ফুটবল প্রেমীদের জন্যে আরও একটি দারুণ রাতের অপেক্ষা। এই তো কিছুদিন আগেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল দেখার সুযোগ হল। তার রেষ কাটতে না কাটতেই আরও একটি মহা লড়াইয়ের অপেক্ষার ক্ষণ গুনছে আপামর ফুটবল সমর্থক ও পাগলাটে ভক্তরা। তবে এবার আর কোন ক্লাবের লড়াই নয়। এবার লড়াই দুই দেশের, দুই মহাদেশের।
দুই দেশ না শুধু, লড়াইটা দুই চ্যাম্পিয়নের মাঝে। কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন দল মুখোমুখি হবে ইউরো চ্যাম্পিয়ন দল ইতালির। এ যেন এক চোখের আনন্দ! এ যেন বিনোদনের পরিপূর্ণ তৃপ্তি! এমন সব লড়াইয়ে জন্যেই তো মুখিয়ে থাকে ফুটবল সমর্থকেরা। ইতালি আর আর্জেন্টিনার মত দুই দলের লড়াই তো আর চাইলেই দেখা যায় না।
কত অপেক্ষার পর এমন এক প্রহর আসে। কত শত প্রতীক্ষা। অন্যদিকে আবার কবে দেখা মিলবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সেটাও তো অনিশ্চিত। কেননা ইতালির তো খেলা হচ্ছে না বিশ্বকাপ। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে দেখার সুযোগ বোধহয় এটাই শেষ। অন্তত আগামী চার বছরের প্রেক্ষাপটে।
হ্যা, ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলে স্টেডিয়ামে এই দুই দল মুখোমুখি হচ্ছে ‘ফিনালিসিমা’ নামক এক টুর্নামেন্টে। জয়ীদের জন্যে থাকছে শিরোপা। এক ম্যাচের এই টুর্নামেন্ট সর্বপ্রথম খেলা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। মূলত ইতালির ফুটবল সংস্থা ইতালি ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি আর্তেমিও ফ্রাঞ্চির স্মরণে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন ফুটবলের একনিষ্ঠ এক সংগঠক।
ইতালির ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও ফ্রাঞ্চি ছিলেন একাধারে উয়েফা সভাপতি ও ফিফার সহ-সভাপতি পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান ১৯৮৩ সালে। ফুটবলের এই নিবেদিত প্রাণ সংগঠককে তো আর ভুলে যাওয়া যায় না। তার কাজ তো আর আড়াল করা যায় না।
তাই তার করা কাজ এবং শ্রমের প্রতি সম্মান জানাতেই আয়োজন করা হয়েছিল ‘ফিনালিসিমা’, যদিও প্রথম আসরে এর নাম ছিল ‘আর্তেমিও ফ্রাঞ্চি ট্রফি’। প্রথম আসরটি বসেছিল ফ্রান্সে। এই কিছুদিন আগে যে স্টেডিয়ামে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের চৌদ্দতম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি উঁচিয়ে ধরলো, সেই স্ট্যাড ডি ফ্রান্সেই বসেছিল সেবারের আয়োজন।
মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স এবং উরুগুয়ে। মিশেল প্লাতিনির ফ্রান্স অনায়াসে ২-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল উরুগুয়েকে। জনপ্রিয়তা আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা ছিল টুর্নামেন্টটির। তবে দ্বিতীয় আসরে নেদারল্যান্ড ও উরুগুয়ের সময়ের অভাবে মাঠে গড়ায়নি খেলা। এরপর আবার লম্বা এক বিরতির পর ১৯৯৩ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয় ডেনমার্ক।
আর্জেন্টিনায় অবস্থিত ‘মার দেল প্লাতা’ স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয়েছিল তৃতীয় আসর। সেবার আর্জেন্টিনা নিজেদের ঘরে ট্রফি নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আবারও আড়ালে চলে যায় টুর্নামেন্টটি। প্রথম থেকে দ্বিতীয় আসরের মাঝেই নামের পরিবর্তন আসে। শেষমেশ ২৯ বছর পর ‘ফিনালিসিমা’ নামে আবারও দুই মহাদেশের লড়াইয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
পাল্লাটা সমান সমান। এই টুর্নামেন্টের শিরোপা একবার করে গিয়েছে ইউরোপে ও ল্যাতিন আমেরিকায়। এখন লিওনেল মেসির সামনে সূবর্ণ সুযোগ ল্যাতিন আমেরিকা সর্বপোরী নিজ দেশের হয়ে পাল্লাটা ভারি করবার। অন্যদিকে নিশ্চয়ই জর্জিনহো, জিয়ানলুজি দোন্নারুমা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলতে না পারাটা যে স্রেফ দুর্ভাগ্য সেটাই প্রমাণ করতে মুখিয়ে থাকবে তারা।
অন্যদিকে ফুটবল ভক্তদের রাতটা কাটবে আকাশ ভর্তি তারার মেলা দেখে। এ আকাশ অবশ্য সবুজ।