আইপিএল শেষ হওয়ার দিন দশেকের মাথায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। আগের বারের রানার্সআপ ভারতের এমনিতেই এবার শিরোপার দিকে চোখ। তবে লাল বলের ক্রিকেটীয় এ লড়াইয়ের আগে নিজেদের ঝালাই করে নেওয়ার পর্যাপ্ত সময় কিংবা সুযোগ, কোনোটাই পায়নি টিম ইন্ডিয়া।
আগামী ৭ জুনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এ ফাইনাল ম্যাচটা গড়াবে ঐতিহাসিক ওভালে। উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য ওভালের উইকেট কিংবা কন্ডিশন, দুটোই প্রতিকূলে থাকে। ভারতীয় দলের চিন্তাটা এখানেই। এমনিতেই ঘরের বাইরের মাটিতে ফাইনাল। তার উপর বেশির ভাগ ক্রিকেটারই নির্দিষ্ট ভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাননি।
প্রায় দুই মাস ধরে চলমান আইপিএলই তাই শেষমেশ অনুশীলনের অংশ হয়ে গিয়েছে। তবে সাদা বলের ক্রিকেট থেকে ভিন্ন সংস্করণে মানিয়ে নেওয়াটা কি এতই সহজ হবে? প্রথমত, ম্যাচ হবে ডিউক বলে। দ্বিতীয়ত, ডিউক বলে পেসাররা সিম মুভমেন্ট দারুণ পান।
সব মিলিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে প্রস্তুতি দিয়ে লঙ্গার ভার্শন ক্রিকেটে কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ভারতের সাবেক ব্যাটিং গ্রেট স্বয়ং সুনীল গাভাস্কারই দলের প্রস্তুতি নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
তবে ভারতের জন্য ইতিবাচক ব্যাপার হলো, ফাইনালের আগে সম্ভাব্য একাদশের প্রায় সবাই দারুণ ছন্দে রয়েছেন। ওপেনার শুভমান গিল তো ক্যারিয়ারের একদম সেরা সময় পার করছেন। এমনিতে গোটা বছর জুড়ে তিন ফরম্যাটেই নিজের ব্যাটিং দ্যুতি দেখাচ্ছেন।
সেই ফর্ম টেনে এনেছিলেন সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলেও। ৮৯০ রান করে মাথায় চড়িয়েছেন অরেঞ্জ ক্যাপও। তাছাড়া, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে শুভমান গিলের সেঞ্চুরিও রয়েছে। তাই গিলকে নিয়ে আপাতত টিম ম্যানেজমেন্টের তেমন কোনো চিন্তার কারণ নেই।
দলীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবারের আইপিএলে টপঅর্ডার ব্যাটার হিসেবে তেমন রান করতে পারেননি ঠিকই। তবে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাঁর ব্যাট হেসেছে। যেটা টিম ইন্ডিয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এবারের আইপিএলে রানফোয়ারা ছুটিয়েছেন বিরাট কোহলিও। ৬ বছর বাদে, আবারো কোনো আইপিএলের আসরে ৬ শতাধিক রান করেছেন। একই সাথে, টেস্ট ক্রিকেটেও বহু দিনের সেঞ্চুরিখরা এ বছরেই কাটিয়েছেন। বিরাট কোহলির মতো রানে ফিরেছেন আজিঙ্কা রাহানেও। রঞ্জি দিয়ে শুরু করেছিলেন। এরপর আইপিএল দিয়ে বলতে নিজের ক্যারিয়ারকে একটা পুনর্জন্ম দিয়েছেন।
টেস্ট স্পেশালিস্ট চেতেশ্বর পুজারা এবারের আইপিএল খেলেননি। তবে অন্যান্য ক্রিকেটারদের চেয়ে তাঁর প্রস্তুতিটাই বরং যথার্থ হয়েছ। আইপিএল চলাকালীন এ ক্রিকেটার বেছে নিয়েছিলেন কাউন্টি ক্রিকেট। সাসেক্সের হয়ে খেলেছেন গোটা সাতেক ম্যাচ। যার মধ্যে আবার তিনটি শতরানের ইনিংস ছিল। ফাইনালের আগে ইংলিশ কন্ডিশন তাই আগেই রপ্ত করা হয়ে গিয়েছে এ ব্যাটারের।
বোলারদের মধ্যে মোহাম্মদ শামি আর মোহাম্মদ সিরাজ রয়েছেন দুরন্ত ফর্মে। ২৮ উইকেট নিয়ে এবারের আইপিএলে সর্বোচ্চ উইকেট প্রাপ্তিতে নিজের নাম লিখিয়েছেন মোহাম্মদ শামি। আর সিরাজের দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু প্লে-অফের আগেই বিদায় নিলেও বল হাতে তিনি ছিলেন যথারীতি দুর্দান্ত। ১৪ ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে ছিল ১৯ উইকেট।
১৯০ রান, সাথে ২০ উইকেট— অলরাউন্ডিং নৈপুণ্যে চেন্নাইকে শিরোপা জয়ের পথে দারুণ অবদান রেখেছেন রবীন্দ্র জাদেজা। এমনিতে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে অজিদের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেই ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন এ অলরাউন্ডার। তাই আসন্ন ফাইনাল সামনে রেখে রবীন্দ্র জাদেজার ফর্ম নিয়ে আপাতত চিন্তার কোনো কারণ নেই।
এ ছাড়া, স্কোয়াডে থাকা ইশাণ কিষান, সুরিয়াকুমার যাদব, অক্ষর প্যাটেলরাও এই মুহূর্তে দারুণ ছন্দে রয়েছেন। তাই প্রস্তুতির সময় স্বল্পতা থাকলেও টিম ইন্ডিয়ার তেমন চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। আগেরবার শিরোপার খুব কাছে গিয়ে ফিরে আসা টিম ইন্ডিয়া এবার শিরোপা জয়ের দিকে চোখ রাখতেই পারে।
প্রায় এক দশক হতে চলল, আইসিসির কোনো শিরোপা ভারতের ঘরে যায়নি। সেই ‘না পাওয়ার’ ক্ষুধাই হয়তো ভারতকে এবার একটা রসদ জোগাবে। ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপের আগে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এ শিরোপা নিশ্চিতভাবেই বিশেষ কিছু হবে টিম ইন্ডিয়ার জন্য।