করোনা ভাইরাস মহামারীর মাঝে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) আইপিএল নিয়ে তুমুল সমালোচনা-আশঙ্কা থাকলেও মাঠে খেলা গড়াতেই মিলিয়ে গেছে সব। প্রাণবন্ত ক্রিকেট খেলে সব প্রশ্নকে সীমানা দড়ির বাইরে আছড়ে ফেলার কাজটা করেছেন ক্রিকেটাররাই।
মোটামুটি চার সপ্তাহ আর প্রতি দলের গ্রুপ পর্বের অর্ধেক ম্যাচ শেষ হবার পরে এবার সেরা ভারতীয় পারফর্মারদের খুঁজে বের করা যাক যারা কিনা হতে পারেন বছরের শেষভাগে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিরাট কোহলির ট্রাম্পকার্ড।
- শিখর ধাওয়ান
আরব আমিরাতে আইপিএলের গত সিজনটা স্বপ্নের মতো কাটিয়েছিলেন শিখর ধাওয়ান, করেছিলেন এক আসরে ক্যারিয়ার সেরা ৬১৮ রান। গতবারের ফর্মটা এবারো ধরে রেখেছেন তিনি। মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এসেই করে ফেলেছেন ৩৮০ এবং ধারণা করা হচ্ছে গতবারের রানকে অতিক্রম করবেন সহজেই।
এবার আইপিএলের সূচনা করেন ধোনির চেন্নাইয়ের বিপক্ষে ৮৫ রানের দুরন্ত ইনিংস দিয়ে।এক ম্যাচ পরেই পাঞ্জাবের বিপক্ষে আরো বিধ্বংসী ধাওয়ান, তাঁর করা ৪৯ বলে ৯২ রানের উপর ভর করে ১৯৬ রানের বিশাল টার্গেট দিল্লী অতিক্রম করে হেসেখেলেই। এই মৌসুমে নিজের খেলার ধরণে কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন ধাওয়ান, শুরু থেকেই তেড়েফুঁড়ে খেলার পরিবর্তে শুরুটা করছেন রয়ে সয়ে। এই কারণেই কিনা পাওয়ার-প্লেতে স্ট্রাইকরেট কিছুটা বেমানান ধাওয়ানের নামের পাশে,১১৬.৫২!
- সাঞ্জু স্যামসন
রাজস্থানের হয়ে অধিনায়কত্বের অভিষেকটা করেছিলেন সেঞ্চুরি দিয়ে। যদিও শেষটা রাঙাতে পারেননি, শেষ বলে ছয় মারতে না পারায় ব্যর্থতায় তার দল হেরে যায় পাঞ্জাবের কাছে। এরপর কয়েক ম্যাচে রানখরা গেলেও টানা তিন ম্যাচে চল্লিশোর্ধ ইনিংস খেলে সাঞ্জু আবারও জানান দিয়েছেন ফর্মে ফিরে আসার।
অধিনায়কত্ব তাঁর ব্যাটিংয়ে এনে দিয়েছে পরিপক্বতা, শুরুতে আক্রমণাত্মক না হয়ে চেষ্টা করছেন উইকেটে সময় কাটাতে।এরপরেও তার স্ট্রাইকরেট ঈর্ষণীয়, ১৪৫! তাঁর অধিনায়কত্বে রাজস্থানও পার করেছে ভালো সময়। সাত ম্যাচে তিনটি জিতে তাদের অবস্থান পয়েন্ট টেবিলের মাঝামাঝিতে। ব্যাটিংয়ের ফর্মটা যদি টেনে নিতে পারেন শেষ অবধি তাহলে বলার অপেক্ষা রাখে নাহ বিরাট কোহলির দলের অন্যতম অস্ত্র হবেন স্যামসন।
- সুরিয়াকুমার যাদব এবং ঈশান কিষাণ
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় দলে জায়গা পাবার আগেই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকা ক্রিকেটার বোধহয় সূর্যকুমার যাদব। গত মৌসুমে অতিমানবীয় ব্যাটিং করলেও কয়েক মাসের ব্যবধানে হওয়া এই আইপিএলে যেন আগের সুরটা হারিয়ে ফেলেছেন। চেন্নাইয়ের ধীর গতির পীচে শুরুর ম্যাচগুলোতে রান করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
দ্বিতীয় ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরি বাদ দিলে বাকি সব ম্যাচ মিলিয়ে সর্বোচ্চ রান সাকুল্যে ৩৩! দিল্লীর তুলনামূলক ব্যাটিং সহায়ক পিচে যত দ্রুত সম্ভব রানে ফিরবেন সুরিয়া ততই বোধহয় ভালো তার জন্য।কারণ তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া কতটা কঠিন সেটা বোধহয় তার চেয়ে ভালো আর কেউ জানেন নাহ।।
ইশান কিষাণ! গত মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ছয় মারা এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান যেন এবছর বলে ব্যাটই লাগাতে পারছেন নাহ।ছয় ইনিংসে ছক্কা মেরেছেন কেবল দু’টি!
