এক সোমবারে বদলে যাওয়া ভারতীয় ক্রিকেট

দিনটি ছিল সোমবার। আজ অবধি কোনো বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল সোমবারে হতে দেখিনি, কিন্তু এদিন দেখলাম। গোটা টুর্নামেন্টে কত মুহূর্ত তৈরি হল। প্রথম ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সাথে টাই, তারপরে সেই বোল আউট, যা পাকিস্তানী বোলার রা আউটসুইং, লেগ স্পিন ইত্যাদি করে হাস্যকর করে তুললেন।

দিনটি ছিল সোমবার। আজ অবধি কোনো বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল সোমবারে হতে দেখিনি, কিন্তু এদিন দেখলাম। গোটা টুর্নামেন্টে কত মুহূর্ত তৈরি হল। প্রথম ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সাথে টাই, তারপরে সেই বোল আউট, যা পাকিস্তানী বোলার রা আউটসুইং, লেগ স্পিন ইত্যাদি করে হাস্যকর করে তুললেন।

তারপরে ইংল্যান্ডের সাথে সুপার সিক্সের ম্যাচে যুবরাজ সিংয়ের সেই ১২ বলে হাফ-সেঞ্চুরি, স্টুয়ার্ট ব্রড কে মারা ছয় ছক্কা সহ, যা আজও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রেকর্ড। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ক্লোজ ম্যাচে ছিটকে দিয়ে সেমিফাইনালে আবার অস্ট্রেলিয়া এবং যুবরাজ সিংহের ৩০ বলে জাদুকরী ৭০ রানে ভর করে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। সেদিন দেখেছিলাম, উইকেটের পিছনে এক যুবকের বরফশীতল মস্তিস্ক।

বোলারদের দুর্দান্তভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া যারা এক সময় হেইডেন ও সাইমন্ডস এর বিধ্বংসী ব্যাটিং এ ভর করে জিতে যাবে মনে হচ্ছিলো, তাদের ধ্বসিয়ে দিলেন। শেষ ওভারে তাদের জেতার আশা ছিলও না। কজন ক্রিকেটপ্রেমী মনে রেখেছেন জানি না, কিন্তু সেমিফাইনালেও শেষ ওভার কিন্তু করেছিলেন যোগিন্দর শর্মা।

ভারতীয় ক্রিকেটে একটা কথা খুব চালু, যে ফাইনালে শেষ ওভার যোগিন্দর কে দিয়ে ফাটকা খেলেছিলেন ধোনি যেটা খেটে যায়। কিন্তু সেমিফাইনালেও যোগিন্দর কে দিয়ে চাপের শেষ ওভার করিয়ে ধোনি দেখে নিয়েছিলেন যে ছেলেটা বলটা স্লগ ওভারে জায়গায় রাখতে পারে কিনা। ২২ রান দরকার ছিল, যোগিন্দর দেন মাত্র ৬ রান, শেষ বলে একটা চার সহ এবং তুলে নেন ২ উইকেট।

যাক, আশা যাক ফাইনালের কথায়। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান ও উঠেছে ফাইনালে, যাকে বলে একদম হাইভোল্টেজ ম্যাচ। সোমবারে আমার একটা ইন্টারভিউ ছিল, পিডব্লিউসি-তে। সকাল থেকে শুরু হলো বৃষ্টি। ফাইনাল আবার বিকেলের দিকে খেলা।

জানি না ইন্টারভিউ দিতে গেলে কখন আবার ফিরবো, বৃষ্টিতে সেক্টর ফাইভ তখন জলে ডুবে থাকতো। ঘুম থেকে উঠে অফিস তো গেলাম ই না, উল্টে পিডব্লিউসি তে ফোন করে জানালাম আমার শরীর খুব খারাপ, আজকে ইন্টারভিউ দিতে যেতে পারবো না।

এইচ আর খুবই অসন্তুষ্ট হলেন, বললেন পরে তিনি আবার আমার ইন্টারভিউ শিডিউল করবেন। আমি জানতাম করবেন না, গত ১৪ বছরেও সেই কল আর আসেনি। যাই হোক, বিকেল ৫.৩০ থেকে ম্যাচ শুরু। ভারত টস জিতে ব্যাটিং নিল, এবং গোটা টুর্নামেন্টে ভালো খেলে এসে ফাইনালে ফ্লপ করলো। গৌতম গম্ভীরের ৭৫ না থাকলে সেদিন ভারত জেতা দূরের কথা, লড়াই ও করার জায়গায় যায় না।

কিন্তু ভারত ১৫৭ করলো, এবং পাকিস্তান একের পর এক উইকেট হারিয়েও মিসবার কল্যানে শেষ ওভারে ১৩ রান, হাতে এক উইকেট অবস্থায় পৌঁছে গেল। যারা শুধুই ফাইনাল ম্যাচ টা দেখেছিলেন, গভীর রাতের সেমিফাইনালটা দেখেন নি, তারা দেখলেন অচেনা এক ছেলে যোগিন্দরের হাতে বল তুলে দিলেন ধোনি। ফাটকা? হবেও বা।

এর পিছনের ক্রিকেটিং লজিক নিয়ে ধোনি আর সৌরভ ভক্তদের মধ্যে অনেক বিতর্ক হয়েছে, তাই সেখানে আর ঢুকছি না। তবে দ্বিতীয় বলে ছয় খেয়েও পরের বলটা স্লোয়ার দিয়ে মিসবাহ কে শ্রীশান্তের হাতে ধরা পড়ান তিনি। আমি নিজের চোখে প্রথম বিশ্বকাপ জয়, সে হোক না টি-টোয়েন্টি, দেখি। এর পর থেকে যতবার ভেবেছি এই দিনটার কথা, একবারও ইন্টারভিউ দিতে না যাবার জন্য আক্ষেপ হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link