‘রোমাঞ্চ’ এই শব্দের ভরও নয় যথেষ্ট। ইন্টার মিলানের মাঠে বার্সেলোনার রুপকথার অধ্যায়টা থমকে গেল। মিলানের যোদ্ধারা হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। প্রাচীন সভ্যতার কোন এক নাট্যমঞ্চ আলোকিত করল এক দুর্দমনীয় গল্প। দিনশেষে হেরেছে একজন, জিতেছে আরেক- কিন্তু তাতে যে চোখজুড়ে এক নেশাতুর ঘোর। কুয়াশার চাদর চিড়ে এক চিলতে রোদের হাতছানি।
স্যান সিরো-তে ফিরে এলো যেন সেই ২০১০। পাগলাটে জোসে মরিনহোর জায়গায় এখন সিমিওনে ইনজাঘি। বার্সেলোনা যেন ইস্তানবুলের সেই সুলতানাত- বিশ্ব জুড়ে যার প্রবল দাপট। কিন্তু রোমের দুয়ারে এসে কাতালান ক্লাবটি অবশ্য আত্মসমর্পণ করেছে। তবে লড়েছে। ফুসফুসে থাকা শেষ অক্সিজেন বিন্দু দিয়ে লড়েছে।
কিন্তু সব লড়াইয়ের শেষে যদি বিজয়ী হওয়া যায়, তবে অর্জনের সেই মধুর স্বাদ কি আর আস্বাদন করা হয়! কি ঘটেনি ম্যাচটিতে? ইতালির কলোসিয়ামে স্পেন থেকে উড়ে আসা যোদ্ধাদের পিছিয়ে পড়তে হয়েছে সমরণের প্রথম ভাগেই।
কাতালুনিয়া থেকে ৩-৩ গোলের সমতা ৪৫ মিনিটের রেখা পার হওয়ার আগেই ৫-৩ হয়েছে। হিমেল হাওয়ার প্রকোপ কাটিয়ে হ্যান্সি ফ্লিকের শরীর জুড়ে তখন কেবলই এক তীব্র অনুভূতি। প্রতিশোধ, প্রত্যাবর্তন আর মস্তিষ্কের পুরোটা জুড়ে পরাজয়ের গ্লানি।
স্যান সিরোর মুকুটহীন সম্রাট লাউতারো মার্টিনেজের কল্যাণেই সফরকারীদের উৎকণ্ঠা বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু রক্তচাপের তীব্রতাকে বশে এনে- বার্সেলোনা দেখাল তাদের নতুন দিনের ধারালো তরবারির চমক।
মুহূর্তের মধ্যেই ২-২ সমতায় ফেরে ম্যাচটি। ঘড়ির কাঁটা ছুটছে যেন ঘোড়ার বেগে। তাকে আটকে রাখা দায়। আটকে রাখেনি কেউ বরং ইতালির ওই কলোসিয়ামে ২২ জন জান-প্রাণ দিয়ে লড়েছেন শেষ অবধি। ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয়েছে ৩-৩ গোল ব্যবধানে।
৩৬ বছরের এক বুড়ো সৈনিক ইতালির সেনাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে একেবারে অন্তিম লগ্নে। কিন্তু তখনও নায়ক হয়ে ওঠা হয়নি কারও। একটা লড়াই হচ্ছে, চারিদিকে কোটি কোটি চোখ তাকিয়ে আছে- সে লড়াইয়ের কোন নায়ক থাকবে না- তা কি আর হয়!
কিন্তু নায়কের চরিত্র লেখেন তো গল্পকার, ইন্টার মিলানের সেই গল্পকার হয়ে এলেন ইয়ান সোমার। সুইস এই গল্পকার তিনকাঠির নিচে দাঁড়িয়ে নায়ক হওয়ার সময় খরিদ করলেন। আর সেই সুযোগটা কাজে লাগালেন ইনজাঘির তুরুপের তাস ডেভিড ফ্রাতেসসি।
রুপকথা হোক রোমান কিংবা কাতালান- লেখা হয়েছে দু’টোই। দু’টোতেই অশ্রুর জলের বন্যা হয়েছে। কারণ যদিও ভিন্ন। আনন্দের হিল্লোলে ইতালির গগন জুড়ে হয়েছে উচ্ছ্বাস। আর রোম থেকে সুদূর স্পেন- পুরো পথ জুড়ে রয়েছে কেবলই হাহাকার।