রোগটা কী!

পরপর দুটো একদিনের ম্যাচে হার এবং সেই সুবাদে সিরিজ হার। ফলস্বরূপ টেস্ট সিরিজের পরে ওডিআই সিরিজও হার। সমালোচনার ঝাঁজ যে তীব্র হবে এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু তা বলে যেভাবে বা যে ভঙ্গিমায় বলে দেওয়া হচ্ছে যে অধিনায়ক রাহুল ব্যর্থ বা তাকে দিয়ে চলবে না সেটা বোধহয় পুরোপুরি ঠিক নয়।

প্রথমত মনে রাখতে হবে রাহুল কিন্তু এই মুহূর্তে স্টপগ্যাপ অধিনায়ক। রোহিতের পরিবর্তে অধিনায়কত্ব করছে। এবং এমন একটা দলের অধিনায়কত্ব করছে যে দলে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি রোগ রয়েছে এবং যে রোগের কারণে তিন বছর আগে বিশ্বকাপ পর্যন্ত হাতছাড়া করতে হয়েছে।

প্ৰকৃত চার নম্বর ব্যাটার না থাকা এবং প্ৰকৃত ষষ্ঠ বোলারের অভাব, যদিও দ্বিতীয় অভাবটা হয়তো বিশ্বকাপে এতটা প্রকট হয়নি। আর তাই হঠাৎ করে কে এল রাহুলকে পুরোপুরি কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা ভুল, পূর্বতন অধিনায়কও এর পুরোপুরি সমাধান করে যেতে পারেননি একটা দীর্ঘ সময় হাতে পাওয়ার পরেও। বিশেষত যে পরিস্থিতির মধ্যে তাঁকে অধিনায়কত্ব করতে হচ্ছে, একটা ভালো শুরুর জন্য এই পরিস্থিতি কোন অধিনায়কই বোধহয় আশা করেন না।

পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটটাকে সম্ভবত বব উলমারের থেকে ভালো কেউ বোঝেননি। এখানে খুব বেশি হার্ড হিটিং এর প্রয়োজন পরে না। নিজের দলের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এর সঙ্গে ব্যাটিং এর সময়ে প্রয়োজন প্রতি বলে সিঙ্গিলস আর তার সঙ্গে দু ওভারে একটা চার হলেও(এই হিসেবে ইনিংসে ২০টা ডট বল হলেও ক্ষতি নেই) যে রানটা হবে সেটার উপর ভিত্তি করে দশটার ভেতর সাড়ে আটটা ম্যাচ বেরিয়ে আসবে। আর অতীতে মাইকেল বেভান বা এখনকার বিরাট কোহলি চেজ মাস্টার হয়ে উঠেছেন প্রায় এই পদ্ধতিতেই। তাই দরকার একটা লম্বা এবং স্টেডি ব্যাটিং লাইন আপ।

মাথা ভারি ভারতীয় ব্যাটিংয়ের একদিনের ম্যাচের জন্য প্ৰকৃত চার নম্বরের অভাব বহুদিনের হলেও এই মুহূর্তে তার সবথেকে ভালো সমাধান রাহুল নিজে। কিন্তু তাকে এখানে ওপেন করতে হলো শুধুমাত্র রোহিতের চোট এর জন্য আর তাতে করে আবার ব্যাটিং লাইন এর মাথা আরও ভারি হয়ে গেলো। বিগত বিশ্বকাপের কথা যদি মনে করেন সেখানেও একই অবস্থা হয়েছিল একটা সময়ের পরে।

শিখর ধাওয়ানের চোট পাওয়ার পরে রাহুল ওপেন করতে চলে গেলেন আর নিচের ব্যাটিংটা দুর্বল হয়ে গেল, তাও সেখানে একজন মহেন্দ্র সিং ধোনি ছিলেন। অর্থাৎ যেটা উঠে আসছে সেটা হলো শুরুতে দুজন ওপেনার এর মধ্যে যেকোন একজনের অনুপস্থিতিতে তৃতীয় কাউকে ওপেনার হিসেবে ভাবতে হবে। রাহুলকে উপরে পাঠিয়ে দেওয়া কোন মতেই তার সমাধান নয়। আরও পরিষ্কার করে বললে পাঁচ এবং ছয়ে যেই খেলুক সে কিন্তু খুবই অনভিজ্ঞ এই মুহূর্তে। তাই সে যেন উল্টোদিকে কোহলি বা রাহুলের মতো একজনকে পায় ইনিংসের শেষ অবধি।

রোহিত ফিরে আসলে হয়তো এই সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে কিন্তু তারপরের অংশটা? হ্যাঁ মাঝে মধ্যে ভুলভাল শট খেললেও ঋষভ যেভাবে ব্রিসবেন টেস্ট শেষ করেছেন, কেপটাউন টেস্ট খেললেন তাতে মনে হয় অদূর ভবিষ্যতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও একজন প্ৰকৃত ফিনিশারের রোল প্লে করতে পারার সমস্ত সম্ভবনা তার মধ্যে রয়েছে আর কেমন হয় যদি তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় রবীন্দ্র জাদেজাকে?

হ্যাঁ, এখন হয়তো চোট কিন্তু সুস্থ হওয়ার পরে নিয়মিত ভাবে একটু উপরে ব্যাট করিয়ে দেওয়া যায় না জাদেজাকে? সীমিত ওভারের ক্রিকেট কিন্তু শুধু উইকেট তোলার খেলা নয়, এটা রান আটকানোর খেলাও। সেখানে যে বোলার ম্যাচ পিছু একটার বেশি উইকেট নেন, এই যুগেও পাঁচের কম ইকোনমি ধরে রাখতে সক্ষম হন, প্রধানত সাত আট নম্বরে নেমে ১৩টা হাফ সেঞ্চুরি করেন তাঁকে সুস্থ অবস্থায় উপেক্ষা করাটা স্রেফ বোকামি।

শন পোলক দলে আসার আগে বব উলমার বেশ কয়েকবছর নতুন বলে ডোনাল্ডের সঙ্গী হিসেবে রেখেছিলেন ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্স নামের একজনকে শুধুমাত্র তার নিয়ন্ত্রিত বা ইকোনমিকাল বোলিং এর জন্য। অশ্বিন কে সীমিত ওভারে অনিয়মিত ধরেই বলছি সম্ভবত বুমরা আর জাদেজা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোন ভারতীয় বলার নেই পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে যার ইকোনমি রেট পাঁচের কম। এখন দুজন বোলার যদি ওভার প্রতি পাঁচ রানের কম খরচ করেন তাহলে ২০ ওভারে খুব বেশি হলে ১০০ রান ওঠে।

বাকিরা ওভার প্রতি ছয় রান দিলেও লক্ষ্য ধরা ছোঁয়ার ভেতরে থাকে। জাদেজাকে দরকারে কয়েকটা ম্যাচ একটু উপরের দিকেও ব্যাট করতে পাঠানো যেতে পারে। যুক্তি বলছে ব্যর্থ হবেন না। সেই সঙ্গে মিটবে ষষ্ঠ বোলারের সমস্যাও, কোন ক্ষেত্রে পঞ্চম বোলারও। এভাবেই তৈরি হয়েছিল একটা জয়সূর্য বা একটা শেহবাগ। হ্যাঁ তেত্রিশ বছর বয়সটা একটু বেশি হলেও শেষ হয়ে যাওয়ার বয়স নয়। গত বিশ্বকাপে ঠিকঠাক ব্যবহার করা হয়নি, তার আগে বা পরেও নয়, এবার একটু হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link