টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বেহাল দশা উৎরাতে অনেকদিন ধরেই শব্দটা শোনা যাচ্ছে। ইনটেন্ট, পজেটিভ ইনটেন্ট। সেই ইনটেন্টের সুর ধরে অনেক কিছুই হলো দেশের ক্রিকেটে। গত একমাসে সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে বদলও হয়েছে অনেক। ইনটেন্টের সুর শোনা গিয়েছে বিসিবির সর্বস্তরে। সারাদিন ইনটেন্ট, ইনটেন্ট বলে গলা ফাটানো দলটার কিছু কার্যকলাপই আবার প্রশ্ন তোলে খোদ ইনটেন্টের বিরুদ্ধে।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ ভয় ডরহীন ক্রিকেট খেলতে চায়। সেজন্য ব্যাটসম্যানদের ফ্রি লাইসেন্সও দেয়া হয়েছে। শুরুতে না পারলেও ভরসা রাখা হবে। ভালো সিদ্ধান্ত। আক্রমণাত্মক টি-টোয়েন্টি অধিনায়কও নিয়ে আসা হয়েছে। যিনি কিনা নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে চান। খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের জন্য প্রথমবারের মত টেকনিক্যাল কনসালটেন্টও আনা হলো। এতো আরো দারুণ ব্যাপার।
শুধু এতটুকুতেই আলোচনা শেষ হয় না। নতুন এই দলটার চরিত্রের সাথে খাপ খায় না এমন ক্রিকেটারদেরও বাদ দেয়া হয়েছে। অন্যতম সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমকে জিম্বাবুয়ে সিরিজে বিশ্রাম দেয়া হয়েছিল তাঁর ফর্মের কারণে। টি-টোয়েন্টি সুলভ ইনিংস খেলতে পারছিলেন না বলে অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এমনকি তাঁকেও পাঠানো হয়েছিল তথাকথিত বিশ্রামে।
গত একমাসে এই সবকিছুই হয়েছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দলটা নতুন করে সাজানো হবে বলে। নতুন একটা ধাঁচের ক্রিকেট বাংলাদেশ খেলতে চায় বলে। এখনই সাফল্য না পেলেও এই পদক্ষেপ গুলোর প্রশংসা করতে হয়। বাংলাদেশ অন্তত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা নিয়ে নতুন করে ভাবছে।
টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন প্রায়ই সাংবাদিকদের বলছেন তাঁর ব্যাটসম্যানদের ভয় ডরহীন হতে হবে। একশো স্ট্রাইক রেটে খেলে ম্যাচ জেতা যাবে না। অন্তত ১৩০-৪০ স্ট্রাইকরেটে খেলার মানসিকতা থাকতে হবে।
অথচ হঠাৎ করেই এই দলে আসলো একটি ইনটেন্ট বিরোধী সিদ্ধান্ত। প্রথমত পেসার হাসান মাহমুদ ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গিয়েছেন। ফলে তাঁর জায়গায় নিশ্চয়ই একজন পেস বোলার দলে যুক্ত হবার কথা। তা না করে বাংলাদেশ তাঁদের স্কোয়াডে যুক্ত করেছে একজন ওপেনার।
দল ঘোষণার এতদিন পরে এসে বুঝি বাংলাদেশ তাঁদের স্কোয়াডে ওপেনারের অভাবটা বোধ করলো। এতদিন অবশ্য ব্যাকআপ ওপেনার না রাখার ভিন্ন ব্যাখ্যা ছিল। বলা হচ্ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মেকশিফট ওপেনার ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। সেজন্যই মুশফিক, মিরাজ কিংবা মেহদীদের নাম আসছিল বারবার।
তবে এশিয়া কাপে যাবার আগমুহূর্তে বোধহয় আর ইনটেন্ট কিংবা মেকশিফট ওপেনার কোনটার উপরই ভরসা করতে পারলো না বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদের বদলি হিসেবে দলে নেয়া হয়েছে ওপেনার নাঈম শেখকে। যিনি এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে ৩৪ টি ম্যাচ খেলেছেন। রানও করেছেন প্রায় আটশো। তবে সমস্যা আবারো সেই ইনটেন্টে।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একজন ওপেনারের কাছ থেকে দল যে ধরনের শুরু চায় সেটা কখনোই করে দেখাতে পারেননি নাঈম শেখ। ফলে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ পাওয়ার প্লের সঠিক ব্যবহার করতে পারে না। ৩৪ টি ম্যাচ খেলার পরে একজন টি-টোয়েন্টি ওপেনারের স্ট্রাইক রেট মাত্র ১০৩.৭১।
এছাড়া ব্যাট হাতেও খুব একটা ভালো সময় পার করছিলেন না বলেই দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। তবে নাঈম শেখ আবার এশিয়া কাপের দলে ফিরলেন আসলে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ‘এ’ দলের হয়ে একটা ওয়ানডে সেঞ্চুরির জোরে। কয়েকদিন আগেই সেখানে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন নাঈম। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে সরাসরি দুবাইয়ের টিকিটটা পেয়ে গেলেন তিনি। এক্ষেত্রে অবশ্য নাঈমের ইনটেন্টের প্রয়োজন হয়নি।