আইরিশ মহাকাব্যের নতুন অধ্যায়

বাবর আজমের দেড়শো! বেশ কিছু নব্য রেকর্ড। সব মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড ম্যাচের নিউজে সয়লাব। তবে, ঠিক পাশেই এজবাস্টন থেকে মাত্র ২৪৭ মাইল দূরেই আইরিশদের মাটিতে এরই মধ্যে রচনা হয়েছে আফ্রিকা বধের কাব্য! দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৩ রানে হারিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয় পেয়েছে আয়ারল্যান্ড।

সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ডাবলিনে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় আইরিশরা। ডাবলিনের ঘাসে ঢাকা সবুজ উইকেটে পল স্টার্লিং এবং অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবির্নির ব্যাটে দারুন শুরু পায় আইরিশরা। ওপেনিং জুটিতেই আসে ৬৪ রান!

এরপর স্টার্লিং ২৭ রানে ফিরলেও বালবির্নির ব্যাটে বড় সংগ্রহের দিকেই এগোতে থাকে আয়ারল্যান্ড। দ্বিতীয় উইকেটে ম্যাকব্রাইন ৩০ রানে ফিরলে বালবির্নির সাথে যুক্ত হন হ্যারি ট্যাক্টর। একপ্রান্তে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে বালবির্নি তুলে নেন সেঞ্চুরি!

আরেক প্রান্তে হ্যারি ট্যাক্টর তুলে নেন দাপুটে এক ফিফটি।  দু’জনের ব্যাটে ততক্ষণে আইরশরা নিজেদের লক্ষ্যের বেশ কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বাকি কাজটা একা হাতে সেরে ফেলেন জর্জ ডকরেল ১১৭ বলে ১০২ রান করে বালবির্নি ফিরলেও হ্যারি ট্যাক্টরের ৬৮ বলে ৭৯ আর শেষদিকে জর্জ ডকরেলের ২৩ বলে ৪৫ রানের ক্যামিওতে ৫ উইকেটে ২৯০ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় আইরিশরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে তাবারাজ শামসি ১০ ওভারে ১ মেইডেনসহ ৪২ রানে শিকার করেন ১ উইকেট। প্রোটিয়াদের সামনে ২৯১ রানের বিশাক লক্ষ্যমাত্রা। সেই সাথে ছিলো আরেকটি বড় চাপ!

২০১৬ সালের পর ২৯০-এর বেশি টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৯ ম্যাচের একটিতেও জয় পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে কি সেই ২৯০ এর জুজু কাটবে? নাকি আইরিশদের কাছে মাথা নোয়াতে হবে প্রোটিয়াদের! চাপের পাহাড় মাথায় নিয়ে ব্যাট করতে নেমে সফরকারীরা।

২৯১ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৫১ রানেই ২ উইকেট হারায় সফরকারীরা। তৃতীয় উইকেটে জানেমান মালান ও ভ্যান ডার ডাসেনের ব্যাটে ধীরে ধীরে জয়ের দিকে অগ্রসর হয় প্রোটিয়ারা। তৃতীয় উইকেটে দু’জনের ১০৮ রানের জুটির পথে মালান তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি। স্কোরবোর্ডে দলের রান তখন ২ উইকেটে ১৫৯। মালান অপরাজিত ব্যক্তিগত ৮৪ রানে আর ডাসেন ছিলেন ব্যক্তিগত ৪৯ রানে।

নাটকের শুরুটা এখানেই!

সাত বলের ব্যবধানে আউট মালান ও ডাসেন! কাইল ভেরেন ও ডেভিড মিলার ভীত গড়ার চেষ্টা করলেও জসুয়া লিটল ও ম্যাকব্রাইনদের বোলিং জাদুতে ২০১ রানেই ৭ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা! মাত্র ৪২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে আইরিশদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে প্রোটিয়া শিবির। ম্যাচ তখন পুরোপুরি আইরিশদের নিয়ন্ত্রণে।

শেষদিকে কেশব মহারাজের ১৭ আর কাগিসো রাবাদার ১২ রানে ভর করেও ৯ বল বাকি থাকতে ২৪৭ রানেই গুড়িয়ে যায় প্রোটিয়ারা। ৪৩ রানের জয়ে ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার আফ্রিকা বধের কাব্য রচনা করে আইরিশরা। ম্যাকব্রাইন, মার্ক অ্যাডায়ার ও জসুয়া লিটল প্রত্যেকে শিকার করেন দু’টি করে উইকেট।

ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই আইরিশদের উন্নতি একদম চোখে পড়ার মতো। রাবাদা, নর্খিয়াদের পেসের বিপক্ষে দাপুটে ব্যাটিং! এরপর বোলিংয়ে লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের উপর প্রেশার ক্রিয়েট করা। দুর্দান্ত ফিল্ডিং! সব মিলিয়ে এই জয়টা যেনো আইরিশদেরই প্রাপ্য ছিলো।

এর আগে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ভেস্তে যায় বৃষ্টিতে। প্রথম ওয়ানডেতে ৪০.২ ওভারে আয়ারল্যান্ড ৪ উইকেটে ১৯৫ রান করলে বৃষ্টি বাগড়া দেয়। এরপর আর মাঠে গড়ায়নি খেলা, বৃষ্টিতে পণ্ড হয় প্রথম ওয়ানডে। এই জয়ে সিরিজে এখন ১-০ তে এগিয়ে আছে আইরিশরা। শেষ ওয়ানডে পরিত্যক্ত কিংবা আইরিশরা জয় পেলেই রচনা হবে প্রথমবার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের গৌরবগাঁথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link