ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের রাস্তাটা বেশ সংকীর্ণ। প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়ে কেবল তবেই গায়ে জড়ানো যায় সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত নীল রঙা জার্সি। ঘরোয়া ক্রিকেটের কঠিন কাঠামোর মধ্য দিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে হয়। ছাপিয়ে যেতে হয় নিজেকে, ছাপিয়ে যেতে হয় অন্য সবাইকে। সে কাজটা প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি।
কিন্তু কারো কারো ভাগ্যটা ঠিক সহায় হয় না। তেমনই এক তালিকা থাকছে আজ। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট দূর্দান্ত পারফরম করেও জাতীয় দলের দরজা যাদের জন্যে বন্ধ, সে সকল ক্রিকেটারদেরকে ঘিরেই হবে আজকের আলোচনা।
- প্রিয়াঙ্ক পাঞ্চাল
ঘরোয়া ক্রিকেটে পাঞ্চাল অন্যতম সেরা ওপেনারদের একজন। তিনি মূলত গুজরাটে হয়ে বিভিন্ন ঘরোয়া টূর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে থাকেন। ব্যাট হাতে বেশ সাবলীল ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। তবে তাঁর জন্যে জাতীয় দলের দরজা প্রায় বন্ধই বলা চলে। কেননা দলের বর্তমান ওপেনিং জুটি আরও খানিকটা সময় নেবে সে কথা বলাই যায়। রাতারাতি তাদেরকে ছেটে ফেলাও সম্ভব নয়।
অন্যদিকে ঈশান কিষাণ, রুতুরাজ গায়কোয়াড়, শুভমন গিল ও মায়াঙ্ক আগারওয়ালের মত খেলোয়াড়রা সম্ভাবনার বিস্তার ঘটাতে শুরু করেছেন। সেদিক থেকে বয়সের বিবেচনায় প্রিয়াঙ্কের জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন কেবলই স্বপ্ন হয়ে রবে।
- অভিমন্যু ঈশ্বরণ
প্রিয়াঙ্কের মত একই ভবিষ্যৎ অভিমন্যু ঈশ্বরণের। ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলার হয়ে মাঠ মাতাতে দেখা যায় তাঁকে। ওপেনার হিসেবে লাল বলের ক্রিকেটের বেশ আলো ছড়াচ্ছেন তিনি। তবুও জাতীয় দলের জার্সিটা সম্ভবত তিনি গায়ে জড়াতে পারবেন না। দশ হাজারের বেশি রান করা এই ডানহাতি ব্যাটারের সকল পথই প্রায় বন্ধ।
- জলজ সাক্সেনা
ঘরোয়া ক্রিকেটে মিডল অর্ডারে নিয়মিত পারফর্ম করে যাচ্ছেন জলজ সাক্সেনা। সাদা বল কিংবা লাল বল, সর্বত্রই নিজের সক্ষমতার প্রমাণ রাখছেন এই অলরাউন্ডার। কেরালার এই অলরাউন্ডারের প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটের পরিসংখ্যান বেশ সমৃদ্ধ। একই ঘটনা লিস্ট এ ক্রিকেটে। তবুও জাতীয় দলের তাঁর সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীন।
ভারতের মিডল অর্ডারের দায়িত্বভারটা বেশ ভালভাবেই সামলে নিচ্ছেন হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, দীপক হুদা ও ভেঙ্কেটেশ আইয়াররা। তাদেরকে পেছনে ফেলতে নিজের শতভাগের কয়েকগুণ উজাড় করে দিতে হবে জলজকে।
- তারুওয়ার কোহলি
টপ অর্ডার ব্যাটার তারুওয়ার কোহলি। এছাড়াও মিজোরাম রাজ্য দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন তারুওয়ার। মূলত তিন নম্বরে ব্যাটিং করে থাকেন ডানহাতি এই ব্যাটার। আর সেই পজিশনে ভারত জাতীয় দলে রীতিমত লড়াই চলে। বিরাট কোহলি ছাড়াও সে স্থান নিজের করে নেওয়ার দৌড়ে অপেক্ষামান তালিকাটা বেশ লম্বা।
শ্রেয়াস আইয়ার, সুরিয়াকুমার যাদবদের মত তারকারা রয়েছেন সে তালিকায়। তাই ৩৩ বছর বয়সী তারুওয়ারের জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
- রাজনিশ গুরবানি
পেসারদের কোন কমতি নেই ভারত জাতীয় দলে। এই মুহূর্তে ভারতের পাইপলাইন সমৃদ্ধই বলা চলে। সেখানে নিজেকে আবিষ্কার করতেই পারেন রাজনিশ গুরবানি। ডানহাতি মিডিয়াম-পেসার গুরবানি উদীয়মান খেলোয়াড়দের একজন। বেশ আক্রমণাত্মক একজন পেসার গুরবানি। তবুও পাইপলাইনের ভীরে ঠেলে জাতীয় দলে পৌঁছাবার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীন।
বর্তমানে দলের অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রিত বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমার। তাদের শূন্যস্থান পূরণে ইতোমধ্যেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন দীপক চাহার, হার্শাল প্যাটেল, আর্শদ্বীপ সিং, মোহাম্মদ সিরাজ সহ আরও অনেকে। এত লম্বা তালিকা টপকে রাজনিশ গুরবানি জাতীয় দল অবধি পৌঁছে যাওয়ার পথটা বেশ সংকীর্ণ।
- সরফরাজ খান
ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত নাম সরফরাজ খান। দূর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুন্যে তিনি বারংবার প্রশ্ন তুলছে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার। ভারতের মিডল অর্ডারটা নিয়ে ভাবনার জায়গা খুব একটা নেই। তবুও ২৫ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়কে নীল জার্সিটা পরার স্বপ্ন বাদ রেখেই চালিয়ে যেতে হবে নিজের ক্রিকেট জীবন। বাকিদের অভিষেক ঘটে গেলেও তিনি রয়েছেন অপেক্ষায়। সেই অপেক্ষার অবসান সহসাই ঘটবে সে কথা বলে দেওয়া মুশকিল।