ধ্রুবকে তারা হতে দিন

ছবির মতো একটা শট।

অফ স্ট্যাম্পের ওপরে বল। হাটু গেড়ে, কাভারের ওপর দিয়ে রাজকীয় স্টাইলে বলকে পাঠিয়ে দিলেন ওই দূরে। ছবির মতই দাড়িয়ে রইলেন ফলো থ্রুতে। মনে হলো যৌবনের সৌরভ গাঙ্গুলি বা কুমার সাঙ্গাকারার কাভার ড্রাইভ।

না, সৌরভ বা সাঙ্গাকারা নন; আমাদের একান্ত নিজস্ব আফিফ হোসেন ধ্রুব।

ধ্রুবর কল্যানে অস্ট্রেলিয়াকে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হারালো বাংলাদেশ। ভিত্তিটা বোলাররা গড়ে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে ১২১ রানে অলআউট করে। কিন্তু তারপর সাকিব, মেহেদীর দৃঢ়তার পরও ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে ভেড়াতে একটা জাদুকরী ইনিংস দরকার ছিলো। নুরুল হাসান সোহান নিজে সেই জাদুটা দেখাতে পারেননি; সঙ্গত করেছেন। আসল জাদুটা দেখালেন আফিফ; বা ধ্রুব।

ধ্রুবর এই ইনিংসটার এই ম্যাচ জেতানোর চেয়েও একটু বেশি গুরুত্ব আছে। এটা আসলে ‘অরিজিনাল ধ্রুব’কে চেনার একটা ইনিংস।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ধ্রুবর নাম জোরেসোরে উচ্চারিত হয়েছিলো এক বিপিএল ম্যাচের পর। সেখানে ক্যারিয়ারের শুরুতে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আর এখানেই একটা গোলমাল হয়ে গেলো, লোকেরা ধরে নিলো, আফিফ একজন মিনি অলরাউন্ডার!

আসলে অনুর্ধ্ব-১৯ থেকে উঠে আসা ধ্রুব নিখাঁদ এবং অত্যন্ত সলিড একজন ব্যাটসম্যান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যার ছাপ খুব দ্রুতই রেখেছেন এই তরুণ। কিন্তু জাতীয় দলের ম্যানেজমেন্টের তাঁকে নিয়ে ভ্রান্তি কাটেনি। তাঁরা ধরেই রেখেছেন, এই ছেলেটি মিনি অলরাউন্ডার; ফলে তাকে নিচের দিকে ব্যাট করাতে হবে।

সেটাও আফিফ খুব খারাপ করছেন, তা নয়। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেই ৭ বা ৮ নম্বরে নেমে ফিফটি করে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। এ ছাড়াও নিচের দিকে ব্যাট করে তার ৪৫ রানের ইনিংসও আছে। ওয়ানডেতেও এসব জায়গায় কিছু ভালো ইনিংস আছে তার।

কিন্তু এটা করতে গিয়ে দুটো ক্ষতি হচ্ছিলো: প্রথমত, আফিফ নিজের সেরাটা খেলতে পারছিলেন না। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশ একজন জেনুইন ব্যাটসম্যানের সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলো।

কারণ, আফিফ কোনোক্রমেই ট্রাডিশনাল স্লগার নন। তিনি উইকেটে গিয়ে শামিম হোসেন পাটোয়ারি বা নুরুল হাসান সোহানের মত খ্যাপা ঘোড়ার মত শট করতে পারবেন না। তিনি ইনিংস তৈরি করবেন। একেবারে নিখুত ক্রিকেটীয় শটেই ১২০-এর ওপরে স্ট্রাইক রেটে রান তুলতে পারবেন। এখন যার ক্ষমতা আছে বড় ইনিংস খেলার; ইনিংস গড়ে তোলার। তাকে আপনি কেনো অন্তিম সময়ে ছক্কা মারার দায়িত্ব দিয়ে বারবার উইকেটে পাঠাবেন?

এই চক্রটা কিছুতেই ভাঙা যাচ্ছিলো না।

অবশেষে আফিফ একটু ওপরের দিকে ব্যাট করার সুযোগ পেতে শুরু করেছেন। আজকে তিনি দেখালেন, তিনি এমন সুযোগ পেলে কী করতে পারেন। দারুন সব উদ্ভাবনী শট করতে পারেন এবং ব্যাকরন বইয়ে মাঠে নিয়ে আসতে পারেন। এই দুইয়ের সমন্বয় বাংলাদেশে খুব একটা দেখা যায় না।

একটা জিনিস নিশ্চিত করে বলা যায়, আফিফ যদি মিডল অর্ডারে নিয়মিত সুযোগ পান, খুব দ্রুতই বাংলাদেশের সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মিডল ওভারের যে সংকট, সেটা কেটে যাবে। সোজা কথায় ২০ ও ৫০ ওভারের খেলায় তাকে চার নম্বরে খেলাতে হবে। আর সেটা করলে অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।

আশা করা যায়, আজকের পর আফিফকে এটুকু সুযোগ ম্যানেজমেন্ট দেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link