এশিয়া কাপে আফগানিস্তান: আন্ডারডগ না আন্ডাররেটেড?

পুরোনো দিনের এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করতে চাইবে দলটি। আফগানিস্তান যেভাবে অল্প সময়ে নিজেদের ক্রিকেট এত উপরে নিয়ে গিয়েছে, তাতে এবারের এশিয়া কাপে তারা ভাল কিছু করলে অবাক হওয়ার কোন কারণ থাকবে না। নিশ্চয়ই শিরোপার দিকেই চোখ রাখবে দলটি।

এশিয়ার দেশ হিসেবে সর্বশেষ আইসিসির পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা পেয়েছে আফগানিস্তান। তবে ক্রিকেট বিশ্বে দেরিতে পা রাখলেও নিজেদের চেনাতে ভুল করেনি তারা। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত দলগুলোর সাথে যেভাবে খেলেছে আফগানিস্তান, তাতে তাদের পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই।

আসন্ন এশিয়া কাপেও সমীহ করার মতই একটা দল আফগানিস্তান। সারা পৃথিবী ব্যাপি অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে আফগান ক্রিকেটারদের সরব উপস্থিতি দেখলেই এই ফরম্যাটে তাদের আধিপত্য উপলব্ধি করা যায়। তাই নিজেদের প্রিয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট আয়োজিত হওয়ায় নিশ্চিতভাবেই বাড়তি সুবিধা পাবে তাঁরা।

এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে আফগানিস্তানের উপর হয়তো খুব বেশি মানুষ বাজি ধরবেন না, তবে রশিদ খানদের দলকে একেবারে হিসেবের বাইরেও রাখা যাবে না।

ক্রিকেট বিশ্বে আফগানিস্তানের এই দ্রুত উত্থানের পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে দেশটির স্পিনাররা। রশিদ খান, মুজিবুর রহমানরা যেকোনো প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপ নাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। এই দুইজনের সাথে আছেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নাবি। তিনজনই আফগানিস্তানের এশিয়া কাপ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এছাড়া এবারের আসরে আফগান তরুণ নুর আহমেদও হতে পারেন ট্রাম্প কার্ড।

স্পিনাররা বিশ্বমানের হলেও পেস আক্রমণে দুর্বলতা রয়েছে আফগানিস্তানের। এখন পর্যন্ত মানসম্মত পেসার খুব কমই দেখা গিয়েছে তাদের দলে। অবশ্য তরুণ ফজল হক ফারুকি, নাভিন উল হক সাম্প্রতিক সময়ে হাল ধরেছেন আফগান পেস বিভাগের। সেই সাথে আছেন বোলিং অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাই। রশিদ-মুজিবদের পাশাপাশি এই ফাস্ট বোলাররা নিজেদের কাজটা করতে পারলে আফগানিস্তানের জন্য ম্যাচ জেতা অনেকটা সহজ হয়ে পড়বে।

আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা আধুনিক টি-টোয়েন্টির সাথে তাল মিলিয়ে ব্যাটিংটা করতে জানেন। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে পারাটা তাই দলটির জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। বিশেষ করে হজরতউল্লাহ জাজাই, রহমানউল্লাহ গুরবাজরা নিজেদের দিনে একাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় স্বস্তিতে নেই আফগান ব্যাটিং লাইনআপ। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে কয়েক ম্যাচেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে আফগানরা। তাছাড়া বড় দলগুলোর বিপক্ষে রহমত শাহ, মোহাম্মদ শাহজাদের মত অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের অভাবে ভুগতে হতে পারে এই দলকে।

অন্যান্য ব্যাটসম্যানের অফ ফর্মের কারনেই আলাদা করে বলতে হয় নাজিবউল্লাহ জাদরানের কথা। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে এবং আয়ারল্যান্ড সিরিজে নিজের সেরা ছন্দে দেখা গিয়েছে তাকে।এই বামহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের পাওয়ার হিটিং সক্ষমতা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। তাই তাঁর উপর ভক্ত-সমর্থকদের প্রত্যাশা একটু বেশি।

ফিনিশিংয়ের ক্ষেত্রে জাদরানের সাথে আছেন অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি আর রশিদ খান। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার সুবাদেই সম্ভবত দুইজনের বাউন্ডারি মারার সক্ষমতা ঈর্ষণীয়। বিশেষ করে অপ্রচলিত সব শটে দ্রুত রান তুলতে জুড়ি নেই রশিদ খানের।

তবে আফগান ক্রিকেটারদের গেম সেন্স নিয়ে এখনো সংশয় থেকে গিয়েছে। ধীরেসুস্থে খেলা আর আক্রমণাত্বক খেলার মাঝে ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পারাটা তাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারন। কেউ হয়তো অতি আক্রমণাত্বক হতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন, কেউ আবার সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের সাথে বেমানান স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেন।

আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা অবশ্য বড় টুর্নামেন্টের চাপ নিতে না পারা। ঠিক এই কারনে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে খুব কাছে এসেও হেরে যেতে হয়েছে। আবার ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ভারত, পাকিস্তানের সাথে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেও জয়ের হাসি হাসতে পারেনি।

এবার অন্তত এমন কিছু দেখতে চাইবে না আফগানিস্তান। পুরোনো দিনের এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করতে চাইবে দলটি। আফগানিস্তান যেভাবে অল্প সময়ে নিজেদের ক্রিকেট এত উপরে নিয়ে গিয়েছে, তাতে এবারের এশিয়া কাপে তারা ভাল কিছু করলে অবাক হওয়ার কোন কারণ থাকবে না। নিশ্চয়ই শিরোপার দিকেই চোখ রাখবে দলটি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...