘরের মাটিতে আরেকটি টেস্ট সিরিজ মিস করতে যাচ্ছেন। ক্যারিয়ারে এই মুহুর্তে যা করেছেন তাতে কি সন্তুষ্ট?

আমি সত্যিই এই দলের সদস্য হতে পেরে খুশি। দেশের বাইরে টেস্ট জয়ো দলের সদস্য হতে পেরে গর্বিত। আর টিম ম্যানেজমেন্ট আমার প্রতি যে বিশ্বাস দেখিয়েছে তাতে আমি ধন্য। আমি পারফর্ম করে আস্থার প্রতিদান করতে চাই।হোক সেটা ঘরের মাটিতে অথবা বাইরে।

আপনি কি শেষ টেস্ট পুরোটা দেখেছেন?

হ্যাঁ। আমি সকালে ৬ টায় ঘুম থেকে উঠেছি এবং পুরো ম্যাচ দেখেছি। আমি একটি বলও মিস করি নাই। দলের জয়ে আমি খুশি আর জয়ের মূলে থাকতে পেরেও খুশি।

ঐতিহাসিক সিরিজের অংশ হয়েও একা দেশে ফিরে আসা সত্যিই কষ্টকর।

আমি জানতাম গ্যাবার ঐতিহাসিক টেস্টের অংশ হতে পারবো না। তাই আমি ফিরে এসেছি। কারন আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব ফিট হতে। আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ দুই টেস্ট খেলতে। তাই ফিরে এসেছি।

তাহলে আপনাকে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে (এনসিএ) যেতে হবে?

আমি এখন এনসিএতে আছি। আমি গতকাল এসেছি। আগামীকাল থেকে রিহ্যাব শুরু করবো।

 

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link