এর চেয়েও চিন্তার বিষয় হলো চার নম্বর ব্যাটিং পজিশনটি ক্রুণাল পান্ডিয়ার কাছে থেকে হারিয়ে ছিটকে গেছেন দল থেকে। এখন দেখার বিষয় কত দ্রুত তিনি তারকা নির্ভর মুম্বাই দলে নিজের জায়গা ফিরে পান, না হয় বিশ্বকাপ দলে থাকার স্বপ্ন এখানেই ভুলে যেতে হবে ঈশান কিষাণের।
- রবিচন্দ্রন অশ্বিন
বিরাট কোহলি অধিনায়কত্ব পাবার পর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় কোপটা পড়েছিল বোধহয় তার ওপর।কোহলীর সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করবার মতো পারফরম্যান্স এখনো পর্যন্ত দিতে পারেননি তিনি। পাঁচ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র এক উইকেট সঙ্গে অর্ডিনারি ৭.৭৩ ইকোনমি।
দুর্দান্ত পারফর্ম করে সবাইকে ভুল প্রমাণ করার সুযোগটা এই মৌসুমে আর পাচ্ছেন নাহ তিনি; করোনা আক্রান্ত পরিবারের পাশে থাকতে ইতোমধ্যেই জৈব সুরক্ষা বলয় ত্যাগ করেছেন অশ্বিন।
- রাহুল চাহার এবং দীপক চাহার
মুম্বাইয়ের চার ম্যাচের দুটিতেই ম্যাচ জয়ের কারিগর রাহুল চাহার। এই ২১ বছর বয়সী লেগ স্পিনারের স্পিনে দিশেহারা প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা। তার বোলিংয়ের মূল শক্তি হলো তাঁর বুদ্ধিমত্তা; ক্রমাগত লাইন আর অ্যাঙ্গেল পরিবর্তন করে ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করতে তার জুড়ি মেলা ভার। সঙ্গে যোগ করুন তার আগ্রাসী মনোভাব।
তাতেই জাসপ্রিত বুমরাহকে সরিয়ে মুম্বাইয়ের পাদপ্রদীপের আলোয় তিনি। হয়েছেন এখনো পর্যন্ত দলের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। চাহালের বহুদিন ব্যাপী চলা অফফর্ম আর কুলদীপ যাদবের খেলতে না পারার কারণে চাহার বিশ্বকাপগামী দলে থাকার স্বপ্ন দেখেতেই পারেন।
গত কয়েকবছর যাবত ভারতীয় দলে অনিয়মিত খেলা দীপক চাহার প্রতিবারের মত এবারো ধোনির পাওয়ার-প্লেতে প্রধান অস্ত্র। বলের উপর নিয়ন্ত্রণ আর দুই দিকেই সুইং করাতে পারার ক্ষমতা তাঁকে করেছে দুর্দান্ত।
মাত্র দুটি ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন কিন্তু দুই ম্যাচেই শুরুতেই চার উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন একা হাতে।ভুবনেশ্বর কুমারের অফফর্ম তাকে আশাবাদী করে তুলেছে ভারতীয় দলে জায়গা করে নেবার ব্যাপারে।
- নবদ্বীপ সাইনি আর রাহুল তেওয়াতিয়া
