আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান প্রেডিকশন

ব্যাটিংয়ে যথেষ্ট ফাঁক ফোকর থাকলেও বোলিং যথেষ্টই শক্তিশালী বাবর আজমের দলের। আমির, ওয়াহাব না থাকলেও পেস বিভাগ হ্যারিস, হাসান, শাহীনদের নিয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী। পাক দলে মোহাম্মদ নওয়াজ এই অলরাউন্ডারের ওপর চোখ রাখতে হবে। স্লগ ওভারে ব্যাট হাতে কিংবা বাঁহাতি স্পিন দিয়ে আমিরশাহীতে নওয়াজ কিন্তু জ্বলে উঠতে পারেন। আর পাক দলের চারপাশে যতই বিতর্ক থাকুক পাকিস্তান চিরকালই আনপ্রেডিক্টেবল, আর এইরকম পাকিস্তান যে বরাবরই ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেটা কে না জানে।

ক্রিকেটে বিতর্ক শব্দটার সমার্থক বলে যদি কিছু হয় প্রথমেই কী মনে আসে? পাকিস্তান ক্রিকেট ছাড়া আর কিছু চট করে মাথায় আসছে না তো? হ্যাঁ সেটাই স্বাভাবিক, বিতর্ক আর পাকিস্তান ক্রিকেট – এই ব্যাপারটা বছরের পর বছর একদম হাত ধরাধরি করে চলে এসেছে।

মরু দেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য পাক দল রওনা হওয়ার আগে নানারকম তর্ক বিতর্কে আবারও যেন উথাল পাথাল সে দেশের ক্রিকেট। বিশ্বকাপের দল গঠনের দিনই হেড কোচ মিসবাহ আর বোলিং কোচ ওয়াকার একসাথে পদত্যাগ করলেন, শুধু তাই নয় বিশ্বকাপের পাক দল নিয়েও সে দেশে শুরু হলো তুমূল বিতর্ক।

মূল দলে কেন নেই শোয়েব মালিক, ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ আমির (যদিও মিসবাহর কোচিং এ খেলবেন না বলে অবসর নিয়েছেন), ফহিম আশরাফরা? মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র বা আসিফ আলী, যিনি নাকি যথেষ্ট পরীক্ষিত কিন্তু আসল সময়ে ব্যর্থ এরকমদের নিয়ে দল কেন গেল দুবাই? এমন হাজারো প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে লাহোর-করাচিতে। উত্তর খোঁজা যাক পাকিস্তান দল এবারে সত্যিই কতোটা শক্তিশালী নাকি বিতর্ক গুলো সত্যিই যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক, কেমন তাদের ফর্ম বা সম্ভাবনা।

এমনিতে টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে ভারতের ঠিক পরেই তিন নম্বরে থাকা দল পাকিস্তানের গত দু’বছরের পারফরমেন্স কিন্তু মোটের ওপরে খারাপ নয়। ২০২০ থেকে দেখলে ২৮ টা ম্যাচের মধ্যে হেরেছে মাত্র আটটা ম্যাচ, যদিও তার মধ্যে জিম্বাবোয়ে বা ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সারির দলের কাছে হার ও আছে, কিন্তু সামগ্রিক পারফরমেন্স আশাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। যদিও পাক দল শেষ দু’বছরে ৫-৬ জন মত খেলোয়াড় বাদ দিলে বেশিরভাগই দলে আসা যাওয়ার মধ্যে থেকেছেন, অর্থাৎ একটা ‘সেটলড লাইন আপ’ কিন্তু এর মধ্যে তাদের তৈরী হয়নি। তবুও বেশ কিছু তারকার ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের জন্য আশা জাগানোর কারণ থাকছে।

  • শক্তিমত্তা

পাকিস্তান দলের মূল শক্তি যদি কিছু হয় তা হলো দলের দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যান ও দুই ফাস্ট বোলারের জুটি। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে শেষ দু’ বছর ধরেই ওপেন করছেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। তর্কাতীত ভাবে এই দুইজনই পাক ব্যাটিংয়ের মূল শক্তি। এ বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুজনেই দারুণ দুটো সেঞ্চুরি করেছেন, এর সাথে মোহাম্মদ হাফিজ যদি মিডল অর্ডারে ২০২০-এর ব্যাটিং ফর্ম ধরে রাখতে পারেন পাক ব্যাটিং ঝলসাবেই।

নিউজিল্যান্ড সফরে ৯৯ রানের এক দারুন ইনিংস খেলা হাফিজ ৪০ বছর বয়সেও পাক ব্যাটিংয়ের মিডল অর্ডারে সবচেয়ে বড় ভরসা। গ্ৰুপে ভারত বা নিউজিল্যান্ড এর মত দলগুলোর বিরুদ্ধে ম্যাচে হাফিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। আর বোলিং বিভাগে হাসান আলী ও শাহীন আফ্রিদির পেস জুটি মরু শহরেও বড় ভরসা হতে যাচ্ছে, বিশেষ করে শাহীন আফ্রিদি গত ৩ বছর ধরেই পাকিস্তান ফাস্ট বোলিংয়ের প্রধান মুখ।

