ভারত-পাকিস্তান সম্মিলিত সেরা টি-টোয়েন্টি একাদশ

২০২৫ সালটা পাকিস্তান ক্রিকেট দলের জন্য ছিল রোলার-কোস্টার যাত্রার মতো। কখনো উত্থান, কখনো হতাশা—সব মিলিয়ে নাটকীয় এক বছর কাটিয়েছে তাঁরা। অন্যদিকে ভারত ছিল অনেকটাই স্থিতিশীল, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। বিশ্বসেরা হিসেবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে তাঁরা।

সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তান এশিয়া কাপ ২০২৫-এ রানার্সআপ হয়, পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ ও শ্রীলঙ্কা–জিম্বাবুয়েকে নিয়ে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে দাপুটে জয় পায়। ভারত সেই এশিয়া কাপেই শিরোপা জিতে নেয় এবং বছরজুড়ে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিজেদের প্রস্তুতির জানান দেয়।

এই প্রেক্ষাপটে বছর শেষের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে ২০২৫ সালের জন্য একটি ভারত–পাকিস্তান যৌথ টি-টোয়েন্টি একাদশ তৈরি করেছে খেলা ৭১। একাদশে ওপেনিংয়ে জায়গা পেয়েছেন ভারতের অভিষেক শর্মা ও পাকিস্তানের শাহিবজাদা ফারহান।

২০২৫ সালে এই দুই ব্যাটারই ছিলেন দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে সফল। অভিষেক খেলেছেন ২১ ইনিংস, করেছেন ৮৫৯ রান, গড় প্রায় ৪৩ আর স্ট্রাইক রেট অবিশ্বাস্য ১৯৩-এর কাছাকাছি। ফারহান ২৬ ইনিংসে ৭৭১ রান করেছেন।

এশিয়া কাপে দুজনই ছিলেন নিজ নিজ দলের ফাইনাল যাত্রার বড় ভরসা। ফারহান ফাইনালে ফিফটি করেন, আর অভিষেক টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। বিপরীতে শুভমান গিল ও বাবর আজম পুরো বছর জুড়েই ব্যর্থ। গিলের গড় নেমে আসে ২৫-এর নিচে, বাবরের স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ১১৪-এর মতো। ফলে এই দুই বড় নামকে বাদ দিয়ে ওপেনিংয়ে অভিষেক ও ফারহানকে নেওয়ায় দ্বিধা রাখেননি নির্বাচকরা।

মিডল অর্ডারে জায়গা পেয়েছেন পাকিস্তানের সায়িম আয়ুব, ভারতের তিলক ভার্মা, সালমান আলী আঘা ও হার্দিক পান্ডিয়া। ব্যাট হাতে এশিয়া কাপে ব্যর্থ হলেও অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের কারণে সায়িম আয়ুব দলে ঢুকেছেন। পজিশন চেঞ্জ করে তাঁকে তিন নম্বরে নামানো হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বল হাতে তিনি ছিলেন ভয়ংকর—২০২৫ সালে টি-টোয়েন্টিতে ২১ উইকেট নিয়েছেন মাত্র ৬.৭৬ ইকোনমিতে। তিলক ভার্মা ছিলেন ভারতের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটারদের একজন। ১৮ ইনিংসে ৫৬৭ রান করে গড় দাঁড় করান ৪৭-এর ওপরে, আর এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তার ফিফটি ভারতের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রাখে।

দলের অধিনায়ক করা হয়েছে সালমান আলী আঘাকে। সূরিয়াকুমার যাদব অধিনায়ক হিসেবে সফল হলেও ব্যাট হাতে ভয়াবহ ব্যর্থতার কারণে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আঘা ২০২৫ সালে ৬২৫ রান করেছেন পাঁচটি ফিফটিসহ এবং পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা ছিলেন। যদিও, তাঁর স্ট্রাইক রেট নিয়ে শঙ্কা ছিল।

মন্দের ভাল হিসেবে তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ফিনিশারের ভূমিকায় আছেন হার্দিক পান্ডিয়া। ব্যাট হাতে দ্রুত রান তোলার পাশাপাশি বল হাতে ১২ উইকেট নিয়ে তিনি অলরাউন্ডার হিসেবে স্বাভাবিক পছন্দ।

অলরাউন্ড বিভাগে পাকিস্তানের মোহাম্মদ নওয়াজ নি:সন্দেহে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন। ২০২৫ সালে তিনি শুধু ৩৬ উইকেটই নেননি, ব্যাট হাতে করেছেন ৩৬২ রান। তাকে স্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে দলে রাখা হয়েছে।

একাদশে আরেকজন অলরাউন্ডার রাখার সুযোগ নেই, উইকেটরক্ষক হিসেবে সাত নম্বরে খেলবেন মোহাম্মদ হারিস। বছর জুড়ে তিনি টি-টোয়েন্টিতে এক সেঞ্চুরি আর  এক হাফসেঞ্চুরিতে করেন ৪২৯ রান।

বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দেবেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। ২০২৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট তারই—২৬টি। তার সঙ্গে থাকছেন ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ, তিনি ১১ ইনিংসে নেন ১৪ উইকেট। স্পিন আক্রমণের মূল ভরসা ভারতের বরুণ চক্রবর্তী, যিনি ২০২৫ সালে ৩৬ উইকেট নিয়ে ছিলেন ভারতের সেরা টি-টোয়েন্টি বোলার।


একাদশটা দাঁড়াচ্ছে এমন – অভিষেক শর্মা, শাহিবজাদা ফারহান, সায়িম আইয়ুব, তিলক ভার্মা, সালমান আলী আঘা (অধিনায়ক), হার্দিক পান্ডিয়া, মোহাম্মদ হারিস, মোহাম্মদ নাওয়াজ, শাহীন আফ্রিদি আর্শদ্বীপ সিং, বরুণ চক্রবর্তী।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link