‘ডু অর ডাই’ এমন এক পরিস্থিতির দাঁড়প্রান্তে ছিলেন ভারতীয় দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার আজিঙ্কা রাহানে ও চেতেশ্বর পুজারা। ফর্মহীনতায় ভুগছেন ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের অভিজ্ঞ এই দুই স্তম্ভ। এই ফর্ম হীনতার মাঝেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে বিপর্যয়ের মুখে ব্যাট করতে নামে এই দুই ব্যাটার।
প্রথম ইনিংসে তারা দুইজনই ছিলেন ব্যর্থ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪ রানের মাথায় দুই ওপেনার ফিরে যান প্যাভিলনে। দলের ইনিংস সামলানোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেওয়ার বিকল্প ছিল না রাহানে ও পুজারার কাছে।
কিন্তু মূল মুশকিলটা তো দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের বাইশ গজ। সেই বাইশ গজটা যেন পেসারদের পুন্যভূমি। এর পাশাপাশি রয়েছে কাগিসো রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিডিদের মতো বিধ্বংসী বোলার। তাঁদের বিপক্ষে পেস সহায়ক উইকেটে টিকে থাকা বেশ দুষ্কর। কি করবেন পুজারা আর রাহানে। উত্তর খুঁজতে খানিক বিলম্ব হলেও ঠিক উত্তরটাই খুঁজে পেলেন। আক্রমণের জবাব তারা দুইজনের মিলে দিলেন পালটা আক্রমণ করে। থিতু হওয়ার পাশাপাশি রান করার সুযোগও খুঁজলেন রাহানে ও পুজারা।
দুইজনে মিলে তৃতীয় উইকেট জুঁটিতে যোগ করলেন ১১১ রান। দলের বিপর্যয় সামলে নিলেন। তাছাড়া দুইজনে তুলে নিলেন অর্ধশতক। রাহানের ২৫ তম ও পুজারার ৩২ তম। বিরুপ পরিস্থিতিতে তাঁদের এমন পালটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এর প্রশংসা করেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত। তাঁর মতে সঠিক পথটাই বেছে নিয়েছিলেন রাহানে ও পুজারা।
শ্রীকান্ত বলেন, ‘চাপের মুখে নিজেকে আড়ষ্ট না করে ফেলাই ভাল। তখন উচিৎ কাউন্টার অ্যাটাক করা। এমন দূর্বিষহ পিচে যেকোন একটা বলে আপনার নাম লেখাই থাকবে। সুতরাং তখন চেষ্টা করে পিচে টিকে থাকাটা স্রেফ বোকামি। রাহানে এবং পুজারা সেটা বুঝতে পেরেছে এবং সেটা বেশ ভাল একটি দিক।’
প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়া বোলারদের বাউন্সার বারংবার কাবু করেছে ভারতীয় ব্যাটারদের। সেই রোগের ঔষধ খুঁজে পেলেন রাহানে এবং পুজারা দ্বিতীয় ইনিংসে এসে। বাউন্সারে কাট শটের দারুণ ব্যবহার করলেন দু’জনে। সফলতাও পেয়েছেন তাঁরা। ‘কাট শটই একমাত্র শট যা এই ধরণের পিচে বেশ ফলপ্রসূ হয়।’ বলেন শ্রীকান্ত। পুজারা এবং রাহানের ব্যাটের উপর ভর করে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ভারত।
তদের এমন অনবদ্য ব্যাটিং ভেঙ্কট রমনকে মনে করিয়ে দেয় ১৯৯৭ সালের কেপ টাউন টেস্টের কথা। সেই টেস্ট ম্যাচে ৫৮ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। কিন্তু ষষ্ট উইকেট জুঁটিতে অ্যালান ডোনাল্ড এবং তাঁর সতীর্থদেরকে পালটা আক্রমণ করতে শুরু করেন শচীন টেন্ডুলকার ও মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। তাঁরা দুইজনে প্রতি আক্রমণের আশ্রয় নিয়ে সংগ্রহ করেছিলেন ২২২ রান। দলকে বিপর্যয় থেকে বাচিয়েছিলেন। তবে জয়ের দেখা পায়নি ভারত।
রমন খেলেছিলেন সেই ম্যাচটি। তবে তিনি পুজারা এবং রাহানের জুঁটিকে প্রশংসা করেছেন রমন। কেননা শচীন এবং আজহারউদ্দিনের মাথায় বাড়তি চাপ ছিলোনা নিজেদের ক্যারিয়ার বাঁচানোর। ক্যারিয়ারকে খাদ থেকে হয়ত বাঁচাতে পারলেন রাহানে ও পুজারা। তাঁদের করা সেই একশর বেশির রানের জুঁটিতে ভারত মোটামুটি মানে একটি টার্গেট দিতে পেরেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। যদিও হার হয়ত এড়াতে পারেনি ভারত। কিন্তু এই যে দলের বিপর্যয়ে দলের হাল ধরতে পারার সক্ষমতা হয়ত ভারত টিম ম্যানেজমেন্টকে আবার পুজারা এবং রাহানের উপর ভরসা করতে উদ্বুদ্ধ করবে। হয়ত এই অভিজ্ঞ দুই ব্যাটারের ক্যারিয়ারের পরিসমাপ্তি ঘটছে না এখনই।