লেগ স্পিনার শাদাব খান বা বাঁহাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম ও আরব আমিরশাহীর কন্ডিশনে মারাত্মক হয়ে উঠতে পারেন। কম রান ডিফেন্ড করতে গেলে ইমাদের পাওয়ার প্লেতে আঁটোসাঁটো বোলিং খুব কাজে দেবে। আর পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় অ্যাডভান্টেজই হলো আরব আমিরশাহীর কন্ডিশন ও পিচ। পাকিস্তানের মাটিতে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে দুবাই, আবু ধাবিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা পাক খেলোয়াড় দের কাছে পিচ ও কন্ডিশন হাতের তালুর মত চেনা। সুতরাং প্রায় ‘হোম’ কন্ডিশনে পাকিস্তান কিন্তু যথেষ্টই মারাত্মক হওয়ার ক্ষমতা রাখে।

  • দুর্বলতা

পাক দলের দুর্বলতা খুঁজতে গেলেই প্রথমেই যেটা মাথায় আসবে তা হলো টি-টোয়েন্টিতে একটা স্থায়ী লাইন আপ তৈরী না হওয়া। বিশেষত ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট এ। বাবর, রিজওয়ান আর হাফিজের পরে পাক ব্যাটিংয়ে ভরসার মুখ খুঁজতে মাইক্রোস্কোপ নিয়ে দেখতে হবে।

শোয়েব মকসুদ যতই পিএসএলে দারুন ব্যাটিং করুন, আন্তর্জাতিক ম্যাচে এখনও আহামরি হয়ে ওঠেননি। পাকিস্তান ফিনিশার হিসেবে হয়তো ব্যবহার করবে খুশদিল শাহকে, আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনিও এখনও পর্যন্ত দারুন কিছু করেননি। আর আজম খান বা আসিফ আলীর ঘরোয়া ক্রিকেটেও সাধারণ পারফরমেন্স থাকার পরেও কিকরে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেলেন সেটা একপ্রকার রহস্যই।

আসিফ আলী এমনিতে বিগ হিটার হলেও একদমই ধারাবাহিক নন, আর আজম খান ২য় কিপার হিসেবে দলে এসেছেন, ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে মাত্র ২২ গড় নিয়ে। স্কোরবোর্ডে বড় রান তুলতে বাবর, রিজওয়ান বা হাফিজরা একদিন ফেল করলে বড় দু:খ অপেক্ষা করছে পাকিস্তানের জন্য। আর ১৫০ এর বেশি রান তাড়া করতে বরাবরই পাকিস্তান সমস্যায় পড়ে, এবারেও বাবর, রিজওয়ানরা না বাঁচালে বড় রান তাড়া করতে গিয়ে নিয়মিতই বিপদে পড়তে পারে পাকিস্তান সে যতই চেনা কন্ডিশনে খেলুক।

  • পাকিস্তান দল ও তাঁদের সম্ভাবনা

পাক দল বিশ্বকাপ অভিযান শুরুই করছে ভারতের সঙ্গে মহা ম্যাচ দিয়ে। কোনোবার বিশ্বকাপে ভারতের সাথে না জিততে পারা পাকিস্তান এবার যদি জিততে পারে সেটা অঘটনই বলতে হবে। যদিও গ্ৰুপের বাকি ম্যাচ গুলোও কঠিন পরীক্ষা নেবে তাদের, তবুও বলা যায় নিউজিল্যান্ড ম্যাচটার ওপর অনেকটা নির্ভর করছে বাবর দের নক আউটে যাওয়া।

ব্যাটিংয়ে যথেষ্ট ফাঁক ফোকর থাকলেও বোলিং যথেষ্টই শক্তিশালী বাবর আজমের দলের। আমির, ওয়াহাব না থাকলেও পেস বিভাগ হ্যারিস, হাসান, শাহীনদের নিয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী। পাক দলে মোহাম্মদ নওয়াজ এই অলরাউন্ডারের ওপর চোখ রাখতে হবে। স্লগ ওভারে ব্যাট হাতে কিংবা বাঁহাতি স্পিন দিয়ে আমিরশাহীতে নওয়াজ কিন্তু জ্বলে উঠতে পারেন। আর পাক দলের চারপাশে যতই বিতর্ক থাকুক পাকিস্তান চিরকালই আনপ্রেডিক্টেবল, আর এইরকম পাকিস্তান যে বরাবরই ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেটা কে না জানে।

  • পাকিস্তান স্কোয়াড

বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান, সরফরাজ আহমেদ, মোহাম্মদ হাফিজ,  শোয়েব মাকসুদ, আসিফ আলী, ইমাদ ওয়াসিম, শাদাব খান, হাসান আলী, শাহীন শাহ আফ্রিদি, হ্যারিস রউফ, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, হায়দার আলী, ফখর জামান, মোহাম্মদ নওয়াজ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...