সাইনি ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে মাত্র এক ম্যাচ খেলেছেন এই মৌসুমে। তার বদলে বিরাট কোহলি ভরসা পেয়েছেন ব্যাটিংয়ের নিশ্চয়তা দেয়া শাহবাজ আহমেদের উপর। দলে সুযোগ না পেলে ভারতীয় দলে যে জায়গা পাবেন না সাইনি সেটা বলাই বাহুল্য।
রাহুল তেওয়াতিয়া গত মৌসুমে শেল্ডন কটরেলের এক ওভারে পাঁচ ছয় মেরে আলোচনায় আসলেও এই মৌসুমে রাজস্থানের মিডল অর্ডারে কোনো ‘ইম্প্যাক্ট’ ফেলতে পারেননি। অন্যদিকে তাঁর লেগস্পিনও তেমন কার্যকরী না হওয়ায় এই বছর জাতীয় দলে যে সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি সেটা বলার অপেক্ষা রাখে নাহ।
সেরা দুই
- পৃথ্বী শ
বিজয় হাজারে ট্রফির অতিমানবীয় ফর্ম আইপিএলেও টেনে এনেছেন পৃথ্বী। পাওয়ার-প্লেতে বোলারদের উপর ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন তিনি।তার স্ট্রাইকরেট ১৮৭.৩৯ যা কিনা এবারে আইপিএলের সর্বোচ্চ। মাসল পাওয়ারের উপর নির্ভর না করে কেবলমাত্র দুর্দান্ত টাইমিং আর হ্যান্ড-আই কম্বিনেশনের মাধ্যমে চোখের পলকেই বলকে করছেন বাউন্ডারি ছাড়া।
তাঁর ব্যাটিংয়ের সামনে ম্লান হয়ে যাচ্ছেন শিখর ধাওয়ানের মতো ব্যাটসম্যান। এই আইপিএলে এরই মাঝে করেছেন ৩০৮ রান। অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ ব্যাটিংকে এখন হয়তো কেবল রাতে দেখা দু:স্বপ্নই মনে হচ্ছে পৃথ্বী শ’র কাছে।
- হার্শাল প্যাটেল
দিল্লি থেকে হার্শাল প্যাটেলকে নিয়ে আসা ব্যাঙ্গালুরুর ইতিহাসের সেরা সিদ্ধান্ত কিনা তা নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। আসলে শুরু করতে বাধ্য করেছেন প্যাটেল নিজেই, ১৭ উইকেট নিয়ে এখনো পর্যন্ত এবারের আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী তিনি।
আইপিএল শুরুর আগে জাতীয় দলের আশেপাশেও না থাকা এই ক্রিকেটার এরই মাঝে কড়া নাড়তে শুরু করেছেন জাতীয় দলের দরজায়। ওয়াইড ইয়র্কার সাথে অসাধারণ ব্যাকহ্যান্ড স্লোয়ার ডেলিভারি তাকে করেছে অপ্রতিরোধ্য। সাথে যোগ করুন ব্যাটিংয়ে তার হিটিং ক্যাপাবিলিটি যার স্বাক্ষর তিনি ইতোমধ্যেই রেখেছেন পাঞ্জাবের সাথে ১৩ বলে ৩১ করে।
এরকম কার্যকরী অলরাউন্ডারকে পেতে চাইবে না কোন দল?
– ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ছায়া অবলম্বনে