ভারত-পাকিস্তান: পরিসংখ্যান কি বলে!

সন্নিকটে ক্রিকেটীয় মহাদ্বৈরথ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। এই ম্যাচের উত্তাপ ছড়িয়ে যায় উপমহাদেশ থেকে সেই পশ্চিম অবধি। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে ক্রিকেট সমর্থকেরা। তবে রাজনৈতিক কূটকৌশলের মারপ্যাচে দু’দল মুখোমুখি হয় কালেভদ্রে। আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্টই শেষ ভরসার জায়গায় ক্রিকেট ভক্তদের।

গত দুই বছরে মুখোমুখি হয়নি এই দুই দল। শেষ দেখা হয়েছিল ২০১৯ এর বিশ্বকাপে। তবে অপেক্ষার প্রহর আর দীর্ঘায়িত না করে মূলপর্বের গ্রুপ-২ এর দ্বিতীয় ম্যাচেই মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া তথা ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি ভারত-পাকিস্তান। এই ম্যাচকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ আকাশচুম্বি। তাই এই ম্যাচকে সামনে রেখে হচ্ছে বিভিন্ন রকমের কাঁটাছেড়া। কার জেতার সম্ভাবনা কত, কোন দল শক্তিশালী এ নিয়ে নানা তর্ক হলেও পরিসংখ্যান হতে পারে এ সকল তর্কের মূল উপজীব্য।

গেলো এক দশকে ক্রিকেট এগিয়েছে আপন গতিতে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েছে ভারত-পাকিস্তানের খেলার মান। উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে দু’দল। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছে পাঁচবার। ২০০৭ সালের রানার্সআপ ও ২০০৯ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দল পাকিস্তান একবারের জন্যও হারাতে পারেনি ভারতকে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারত পাকিস্তানের বিপক্ষে দেখিয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। গেল এক দশকে বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে ভারতকে কেবল তিন বারই হারাতে পেরেছে পাকিস্তান। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা দৌড়ে এই কৃতিত্বে নিজেদের অর্জনের পাল্লা ভারি করে পাকিস্তান।

গত এক দশকে ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণ টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের উন্নতি প্রশংসনীয়। গেল দশ বছরে তাঁদের জয় শতকরা হিসেবে ৫৯.৭ শতাংশ। ১২৯ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁদের জয়ের সংখ্যা ৭৭। তবে হারের সংখ্যা ৪৫। দুইটি ম্যাচ ড্র ও পাঁচটি ম্যাচের ফলাফল পায়নি দল। ম্যাচগুলোর ফলাফল নিজেদের পক্ষে আসলে পরিসংখ্যানের পাল্লাটা আরেকটু ভারী হতে পারতো বাবর আজমদের।

অপরদিকে গেলো দশ বছরে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের উন্নতি যেন ঈর্ষনীয়। আইপিএলে জাঁকজমকের ফাঁকে যে নিজেদের সার্বিক উন্নতি সাধন করে নিয়েছে ভারত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গেলো দশ বছরে ভারত ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্র সংস্করণে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ১১৫টি। ৬৩.৫ শতাংশ জয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে তাঁদের জয় ৭৩ ম্যাচে। ৩৭ ম্যাচে হারের দু:খস্মৃতি। সমান তিনটি ম্যাচ হয়েছে টাই এবং পরিত্যাক্ত। গেলো দশকের পরিসখ্যানেও ভারত এগিয়ে রয়েছে তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তান থেকে।

শেষ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পাকিস্তানের পারফর্মেন্স আশানুরুপ ছিলনা। দুইটি বিশ্বকাপেই তাঁরা বাদ পড়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে। পক্ষান্তরে ভারত শেষ দুই আসরে একবার সেমিফাইনাল ও একবার ফাইনালে উঠতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচে জিতেছিল দুইটি। ২০১৬ তে এসে অবস্থার হয় আরো অবনতি। তাঁরা তাঁদের বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ করে একটি মাত্র জয় দিয়ে।

কিন্তু ভারত ছিল ধারাবাহিক। বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও তাঁরা ২০১৬ তে গ্রুপ পর্ব পার করেছিল চার ম্যাচে তিন জয় নিয়ে। সেবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে  হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। ২০১৪ তে ফাইনালে উঠেছিল ভারত শতভাগ জয় নিয়ে। আফসোস ফাইনালে তাঁদেরকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা।

বিশ্বকাপের সাম্প্রতিক এবং অতীত পরিসংখ্যান সবকিছুই কথা বলছে ভারতের পক্ষে। তবে এ কথাও সত্যি নিজেদের দিনে পাকিস্তান ধারণ করতে পারে রুদ্রমূর্তি। তাই আসন্ন ম্যাচকে ঘিরে দুই দল চাইবে পরিসংখ্যান ভুলে নিজেদের সেরাটা দিয়ে টুর্নামেন্টে উড়ন্ত সূচনা করতে। অন্যদিকে সমর্থকদের প্রত্যাশা একটা শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের। তবে এতটুকুন নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায় চব্বিশ তারিখের ম্যাচে ভারত জিতুক কিংবা পাকিস্তান, ক্রিকেটের জয় সেদিন সুনিশ্চিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link